X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ভাগাভাগি করে ঋণ নিচ্ছেন ব্যাংকের পরিচালকরা: বিআইবিএম

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
০৩ নভেম্বর ২০১৬, ১৯:৪৭আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০১৬, ১৯:৪৯

 

 

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট দেশের ব্যাংকিং খাতে সংঘটিত ৯০ শতাংশ অপরাধে জড়িত ব্যাংকের নিজস্ব লোকজন। বিশেষ করে পরিচালকদের হাত রয়েছে সবচেয়ে বেশি। বর্তমানে ব্যাংকের পরিচালকরা একে অপরের সঙ্গে ভাগাভাগি করেও ঋণ নিচ্ছেন। বৃহস্পতিবার বিআইবিএমে ‘বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে আর্থিক অপরাধ’ শীর্ষক এক কর্মশালায় এই তথ্য তুলে ধরা হয়। কর্মশালাটি আয়োজন করে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম)।

বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরীর সঞ্চালনায় কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান। কর্মশালায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ, সোনালী ব্যাংকের সাবেক এমডি এসএ চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ইয়াসিন আলী, পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হেলাল আহমেদ চৌধুরী ও সিটি ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) ফারুক মইনুদ্দিন প্রমুখ।

কর্মশালায় বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে আর্থিক অপরাধ শীর্ষক একটি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করা হয়। গবেষণাটি তৈরি করেছেন বিআইবিএমের অধ্যাপকও পরিচালক ড. শাহ মো. আহসান হাবিব। তাকে সহযোগিতা করেছেন বিআইবিএম সদস্য এসকে নাজিবুল ইসলাম, সহযোগী অধ্যাপক নেহাল আহমেদ, সহকারী অধ্যাপক অতুল চন্দ্র পণ্ডিত, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) জুলকার নাইন ও বিএফআইইউর যুগ্ম পরিচালক কামাল হোসেন।

সোনালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এস এ চৌধুরী বলেন, ‘পরিচালকরা বর্তমানে ভাগাভাগি করে ঋণ নিয়ে যাচ্ছেন। তারা একে অন্যকে বলেন, তুমি আমার ব্যাংক থেকে নাও, আমি তোমার ব্যাংক থেকে নেব।’ তিনি বলেন, ‘ব্যাংকগুলো দীর্ঘদিনের খেলাপি হওয়া অর্থ ফেরত পেতে মামলা করে। কোর্ট থেকে সে মামলার স্থগিতাদেশ নিয়ে আবার ঋণ নিচ্ছে খেলাপিরা। এ ধরনের ঋণ নেওয়া বাংলাদেশ ব্যাংককে সার্কুলার করে বন্ধ করতে হবে। আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট কোনও ব্যাংকে নেই। এটা গঠন করতে হবে।বর্তমানে ব্যাংক খাতে ৪১ হাজার কোটি টাকার ঋণ অবলোপন করা হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৬ শতাংশ আদায় হয়েছে। বাকি টাকার হদিস নেই। এ টাকা আদায়ের কোনও সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না।’

খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ‘ব্যাংকের এমডিরা আগে স্বাধীন ছিলেন। বর্তমানে তা দেখা যাচ্ছে না। গত ৩০ অক্টোবর ব্যাংকের পরিচালক পদে আজীবন থাকার দাবি নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে বৈঠক করেন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর চেয়ারম্যানদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) নেতারা। ওই বৈঠকে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। এভাবে পরিচালকদের অযৌক্তিক দাবির সঙ্গে আগে কখনও এমডিরা একাত্মতা প্রকাশ করেনি।’ তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘এতে ব্যাংকের এমডিরা পরিচালকদের লেজুড়ভিত্তি করা নতুন আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।’ বিশ্বের কয়েকটি বড় ব্যাংকও এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে শেষ পর্যন্ত দেউলিয়া হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। 

বিদ্যমান ব্যাংকিং আইন অনুযায়ী, ব্যাংকের পরিচালকরা টানা দুই মেয়াদ (৬ বছর) পরিচালক থাকতে পারেন। মাঝখানে বিরতি দিয়ে পরে আবার তারা পরিচালক পদে আসতে পারেন। কিন্তু বিএবি ও এবিবির দাবি, উদ্যোক্তারা আজীবনই যেন ব্যাংকের পরিচালক পদে থাকেন।

খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ আরও বলেন, ‘দীর্ঘদিন এক পদে থাকলে সেখানে অপরাধের প্রবণতা বাড়ে। মনে রাখতে হবে, ব্যাংকের ৯০ শতাংশ টাকা আমানতকারীদের। তাদের আমানতের নিরাপত্তার বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। ব্যাংক খাতে অপরাধ যেহেতু বেড়েছে তাই প্রত্যেক ব্যাংকে একটি শক্তিশালী গোয়েন্দা বাহিনী গঠন করতে হবে। তাদের কাজ হবে, অপরাধ সংঘটিত হওয়ার আগে পূর্বাভাস দেওয়া। তাদের পরিচয় সবাই জানার দরকার নেই। তারা বর্ণচোরা হয়ে কাজ করবে।’  

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বলেন, ‘অর্থনৈতিক ও আর্থিক অপরাধ এখন বৈশ্বিক সমস্যা। এ সমস্যা মোকাবিলা করে আমাদের এগুতে হচ্ছে। বিশেষ করে মানি লন্ডারিংয়ের প্রবণতা বেড়েছে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ইয়াসিন আলী বলেন, ‘ব্যাংকে কিছু ব্যক্তি সব সময় অনিয়ম-দুর্নীতি করে। এতে সে নিজে ও অন্যকে বিপদে ফেলে। উর্ধ্বতন কর্মকর্তা সৎ না হলে অপরাধ দমন সম্ভব নয়।’ তিনি বলেন, ‘ব্যাংকের ৯০ শতাংশ অপরাধে নিজেদের লোক জড়িত। ইচ্ছাকৃত খেলাপিরা যদি আর্থিক অপরাধী না হয় তাহলে কোনটিকে আর্থিক অপরাধ বলব? আসলে প্রত্যেকে নিজের অবস্থান নিয়ে চিন্তিত। চাকরি চলে যাওয়ার ভয়। সে কারণে অনেক সময় জেনেও জানে না, বুঝেও বুঝে না। ব্যাংক খাতে সৎ লোক দরকার। কিন্তু চাকরি দেওয়ার সময় সৎ-অসৎ খোঁজার কি কোনও ব্যবস্থা আছে?’

সিটি ব্যাংকের এএমডি ফারুক মইনুদ্দিন বলেন, ‘ব্যাংক খাতে ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের চিহ্নিত করা হোক। তাদের অনেকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিদেশ সফরে যেতে দেখা যায়।’ এছাড়া ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ও অ্যাকাউন্ট খোলায় বিশেষ নজর দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। কারণ অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খোলা হচ্ছে। এগুলো বন্ধ করতে হবে। উপস্থিত কিছু ব্যাংকার বেশ কিছু সমস্যার কথা তুলে ধরেন। ফিরোজ আলম নামের একজন ব্যাংকার বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অপরাধীদের তালিকা চাই। এছাড়া অযৌক্তিক মুনাফার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। আরও কয়েকজন বলেন, চেক প্রতারণায় জগাখিচুড়ি অবস্থা চলছে। কেওয়াইসির শর্ত পরিপালন করা হচ্ছে না। অপরাধীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না।

/জিএম/এমএনএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা