X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

যে কারণে অলস পড়ে আছে ৬শ’ কোটি টাকা

শফিকুল ইসলাম
০৫ আগস্ট ২০১৬, ০৮:০০আপডেট : ০৫ আগস্ট ২০১৬, ১৬:০৭

টাকা

অলস পড়ে আছে স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ তহবিল। এর পরিমাণ প্রায় ৬শ’ কোটি টাকা। গত ২০১৪-১৫ ও ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তামাক খাত থেকে স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বাবদ প্রায় ৬০০ কোটি টাকা আদায় হলেও এ সংক্রান্ত ব্যবহার নীতিমালা চূড়ান্ত না হওয়ায় অলস পড়ে আছে এই অর্থ। অথচ টাকার অভাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়াধীন জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল তামাকবিরোধী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে পারছে না।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে তামাকজনিত মৃত্যু ও ক্ষয়ক্ষতির চিত্র ভয়াবহ। গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোবাকো সার্ভে (জিএটিএস)- ২০০৯ অনুসারে বাংলাদেশে ৪ কোটি ১৩ লাখ (৪৩ শতাংশ) প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক সেবন করে। আর পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয় প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর প্রায় ৪ কোটি ৩০ লাখ মানুষ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সম্প্রতি প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিবছর তামাকজনিত রোগে মারা যায় ৫৭ হাজার মানুষ, পঙ্গুত্ববরণ করে ৩ লাখ ৮২ হাজার জন। সংস্থাটির গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে মোট মৃত্যুর শতকরা ৬০ ভাগ হয় অসংক্রামক রোগের কারণে ।

তামাকের এই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় সরকার ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটে প্রথমবারের মতো সব ধরনের তামাকজাত দ্রব্যের ওপর স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ ২০১৪ সালের অর্থ আইন দ্বারা আরোপ করা হয়। তামাকজাত দ্রব্য হতে সারচার্জ আদায় সংক্রান্ত বিধিমালা ১ জুলাই ২০১৪ হতে কার্যকর করা হয়। এ আইন অনুসারে আমদানিকৃত এবং দেশে উৎপাদিত সব ধরনের তামাকজাত দ্রব্য হতে ১ শতাংশ হারে (অর্থনৈতিক কোড ২২১২ এর মাধ্যমে) স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ সংগৃহীত হচ্ছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সারচার্জ সংগ্রহের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা হিসেবে তা আদায়ও করছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় তথা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এই সারচার্জ আরোপের কারণ হিসেবে বলছে, জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তামাক নিয়ন্ত্রণ ও অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ জোরদার করা এবং তামাকজাত দ্রব্য হতে অর্জিত স্বাস্থ্যকরের দীর্ঘস্থায়ী ও পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে তামাক নিয়ন্ত্রণ ও অসংক্রামক রোগের নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্য অর্জনে অর্থ যোগান দেওয়া, তামাক নিয়ন্ত্রণ ও অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে কার্যরত সংস্থাগুলোর জন্য আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দেওয়া, তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ এবং অর্থনীতির টেকসই উন্নয়ন ও সুরক্ষায় সহায়ক ভূমিকা পালন করা ও জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন কাজে অর্থ যোগান দিতেই এই সারচার্জ আরোপ করা হয়েছে। 

