X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট বাতিল: ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে নেই বাংলাদেশ ব্যাংক

গোলাম মওলা
১৩ নভেম্বর ২০১৬, ২১:৪৯আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০১৬, ২১:৫৪

 

 

বাংলাদেশ ব্যাংক ভারতে ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট বাতিল হওয়ায় যেসব বাংলাদেশি ক্ষতির শিকার হয়েছেন, তাদের পাশে দাঁড়াতে পারছে না বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক সাফ জানিয়ে দিয়েছে, ভারতের সিদ্ধান্তে যারা ক্ষতির মুখে পড়েছেন, তাদের জন্য আপাতত কিছুই করার নেই।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক  শুভঙ্কর সাহা রবিবার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ভারতীয় ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট যাদের কাছে আছে, তাদের জন্য আপাতত কিছুই করার নেই বাংলাদেশ ব্যাংকের।’

ভারতে কালো টাকার আগ্রাসন ঠেকাতে গত মঙ্গলবার থেকে  সেদেশের ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট বাতিল করা হয়। ভারত সরকারের এই সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছেন বাংলাদেশের অনেক ব্যবসায়ী, বিশেষ করে ভোগ্যপণ্য ব্যবসায়ীরা।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বাংলাদেশে বৈধভাবে ভারতীয় মুদ্রার লেনদেন হয় না। এ কারণে যাদের কাছে এসব নোট আছে, তাদের লোকসান গুনতে হবে।’

জানা গেছে, দেশে  বিপুল পরিমাণ ভারতীয় ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট মজুদ রয়েছে। এসব নোটের বড় অংশই অবৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে আসা। ভারত ভ্রমণকারী, ব্যবসায়ী কিংবা হুন্ডি ব্যবসায়ীদের কাছে মজুদ থাকা এসব নোট এখন তাদের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি নিবন্ধিত মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলোও অবৈধ পন্থায় মজুদ করা ভারতীয় রুপি নিয়ে পড়েছে আর্থিক ঝুঁকিতে। একইভাবে ১০০০ রুপি ও ৫০০ রুপির নোট বহনের কারণে স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যর্থ হচ্ছেন ভারতে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা।

জানা গেছে, প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে  প্রায় ১৩ লাখের মতো মানুষ ব্যবসা, চিকিৎসা এবং পর্যটনের জন্য ভারতে যান। তাদের মধ্যে অনেকে আছেন, যারা প্রায়ই ভারতে আসা-যাওয়া করেন। অনেকের কাছেই ৫০০ বা ১০০০ রুপির নোট জমা থাকে।

বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন দৈনিক ইত্তেফাকের সাংবাদিক রেজাউল হক কৌশিক। তিনি রবিবার সন্ধ্যায় বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘১০০০ রুপি ও ৫০০ রুপির নোট ভারতে কোনও দোকানদার নিচ্ছেন না।  দেশটির  গাড়ি  বা ট্যাক্সিওয়ালারাও এই নোট নিচ্ছেন না। এমনকি ভারতের মানি এক্সচেঞ্জ এই মুদ্রা নিচ্ছে না।’ তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন প্রয়োজনে বাংলাদেশ থেকে যারা ভারতে এসেছেন, তারা এখন চরম বিপাকে পড়েছেন। ভারতে এখন খাওয়া দাওয়া করতেও প্রবলেমে পড়ছেন অনেকে। কৌশিক আরও জানান, কিংশুকের এক ডিরেক্টর তাকে জানিয়েছেন, সে একঘণ্টা ঘুরেও ১০০০ রুপির নোট ভাঙাতে পারেনি। তবে যাদের ক্রেডিট কার্ড আছে, তারা একটু স্বস্তিতে আছেন।

জানা গেছে, বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিক বা বৈধভাবে ভারতীয় রুপি লেনদেনের ব্যবস্থা না থাকায় এ নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংকও। যদিও সীমান্ত হাটসংলগ্ন ব্যাংক শাখাগুলোতে বেশ কিছু রুপি জমা রয়েছে।

