বাজারে ল্যাপটপ আনছে দেশীয় ইলেকট্রনিক্স ব্রান্ড ওয়ালটন। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনটেল করপোরেশন, মাইক্রোসফট এবং বাংলাদেশের ওয়ালটন যৌথভাবে এ ল্যাপটপ বাজারজাত করবে। চলতি মাসের শেষের দিকে ল্যাপটপ বাজারে ছাড়া হতে পারে বলে ওয়ালটন সূত্রে জানা গেছে।
ওয়ালটন সূত্র মতে, বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো কম্পিউটার হার্ডওয়্যার উৎপাদনে যাচ্ছে ওয়ালটন। তৈরি হবে বিশ্বের লেটেস্ট প্রযুক্তির ইলেকট্রনিক্স মাদারবোর্ড। ইউরোপ থেকে আনা হয়েছে মাদারবোর্ড কারখানার প্রযুক্তি। গাজীপুরের চন্দ্রায় ওয়ালটন কারখানা কমপ্লেক্সে বিশাল পরিসরে চলছে মেশিনারিজ ইনস্টলেশন। এর আগে জাপান থেকে এসেছে এসএমটি (সারফেস মাউন্টিং টেকনোলজি) এবং এআই (অটো ইনসারশন) টেকনোলজি। যা এখন উৎপাদনে আছে।
ওয়ালটন কারখানায় তৈরি হবে ল্যাপটপ ও ডেস্কটপ কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, উচ্চমানের এলইডি টিভি ছাড়াও প্রায় সব ধরনের কম্পিউটার সামগ্রী। প্রথম আইটি পণ্য হিসেবে সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ ক্রেতারা হাতে পাবেন ৬ষ্ঠ প্রজম্মের উচ্চগতির মাল্টিটাস্কিং বৈশিষ্ট্য সম্বলিত ল্যাপটপ।
ওয়ালটন ল্যাপটপে সার্বিক সহায়তা দিচ্ছে ইনটেল, যার মধ্যে রয়েছে ডিজাইন, ড্রইং, প্রশিক্ষণ, বিপণন, আর্থিক ইত্যাদি। ব্যবহৃত হবে ইনটেলের লোগো। অন্যদিকে মাইক্রোসফট দিচ্ছে প্রধানত সফটওয়্যার সহযোগিতা। থাকছে প্রশিক্ষণ এবং বিপণন কৌশলগত সহায়তাও। মাইক্রোসফটের জেনুইন অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজ ও অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার থাকায় কোনও ধরনের এন্টিভাইরাস ছাড়াই ব্যবহার করা যাবে ওয়ালটন ল্যাপটপ। বর্তমান বাজারমূল্যের প্রায় অর্ধেক দামে মাইক্রোসফটের জেনুইন অপারেটিং সিস্টেম ও সফটও্যয়ার বাজারজাত করবে ওয়ালটন।
জানা গেছে, ওয়ালটন ল্যাপটপে ৬ষ্ঠ প্রজম্মের কোরআই-৩, ৫ ও ৭ প্রসেসর সরবরাহ করছে ইনটেল। বাংলাদেশে লোকাল ব্র্যান্ড হিসেবে ওয়ালটনকেই এ ধরণের সহযোগিতা দিচ্ছে তারা।
ওয়ালটন গ্রুপের পরিচালক এস এম রেজাউল আলম বলেন, ‘ওয়ালটন ল্যাপটপ অন্যান্য ব্র্যান্ডের তুলনায় অনেকটাই সাশ্রয়ী মূল্যে পাওয়া যাবে। ইতোমধ্যে, ওয়ালটন কারখানায় মাদারবোর্ডের মতো উচ্চপ্রযুক্তির হার্ডওয়্যার তৈরির প্রক্রিয়া চলছে। পর্যায়ক্রমে প্রযুক্তিগত সক্ষমতা উন্নয়নের মাধ্যমে দেশেই তৈরি হবে সম্পূর্ণ ল্যাপটপ। তখন অন্যান্য ব্র্যান্ডের তুলনায় ওয়ালটন ল্যাপটপের মূল্য নেমে আসবে প্রায় অর্ধেকে। বিশেষ করে হার্ডওয়্যার উৎপাদন এবং দেশ-বিদেশের বাজারে তা বিপণনে ওয়ালটন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চায়। তাদের প্রত্যাশা, ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ খ্যাত প্রযুক্তি পণ্য বাজারজাতকরেণর মাধ্যমে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বল হবে।’
বাংলাদেশে ইনটেল করপোরেশনের কান্ট্রি ম্যানেজার জিয়া মঞ্জুর বলেন,‘বাংলাদেশে প্রযুক্তি পণ্য উৎপাদন শিল্পের অগ্রগতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখায় ওয়ালটনকে ইনটেলের পক্ষ থেকে অভিনন্দন। বাংলাদেশের মানুষের কাছে সাশ্রয়ী মূল্যে প্রযুক্তি পণ্য পৌঁছে দিতে ওয়ালটনের উদ্যোগ সফলভাবে বাস্তবায়নে ইনটেল সবসময় ওয়ালটনের পাশে থাকবে।’
মাইক্রোসফটের দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার ওইএম পরিচালক পুবুদো বাসনায়েকে বলেন, ‘সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা পার্টনারদের সহযোগিতায় স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত বিভিন্ন ডিভাইস বিপণনের মাধ্যমে মাইক্রোসফটের বাজার সম্প্রসারিত হচ্ছে। ওয়ালটনের সঙ্গে স্থানীয়ভাবে আইটি ডিভাইস তৈরিতে থাকতে পেরে মাইক্রোসফট সন্তুষ্ট। আশা করছি আমাদের এই যৌথ উদ্যোগ বাংলাদেশের আইটি খাতে ইতিবাচক অবদান রাখবে।’
‘সময় এখন বাংলাদেশের’ এই শ্লোগান নিয়ে বিপণন কৌশল সাজিয়েছে ওয়ালটন। প্রাথমিকভাবে ৬ষ্ঠ প্রজম্মের প্রসেসরসমৃদ্ধ ওয়্যাক্স জাম্বু, কেরোন্ডা, টেমারিন্ড ও প্যাশন-এই চার সিরিজের মোট ২০টি মডেলের ল্যাপটপ বাজারে ছাড়ছে তারা। দাম থাকছে ২৯,৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ৯৫,৫০০ টাকা পর্যন্ত। ক্রেতাদের জন্য থাকবে সহজ শর্তে ১২ মাসের কিস্তিতে ল্যাপটপ কেনার সুবিধা। শর্তসাপেক্ষে থাকছে একবছরের ফ্রি বিক্রয়োত্তর সেবা।
/এসএনএইচ/