X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১
বাংলা ট্রিবিউনকে গোলাম হাফিজ আহমেদ

ব্যাংক খাতের সবচেয়ে বড় সমস্যা খেলাপি ঋণ

গোলাম মওলা
১৭ মে ২০১৬, ০২:৫৬আপডেট : ১৭ মে ২০১৬, ০৭:৫৯



গোলাম হাফিজ আহমেদ ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কর্মাস ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী গোলাম হাফিজ আহমেদ মনে করেন, খেলাপি ঋণ ব্যাংক খাতের সবচেয়ে বড় সমস্যা। কারণ, ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির কারণে ভাল উদ্যোক্তারা কম সুদে ঋণ নিতে পারছেন না। যার প্রভাব পড়ছে সার্বিক অর্থনীতির ওপরে। শুধু তাই নয়, খেলাপি ঋণ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির বড় অন্তরায়ও। সোমবার এনসিসি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে বাংলা ট্রিবিউনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
আরও পড়তে পারেন: ‘ষড়যন্ত্র’ দেখছে তদন্ত কমিটি, আন্দোলনে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতারা
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার (১৭ মে) এনসিসি ব্যাংকের ২৩ তম বর্ষপূর্তি। এনসিএল নামে বিনিয়োগ কোম্পানি হিসেবে ১৯৮৫ সালের ২৫ নভেম্বর যাত্রা শুরু করলেও ১৯৯৩ সালের ১৭ মে এনসিসি ব্যাংক নামে পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে যাত্রা শুরু করে। এনসিসি ব্যাংকের বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্য হলেও ব্যাংক খাতের বর্তমান পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে তিনি খোলামেলা কথা বলেন বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে।
বাংলা ট্রিবিউন: এনসিসি ব্যাংকের বর্তমান পরিস্থিতি বিষয়ে যদি বলেন।
গোলাম হাফিজ আহমেদ: গত ২৩ বছরে এনসিসি ব্যাংক যথেষ্ট পরিপক্ক হয়েছে। এখন এই ব্যাংকের গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ১ মিলিয়ন। সব কিছুর উর্ধ্বে স্থান দেওয়া হয়েছে গ্রাহকের সন্তুষ্টিকে। গেল একবছর নতুন কোনও শাখা না বাড়িয়ে গ্রাহক সেবার মান বৃদ্ধি করা হয়েছে।
বাংলা ট্রিবিউন: অন্যান্য ব্যাংকও গ্রাহক সেবাকেই গুরুত্ব দেয়।এনসিসি ব্যাংকের এ ক্ষেত্রে বিশেষত্ব কি?
গোলাম হাফিজ আহমেদ: এনসিসি ব্যাংক তার গ্রাহকদেরকে অংশীদার (পার্টনার) মনে করে। গ্রাহক বিপদে পড়লে ব্যাংক গিয়ে পাশে দাঁড়ায়। গ্রাহক যাতে খেলাপি না হয় সেজন্য ব্যাংক প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করে। একইভাবে গ্রাহকও এনসিসি ব্যাংককে অংশীদার মনে করে সহযোগিতা করে। গ্রাহকদের সার্পোটের কারণেই এই ব্যাংক আজ এতদূর আসতে পেরেছে। আরও সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা গ্রাহকদেরই বেছে নিয়েছি।
বাংলা ট্রিবিউন: অংশীদারের বিষয়টি গ্রাহকরা কিভাবে নিচ্ছেন?
গোলাম হাফিজ আহমেদ: আমার গ্রাহক সমস্যায় পড়লে আমাকে আগে জানতে হবে। ব্যবসায় সমস্যা হতেই পারে, আমি ছুটে যাবো। তার সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করবো। প্রয়োজনে রিসিডিউলও করা লাগলে করতে হবে। আমি চাইব, তুমি রেগুলার থাক,আমিও রেগুলার থেকে ভাল থাকি। কারণ, গ্রাহক খারাপ থাকবে, আর ব্যাংক ভাল থাকবে তা হতে পারে না। এ কারণে আমরা গ্রাহককে পার্টনার করে নিচ্ছি। আমি গ্রাহককে হারাতে চাই না, টাকা আদায়ের জন্য আমি কোর্টে যেতে চাই না, কখনও নরম-কখনও গরম হয়ে টাকা আদায় করতে চাই। ব্যবসায় লোকসান হতে পারে। কিন্তু সব টাকা লোকসান হয় না। আমি মনে করি, গ্রাহক খারাপ হলে তার সঙ্গে ব্যাংকের যোগাযোগ আরও বাড়াতে হবে। প্রয়োজনে আবারও সার্পোট দিয়ে তাকে ধরে রাখতে হবে। গ্রাহকের প্রতি মানবিক হতে হবে।
বাংলা ট্রিবিউন: গ্রাহকদের কি কি সুযোগ দিচ্ছে এনসিসি ব্যাংক?
গোলাম হাফিজ আহমেদ: আমরা ভাল গ্রাহকের চাওয়াকে গুরুত্ব দেবো। যে কোন ধরনের সাপোর্ট চাইলে আমরা তা দিতে প্রস্তুত। তারা যদি বলে সুদের হার কমাতে হবে। আমরা কমাবো। তারা যদি কমিশন কমাতে বলে। আমরা তাই করব।
আরও পড়তে পারেন: তোমাদের স্বপ্ন ভেঙে চলে যাচ্ছি, আমার নিজেরই কোনও স্বপ্ন বেঁচে নেই
বাংলা ট্রিবিউন: ব্যাংক খাতের জন্য এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কি?

গোলাম হাফিজ আহমেদ: এখন বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে কষ্ট অব ফান্ড কমানো। কারণ, বাস্তসম্মত কারণেই এখন তুলনামূলকভাবে কম সুদে ঋণ বিতরণ করতে হচ্ছে। অথচ ইতিপূর্বে বেশি সুদে আমানত সংগ্রহ করা হয়েছে। 

বাংলা ট্রিবিউন: ব্যাংক খাতের সবচেয়ে বড় সমস্যা এখন কী?

গোলাম হাফিজ আহমেদ: খেলাপি ঋণ ব্যাংক খাতের সবচেয়ে বড় সমস্যা। ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির কারণে ভাল উদ্যোক্তারা কম সুদে ঋণ নিতে পারছেন না। যার প্রভাব পড়ছে সার্বিক অর্থনীতির ওপরেও।

বাংলা ট্রিবিউন:খেলাপি ঋণ থাকার পরও দেখা যায় প্রতি বছরই ব্যাংকগুলো মুনাফা করে। তাহলে এটিকে বড় সমস্যা বলছেন কেন?

গোলাম হাফিজ আহমেদ: কিছু অসৎ ব্যবসায়ির কারণে ভাল উদ্যোক্তারা কম সুদে ঋণ নিতে পারছেন না। যার কারণে তারা ভালভাবে ব্যবসা করতে পারছেন না। যদি খেলাপি হয়ে যাওয়া টাকা ব্যাংক ফেরত আনতে পারত তাহলে ঋণের সুদ হার সিঙ্গেল ডিজিটে চলে আসতো। এর ফলে ব্যাংকের টাকায় ব্যবসা ভাল হতো, একইভাবে ব্যাংকও আরও ভাল ব্যবসা করতে পারতো।

বাংলা ট্রিবিউন: খেলাপি ঋণ কমাতে হলে এই মুহূর্তে ব্যাংকগুলোর কি করা উচিত?

গোলাম হাফিজ আহমেদ: খেলাপি ঋণ আদায়ে দক্ষ জনবল নিয়োগ দিলে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হতে পারে। সঠিক যায়গায় ঋণ দেওয়ার জন্য এক ধরনের দক্ষতা দরকার, আবার সঠিকভাবে ঋণের টাকা আদায়ের জন্য আরেক ধরণের দক্ষতা দরকার। ব্যাংকগুলোর উচিত,ঋণের টাকা আদায় খাতে আরও বিনিয়োগ বাড়ানো। ব্যাংক যদি টাকা আদায়ের পেছনে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে তাহলে অনেক টাকা ফেরত পাওয়া সম্ভব। পাশাপাশি খেলাপির পরিমাণ কমানো সম্ভব। এজন্যই এই খাতে দক্ষ লোক নিয়োগ দিতে হবে। মন্দ ঋণ কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়, খেলাপি ঋণ কিভাবে আদায় করতে হয়, কিভাবে আদায় বাড়ানো যায়, এই বিষয়ে দক্ষ লোক দরকার। কিন্তু অধিকাংশ ব্যাংকের এই খাতে দক্ষ লোকের অভাব রয়েছে। তবে আজ হোক-কাল হোক খেলাপি ঋণের সংস্কৃতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। আর ব্যাংক একা একা ইচ্ছে করলে খেলাপি সংস্কৃতি থেকে বের হতে পারবে না। এ জন্য সরকার ও অন্যান্য সব পক্ষকে এই বিষয়ে একমত হতে হবে।

 বাংলা ট্রিবিউন: সাইবার নিরাপত্তার বিষয়ে এনসিসি ব্যাংক কি ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে?

