ব্যাংকিং খাতে আরও বাড়লো খেলাপি ঋণের পরিমাণ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন শেষে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৬৩ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকা। যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ১০ দশমিক ৬ শতাংশ। তিন মাস আগে মার্চ শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ৫৯ হাজার ৪১১ কোটি টাকা। এই হিসাবে তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালের জুন প্রান্তিকে ব্যাংকগুলোর মোট খেলাপি ঋণ ছিল ৫২ হাজার ৫১৯ কোটি টাকা। এই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১০ হাজার ৮৪৬ কোটি টাকা।
খেলাপি ঋণ বাড়ার কারণ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বাড়লেও ঋণ বিতরণও বেড়েছে। তিনি মনে করেন, পুনঃতফসিল করা ঋণগুলোর একটা বড় অংশ আদায় না হওয়ার কারণে খেলাপির পরিমাণ বেড়েছে। খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক চেষ্টা করছে দাবি করে তিনি বলেন, ব্যাংকগুলোকে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া আছে। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে সুপারভিশন বাড়ানো হয়েছে। মনিটরিং ব্যবস্থাও জোরদার করা হয়েছে।
কয়েকটি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পুনঃতফসিল করা ঋণ নির্ধারিত সময়ে পরিশোধ করেননি ব্যবসায়ীরা। এ কারণে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে।
প্রসঙ্গত, ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণের যে হিসাব দিয়ে থাকে তাকে মূলত নিয়মিত খেলাপি ঋণ বলা হয়ে থাকে। এর বাইরে আরও প্রায় সমাণ পরিমাণ খেলাপি ঋণ রয়েছে। যা অবলোপন করেছে ব্যাংকগুলো। যদিও সাধারণত খেলাপি ঋণের হিসেবে অবলোপন করা ঋণকে হিসাবে ধরা হয় না। এতে করে সাধারণভাবে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কিছুটা কম দেখানো হয়।
অর্থনীতিবিদদের মতে, অবলোপন করা ঋণও প্রকৃত খেলাপি ঋণ। যেসব ঋণ আদায়ের সম্ভাবনা ক্ষীণ, সেসব ঋণকে আর্থিক হিসাবের সুবিধার্থে ব্যাংকের স্থিতিপত্র বা ব্যালেন্স শিট থেকে বাদ দেওয়া হয়।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষক ও অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, নিয়মিত খেলাপি ও অবলোপন করা দুই ধরনের ঋণই ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ। তিনি বলেন, সুদের হার বেশি হওয়ার কারণে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের বাড়ছে। এছাড়া আর্থিক ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণেও খেলাপি ঋণ বাড়ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ৩৯টি বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ে ৬ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বেশি। চলতি বছরের জুন শেষে রাষ্ট্রীয় মালিকানার সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক ও বিডিবিএল-এ খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাড়িয়েছে ৩০ হাজার ৭৬ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ২৫ দশমিক ৭৪ শতাংশই খেলাপি ঋণ। মার্চ শেষে রাষ্ট্রীয় মালিকানার সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক ও বিডিবিএল-এ খেলাপি ঋণ ছিল ২৭ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা।
অবশ্য শতাংশের বিচারে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ ঋণ খেলাপি হয়েছে সরকারি মালিকানাধীন বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোতে। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন (রাকাব) নামের এই ব্যাংক দুটিতে খেলাপি ঋণ দাড়িয়েছে ৫ হাজার ৮১৬ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ২৬ দশমিক ১৪ শতাংশ ঋণই খেলাপি। এছাড়াও বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোতে জুন শেষে খেলাপি ঋণ দাড়িয়েছে ২৫ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ। মার্চ শেষে এই ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ ছিল ২৫ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা।
বিদেশি ৯ ব্যাংকে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৫৬ কোটি টাকায়। যা ওই ব্যাংকগুলোর মোট ঋণের ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ খেলাপি ঋণ। মার্চ শেষে বিদেশি এই ৯ ব্যাংকে খেলাপি ঋণ ছিল ১ হাজার ৮২২ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা মোট ঋণের পরিমাণ ৬ লাখ ৩০ হাজার ১৯ কোটি ২৫ লাখ টাকা।
প্রসঙ্গত, গত ২ বছরে ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়েছে। পাশাপাশি ২০১৫ সালে এসে দীর্ঘ মেয়াদে বড় ঋণ পুনর্গঠনের সুযোগ নিয়ে ১১টি গ্রুপের প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ পুনর্গঠন করা হয়েছে।
/টিএন/