তামাক কোম্পানিগুলো কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে তামাক পণ্যের প্রচার-প্রচারণা চালায়। কিন্তু এর বিপরীতে তামাকবিরোধী কার্যক্রমে অর্থায়ন খুবই সীমিত এবং বিচ্ছিন্ন। তামাকের ভয়াবহতা রুখতে দরকার পর্যাপ্ত ও নিরবিচ্ছিন্ন অর্থায়ন। এক্ষেত্রে সারচার্জ আরোপের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মকাণ্ডে ব্যয় করা বিশ্বব্যাপী একটি সুপরিচিত কৌশল।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় ১১টি দেশে এ ধরনের সারচার্জ প্রথা চালু আছে। এসব  দেশের মধ্যে থাইল্যান্ডে ২ শতাংশ, নেপালে প্রতি সিগারেটে ১ পয়সা, ভারতে প্রতি ১০০০ শলাকা বিড়িতে ৫ রুপি, ভিয়েতনামে ১-২ শতাংশ, কাতারে ২ শতাংশ, আইসল্যান্ডে ০ দশমিক ৯ শতাংশ, এস্তোনিয়ায় ৩ দশমিক ৫ শতাংশ, মঙ্গোলিয়ায় ২ শতাংশ এবং লাওসে প্যাকেট প্রতি ইউএসডি ০ দশমিক ০৩ শতাংশ হারে সারচার্জ আদায় করা হয়।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটে তামাকপণ্যের ওপর ১ শতাংশ হারে সারচার্জ আরোপ করা হয়। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত দক্ষিণ-এশীয় স্পিকার সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী সারচার্জের অর্থে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি গ্রহণেরও ঘোষণা দেন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সবশেষ সারচার্জ থেকে প্রাপ্ত অর্থ ব্যয়ের লক্ষ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে একটি খসড়া নীতি প্রণয়ন করা হয়। খসড়াটির ওপর মতামত চেয়ে সংশ্লিষ্ট ৯টি মন্ত্রণালয়ে চিঠিও পাঠানো হয়। তবে এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র ৩টি অর্থাৎ কৃষি মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মতামত পাওয়া গেছে। বাকি মন্ত্রণালয়গুলোর মতামতের অভাবে খসড়াটি এখনও চূড়ান্ত করা সম্ভব হয়নি। ফলে একদিকে অর্থ জমা হলেও তা ব্যয় করা সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে, সারচার্জের অর্থ সঠিকভাবে আদায়ও হচ্ছে না। ফলে সরকারের নেওয়া প্রশংসনীয় একটি উদ্যোগের সুফল পাচ্ছে না জনগণ।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ হতে সংগৃহীত প্রতিবছর আদায়কৃত অর্থের সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতের লক্ষ্যে ‘স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ ব্যবস্থাপনা বোর্ড’ নামের একটি বোর্ড গঠনের কথা বলা হয়েছে। যে বোর্ডে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী পদাধিকার বলে বোর্ডের সভাপতি হবেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবও পদাধিকার বলে এই বোর্ডের সহ-সভাপতি হবেন। এই বোর্ডের সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের প্রধান নির্বাহী বা সমন্বয়কারী।

এছাড়াও এই বোর্ডে ১০ জন সদস্য থাকবেন। তারা হলেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (জনস্বাস্থ্য ও বিশ্ব স্বাস্থ্য),  অতিরিক্ত সচিব (আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও অডিট), অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে একজন অতিরিক্ত সচিব বা যুগ্ম সচিব, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব বা যুগ্ম সচিব, কৃষি মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব বা যুগ্ম সচিব, এনবিআরের একজন সদস্য, স্বাস্থ্য অধিদফতরের লাইন ডিরেক্টর (অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ), সরকার মনোনীত তামাক নিয়ন্ত্রণে কার্যরত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের একজন প্রতিনিধি ও বাংলাদেশ তামাক বিরাধী জোটের একজন প্রতিনিধি।

এই অর্থ ব্যবহারের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের কাছে জানতে চাইলে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এই নীতিমালা এলেই আমি এই টাকা ব্যবহারের অনুমতি দিয়ে দেব।

/এসআই/টিএন/

আরও পড়ুন: নিউজ পোর্টালসহ ৩৫টি ওয়েবসাইট বন্ধ

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেন তিন বিচারপতি
আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেন তিন বিচারপতি
চুরি করা গরুসহ ট্রাক থামিয়ে পালিয়ে যায় চোরেরা, আগুন ধরিয়ে দিলো জনতা
চুরি করা গরুসহ ট্রাক থামিয়ে পালিয়ে যায় চোরেরা, আগুন ধরিয়ে দিলো জনতা
বাংলাদেশ সফরের জিম্বাবুয়ে দলে অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেলের ছেলে
বাংলাদেশ সফরের জিম্বাবুয়ে দলে অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেলের ছেলে
রাফাহ শহরে আবারও অভিযান চালাবে  ইসরায়েল?
রাফাহ শহরে আবারও অভিযান চালাবে ইসরায়েল?
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
হংকং ও সিঙ্গাপুরে নিষিদ্ধ হলো ভারতের কয়েকটি মসলা
হংকং ও সিঙ্গাপুরে নিষিদ্ধ হলো ভারতের কয়েকটি মসলা