গোলাম হাফিজ আহমেদ: আমরা সাইবার নিরাপত্তার বিষয়ে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। আইটি নিরাপত্তা বাড়ানোর অংশ হিসাবে এ জন্য আলাদা বিভাগ গঠন করেছি। এনসিসি ব্যাংকে একজন আইটি বিষেশজ্ঞ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ জন্য আমরা আমাদের শীর্ষ পর্যায়ে (লিডারশীপ লেভেলে) পরিবর্তন এনেছি। এতদিন আইটি সিকিউরিটির জন্য আমাদের তেমন বাজেট ছিল না, এখন আমাদের টনক নড়েছে। এখন আমরা এই খাতে বাজেট বৃদ্ধি করতে যাচ্ছি।

বাংলা ট্রিবিউন: ব্যাংকিং কার্যক্রম চালাতে গিয়ে বিভিন্ন মহলে চাপ কিভাবে সামাল দেন?

গোলাম হাফিজ আহমেদ: আমাদের স্ট্রাটেজিক প্লান অনুযায়ি কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের ব্যাংকের পর্ষদে যারা রয়েছেন তারাও চান,আমরা যেন শতভাগ পেশাদারিভাবে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারি। এ কারণে আমরা এসএমই’’র যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল তা অর্জন করেছি, কৃষির ক্ষেত্রেও আমরা শতভাগ অর্জন করেছি। পর্ষদের চাওয়া একটাই, সেটা হলো এই ব্যাংক যেন ধীরে ধীরে শীর্ষ ব্যাংকগুলোর অন্যতম হয়ে উঠে।

বাংলা ট্রিবিউন: এনসিসি ব্যাংক কোন ধরনের গ্রাহককে বেশি পছন্দ করে?

গোলাম হাফিজ আহমেদ: বড় বড় ব্যবসায়ী গ্রুপকে আমরা সঙ্গী করছি,একইভাবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদেরকেও আমরা পার্টনার করছি।

বাংলা ট্রিবিউন: বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এনসিসি ব্যাংক সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয় কোন খাতকে? 

আরও পড়তে পারেন: তনুর কাপড়ে ধর্ষণের আলামত, অভিযুক্ত তিন পুরুষ
গোলাম হাফিজ আহমেদ: আগামী দিনে করপোরেট ব্যবসার পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি(এসএমই) শিল্পে বিনিয়োগের জন্য আমাদের নজর থাকবে সবচেয়ে বেশি। এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে সার্বিক অর্থনীতির ওপরে। এছাড়া কমপ্লায়েন্সের ক্ষেত্রে আমরা সর্বদা সচেষ্ট আছি। ব্যবসাকে দীর্ঘস্থায়ী করতে হলে কমপ্লেয়েন্স থাকা জরুরি। আমরা চাচ্ছি, যে সব ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা করপোরেট ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত তাদেরকে ধরতে। যারা বড় বড় করপোরেট ব্যবসার সঙ্গে জড়িত যেমন, ডিলার, বা বিভিন্ন পণ্য সরবরাহকারী তাদের পেছনে আমরা বিনিয়োগ বাড়াতে চাই। এর ফলে আমরা ক্ষুদ্র ও বড় এই দুই শ্রেণির গ্রাহকই পাব।

 /এমএসএম /

সম্পর্কিত
আলাপচারিতায় ব্যারিস্টার আমীর উল ইসলাম ও মানস ঘোষমুজিবনগরে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র ও সংবাদ সংগ্রহ
করারোপ নীতি শিক্ষা সম্প্রসারণকে বাধাগ্রস্ত করবে: সলিমুল্লাহ খান
বাংলা ট্রিবিউনকে ওয়াসিকা আয়শা খান‘নারীরা যে শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ দিয়ে চলেছেন, এর নেপথ্যে শেখ হাসিনা’
সর্বশেষ খবর
ছক্কা মেরেও আউট হলেন মুশফিক !
ছক্কা মেরেও আউট হলেন মুশফিক !
ট্রেনের ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে কুড়িগ্রামে মানববন্ধন
ট্রেনের ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে কুড়িগ্রামে মানববন্ধন
অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়া অন্তর্ভুক্ত করতে হবে
রামরুর কর্মশালায় বক্তারাঅভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়া অন্তর্ভুক্ত করতে হবে
শুধু চাকরির পেছনে ছুটবে না, উদ্যোক্তা হবে:  স্বাস্থ্যমন্ত্রী
শুধু চাকরির পেছনে ছুটবে না, উদ্যোক্তা হবে:  স্বাস্থ্যমন্ত্রী
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের