X
শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪
২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

বাড়ছে অলস টাকা, ঋণ নিচ্ছেন না উদ্যোক্তারা

গোলাম মওলা
১৪ মে ২০১৬, ২১:০১আপডেট : ১৫ মে ২০১৬, ২০:৪৯

টাকা দেশের ব্যাংকগুলোতে দিনে-দিনে বাড়ছে অলস টাকা। অথচ উদ্যোক্তারা ঋণ নিচ্ছেন না। সুদের হার কমানোর পরও আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না তাদের মধ্যে। উদ্যোক্তরা বলছেন, দেশে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ এখনও তৈরি হয়নি। তাই, ব্যাংক ঋণ নিয়ে ঝুঁকিতে পড়তে চান না তারা। এদিকে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী,  চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ব্যাংকে থাকা ৫ হাজার ৩৮২ কোটি টাকার বিপরীতে এক পয়সাও আয় করতে পারেনি ব্যাংকগুলো। এছাড়া উদ্যোক্তা না পেয়ে প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা নামমাত্র সুদে বিভিন্ন বন্ডে বিনিয়োগ করে রাখা হয়েছে। এই পরিমাণ অর্থের বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে বিপুল পরিমাণ সুদ গুনতে হচ্ছে।  
ব্যাংক খাতের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিনিয়োগ পরিস্থিতি ভালো না থাকার কারণে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা ঋণ নিতে ব্যাংকে আসছেন না। এ কারণে ব্যাংক লোকসান ঠেকাতে অল্প সুদে সরকারের বিভিন্ন বন্ডে ও বিলে বিনিয়োগ করেছে।
নিয়ম অনুযায়ী দেশের ব্যাংকগুলোকে নগদ ও বিধিবদ্ধ (সিআরআর ও এসএলআর) বিভিন্ন উপকরণে অর্থ সংরক্ষণ করতে করতে হয়।  সব মিলিয়ে এ জন্য রাখতে হচ্ছে ১ লাখ ৪০ হাজার ৪২১ কোটি টাকা। এর বাইরে দৈনন্দিন লেনদেনের জন্য রাখতে হয় আরও কিছু নগদ অর্থ। অথচ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি শেষে নগদ তারল্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৫৭ হাজার ৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রয়োজনের তুলনায় ব্যাংকে নগদ অর্থ বেশি আছে প্রায় ১ লাখ ১৬ হাজার ৫৮৭ কোটি টাকা।

অর্থনীতিবিদদের মতে, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দেশে এক ধরনের স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। যে কারণে ব্যাংকে বিপুল পরিমাণ অলস অর্থ জমছে। বিনিয়োগকারীদের অনাগ্রহ, অবকাঠামোর সমস্যা ও গ্যাসের সমস্যা এর জন্য দায়ী।

এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন কিছুটা শান্ত মনে হলেও ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা এখনও  কাটেনি।  এ কারণে বিনিয়োগ বাড়ছে না। আর বিনিয়োগ না বাড়ার কারণে ব্যাংক থেকে উদ্যোক্তারাও ঋণ নিচ্ছেন না। এর ফলে অলস টাকা জমছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ করতে না পারায় ব্যাংকগুলোর কাছে উদ্বৃত্ত তারল্য জমা হচ্ছে। এসব অর্থের বিপরীতে তাদের নিয়মিত সুদ গুনতে হচ্ছে। তিনি বলেন, বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ না থাকায় উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসছেন না। এর ফলে ব্যাংকগুলো বাধ্য হয়ে সরকারি বিভিন্ন বন্ডে বিনিয়োগ করছে। তিনি বলেন, দেশের ব্যবসায়ীরা যেন নির্বিঘ্নে বিনিয়োগ করতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করা গেলে একদিকে বিনিয়োগ বাড়বে, অন্যদিকে ব্যাংকের অলস টাকাও কমতে থাকবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে,  বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা ব্যাংকমুখী না হওয়ায় কম সুদে ১ লাখ ৮০ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা সরকারের বিভিন্ন বন্ডে বিনিয়োগ করে রেখেছে ব্যাংকগুলো।

আরও পড়তে পারেন: বাংলাদেশে বিনিয়োগ পরিবেশ ভালো বলা যায় না: ইইউ রাষ্ট্রদূত

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ব্যাংক যদি বন্ডে ১ লাখ ৮০ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা বিনিয়োগ না করে এই পরিমাণ অর্থ বেসরকারি উদ্যোক্তাদের শিল্প-কারখানায় বিনিয়োগ করত, তাহলে ব্যাংকের দ্বিগুণ আয় হতো। অবশ্য এই পরিমাণ অর্থকে বাংলাদেশ ব্যাংক অলস টাকা বলতে রাজি নয়।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সরকারের বিভিন্ন বন্ডে বিনিয়োগ করা অর্থকে অলস অর্থ বলা যাবে না। কারণ, আয় কম হলেও এই বিনিয়োগ থেকে ব্যাংক নিয়মিত কিছু টাকা পাচ্ছে। এছাড়া এই অর্থ দিয়ে সরকার বিভিন্ন উৎপাদনমুখী কর্মকাণ্ড চালাতে পারছে, যার ফলে অর্থনীতি গতিশীল হচ্ছে।

এদিকে, উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, বিনিয়োগের জন্য কারখানা তৈরির জমি পাচ্ছেন না তারা। এছাড়া বিদ্যুৎ ও গ্যাসের অভাবে অনেক কারখানা চালু করা যাচ্ছে না।

এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বিনিয়োগের জন্য পর্যাপ্ত জমি পাওয়া যায় না। এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা গ্যাসের সংকট। এছাড়া বেশি দাম দিয়েও পাওয়া যায় না নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ।

যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক বিনিয়োগকারীদের উৎসাহ দিতে চলতি বছরের প্রথমার্ধে জানুয়ারি-জুনের মুদ্রানীতিতে রেপো (পুনঃক্রয়চুক্তি) ও রিভার্স রেপোর (বিপরীত পুনঃক্রয়চুক্তি) ) সুদহার কমিয়ে দিয়েছে। এরপরও বিনিয়োগ খুব একটা বাড়েনি। আর বিনিয়োগ না হওয়ায় আশানুরূপ কর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরি হচ্ছে না। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর শ্রমশক্তি জরিপ-২০১৫ অনুযায়ী, বছরে গড়ে মাত্র ৩ লাখ লোক চাকরি বা কাজ পেয়েছেন। এর ফলে বাড়ছে বেকারত্বের হার।

আরও পড়তে পারেন: রবিবার সারাদেশে চেইন সুপারমার্কেট বন্ধ

অবশ্য বিনিয়োগ বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, আগের চেয়ে বিনিয়োগ পরিস্থিতি কিছুটা গতি পেয়েছে। বিনিয়োগ বোর্ডের (বিওআই) সর্বশেষ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে মার্চ—এই তিন মাসে বিনিয়োগ আগের তিন মাসের তুলনায় (অক্টোবর-ডিসেম্বর) বেড়েছে ৫৫ দশমিক ২৩ শতাংশ। এ সময় স্থানীয় বিনিয়োগ ২৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ এবং বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে ১৩৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ। তথ্যমতে, জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত— এই তিনমাসে বিনিয়োগ বেড়েছে অক্টোবর-ডিসেম্বর তুলনায় ১ হাজার ১১৪ কোটি টাকা। জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত—এই তিনমাসে বিনিয়োগকৃত অর্থের পরিমাণ ৩৩ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা। অন্যদিকে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত—এই তিন মাসে বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ২১ হাজার ৬৯২ কোটি টাকা।

ব্যাংক সূত্র জানায়, এ সময় স্থানীয় বিনিয়োগের জন্য নিবন্ধিত হয়েছে ৪০৯টি শিল্প ইউনিট। এর বিপরীতে প্রস্তাবিত অর্থের পরিমাণ ৩১ হাজার ২০৫ কোটি টাকা। গত অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর এই সময়ে স্থানীয় বিনিয়োগের জন্য নিবন্ধিত হয় ৩৭৬টি শিল্প ইউনিট—যার প্রস্তাবিত অর্থের পরিমাণ ২০ হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা। এদিকে বিদেশি বিনিয়োগ একই সময়ে ১৩টি শতভাগে বিদেশি ও ২২টি যৌথ বিনিয়োগের জন্য শিল্প নিবন্ধিত হয়।

/এমএনএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝরনায় ঘুরতে গিয়ে নিখোঁজ স্কুলছাত্রের মরদেহ উদ্ধার
বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝরনায় ঘুরতে গিয়ে নিখোঁজ স্কুলছাত্রের মরদেহ উদ্ধার
এই দিনে ফিরে এসেছিলেন শেখ হাসিনা
এই দিনে ফিরে এসেছিলেন শেখ হাসিনা
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সামাজিক আন্দোলনের প্রভাব কতটুকু?
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সামাজিক আন্দোলনের প্রভাব কতটুকু?
বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত ম্যাচ, প্লে-অফে হায়দরাবাদ
বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত ম্যাচ, প্লে-অফে হায়দরাবাদ
সর্বাধিক পঠিত
সিলেটে বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
সিলেটে বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
ফুল দিয়ে বরণ, রিট দিয়ে শুরু কোন্দল!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিফুল দিয়ে বরণ, রিট দিয়ে শুরু কোন্দল!
এমপিও আবেদন সরাসরি অধিদফতরে পাঠানো যাবে না
এমপিও আবেদন সরাসরি অধিদফতরে পাঠানো যাবে না
এডিপি: সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে যে ১০ প্রকল্প
এডিপি: সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে যে ১০ প্রকল্প
৬১৭ কোটি টাকার প্রকল্প, সাড়ে তিন বছরে হলো ১৩ শতাংশ কাজ
৬১৭ কোটি টাকার প্রকল্প, সাড়ে তিন বছরে হলো ১৩ শতাংশ কাজ