এদিকে দেশের বাজারে যারা হুন্ডিতে ভারতীয় মুদ্রা লেনদেন করতেন, তারা পড়েছেন সবচেয়ে বেশি বিপদে। বিশেষ করে দেশে ভোগ্যপণ্যে ও মসলাপণ্য ব্যবসায়ীরা চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন। জানা গেছে, মসলাজাতীয় অধিকাংশ পণ্য ভারত থেকে আমদানি করেন খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা। পণ্য আমদানি সূত্রে ভারতে নিয়মিত যাতায়াত করতে হয় তাদের। ভারত ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট বাতিল করায় বাংলাদেশের অনেক ব্যবসায়ীর মজুদ রুপি আটকে গেছে। 

এছাড়া দেশীয় মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছেও বিপুল পরিমাণ ভারতীয় মুদ্রা আটকে গেছে। এর বাইরে ঢাকা, চট্টগ্রাম যশোর ও খুলনা অঞ্চলের একশ্রেণির ব্যবসায়ী আছেন, যাদের কাছে বিপুল পরিমাণ ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট রয়েছে। এসব ব্যবসায়ী কমিশনের বিনিময়ে মুদ্রা কেনাবেচা করতেন এবং অবৈধভাবে পণ্য আমদানি-রফতানির লেনদেন কমিশনের বিনিময়ে পরিশোধ করতেন। ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট বন্ধ হওয়ায় তারাও চরম বিপাকে পড়েছেন। বিপাকে পড়েছেন হিলি স্থলবন্দরের ক্ষুদ্র ও মাঝারি পর্যায়ের বিভিন্ন ব্যবসায়ীরাও। হিলি স্থলবন্দর দিয়ে গড়ে প্রতিদিন ১৫০-২০০ ট্রাক ভারত থেকে পণ্য নিয়ে বাংলাদেশে আসে। আর এসব ট্রাকচালক হিলি স্থলবন্দরে রাতযাপন করেন। এর সুবাদে তারা হিলি বাজারে চাল, ডাল, মাছ, মাংস থেকে বিভিন্ন ধরনের বাজার করে থাকেন, যা ভারতীয় রুপির মাধ্যমে লেনদেন করেন।

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলা সাতক্ষীরা অঞ্চলের একজন ব্যবসায়ী জানান, প্রায়ই তারা অবৈধ পথে ভারত থেকে পণ্য আনেন। এখন তার কাছে ২ থেকে ৩ লাখ রুপি জমা আছে। এগুলোর মধ্যে এক লাখেরও বেশি ৫০০ এবং ১০০০ রুপির নোট। এই নোট নিয়ে বর্তমানে বিপাকে পড়েছেন তিনি। শুধু বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা নয়, যেসব ভারতীয় বাংলাদেশে বসবাস করছে তারাও এখন পড়েছেন বিপাকে।

রবিবার মতিঝিলের একাধিক মানি চেঞ্জার এবং খোলাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট নিয়ে অনেকেই আসছেন। তবে বেশির ভাগই ফেরত দিচ্ছেন। 

এ প্রসঙ্গে মতিঝিলের মানি চেঞ্জারের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে  বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার কাছে ৫০০ ও ১০০০ নোটের ৫ লাখ রুপি ছিল। গত মঙ্গলবারের ঘোষণা পর  সীমান্ত এলাকার এক মুদ্রা ব্যবসায়ীর কাছে অল্প দামে বিক্রি করে দিয়েছি। 

/এমএনএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
পাগলা মসজিদের দানবাক্সে এবার মিললো ২৭ বস্তা টাকা
পাগলা মসজিদের দানবাক্সে এবার মিললো ২৭ বস্তা টাকা
বিকল্প অর্থনীতি ও গ্রাম্য কায়কারবার
উপন্যাসবিকল্প অর্থনীতি ও গ্রাম্য কায়কারবার
ইরান-সমর্থিত ইরাকি সেনা ঘাঁটিতে বিস্ফোরণ, নিহত ১
ইরান-সমর্থিত ইরাকি সেনা ঘাঁটিতে বিস্ফোরণ, নিহত ১
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অ্যাসেম্বলি বন্ধ
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অ্যাসেম্বলি বন্ধ
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি