X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

বাড়ছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর লোকসানি শাখা

গোলাম মওলা
১৯ নভেম্বর ২০১৬, ১২:১৭আপডেট : ১৯ নভেম্বর ২০১৬, ২০:০৭

 

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসমূহ

দিন যত যাচ্ছে, ততই রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থার অবনতি ঘটছে। একদিকে এসব ব্যাংকের আয় কমে গেছে, অন্যদিকে বেড়েছে ব্যয়। ফলে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর লোকসানি শাখার সংখ্যা। গত এক বছরে এসব ব্যাংকের লোকসানি শাখা দ্বিগুণ বেড়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এমন তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন শেষে সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী, বেসিক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকে লোকসানি শাখার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৪২টি। ২০১৫ সালের জুন শেষে এই ব্যাংকগুলোতে লোকসানি শাখা ছিল ২৮২টি। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে এই ৬ ব্যাংকে লোকসানি শাখা বেড়েছে ৩৬০টি।

এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাষ্ট্রায়ত্ত এই ব্যাংকগুলোয় খেলাপি ঋণের পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত হারে বাড়ার কারণে একদিকে আয় কমে যাচ্ছে, অন্যদিকে ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। আর এ সব কারণে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে লোকসানি শাখা।

এসব কারণে গত মাসে এই ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বৈঠকে ২০১৬ সালের জুনভিত্তিক প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরে পর্যালোচনা করা হয়। ব্যাংকগুলোর জুনভিত্তিক তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, দিন দিন ব্যাংকগুলো আরও খারাপ অবস্থায় যাচ্ছে।

ব্যাংকগুলোর কেবল লোকসানি শাখা বাড়ছে, তা নয়;  খেলাপি ঋণ ও মূলধন ঘাটতিও বাড়ছে। চলতি বছরের  ৬ মাসের (জানুয়ারি-জুন) ব্যবধানে সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের লোকসানি শাখার সংখ্যা বেড়েছে ৪০৬টি। জুন শেষে এই চার ব্যাংকের লোকসানি শাখা দাঁড়িয়েছে ৫৮৯টিতে। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে লোকসানি শাখার সংখ্যা ছিল ১৮৩টি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ‘সবচেয়ে বেশি লোকসানি শাখা এখন সোনালী ব্যাংকের। এই ব্যাংকের লোকসানি শাখা এখন ২৯০টি। গত বছরের জুনে ব্যাংকটিতে লোকসানি শাখা ছিল মাত্র ৮৯টি। রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংকে লোকসানি শাখা এখন ১২৬টি।

২০১৫ সালের জুনে এই ব্যাংকটিতে লোকসানি শাখা ছিল মাত্র ২১টি। জনতা ব্যাংকের এখন লোকসানি শাখা ৭৪টি। ২০১৫ সালের জুনে ব্যাংকটির লোকসানি শাখা ছিল ৭০টি। বর্তমানে অগ্রণী ব্যাংকে লোকসানি শাখা দাড়িয়েছে ৯৯টি। ২০১৫ সালের জুনে এই ব্যাংকটিতে লোকসানি শাখা ছিল ৬৬টি।

এ প্রসঙ্গে অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত  বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চলতি বছরের শুরুতে অনেক নতুন শাখা খোলা হয়েছে। সাধারণত শাখাগুলো শুরু থেকে লোকসানি থাকে। কিন্তু বছর শেষে এর মধ্যে বেশ কিছু শাখা লাভে ফিরে আসে। যে কারণে জুনের হিসাবে লোকসানি শাখা বেশি দেখালেও বছর শেষে ডিসেম্বরে তা কমে আসবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ ব্যাংকের মোট শাখা সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৭১৬টি। এ মধ্যে লোকসানি শাখার সংখ্যা ৬৪২টি। ২০১৫ সালের জুন শেষে এই ব্যাংকগুলোতে লোকসানি শাখা ছিল ২৮২টি।

এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীরা জানিয়েছেন, নতুন পে-স্কেলে ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বেতনভাতা দিতে গিয়ে ব্যাংকগুলোর লোকাসানি শাখার সংখ্যা বাড়ছে।

এ প্রসঙ্গে অগ্রণী ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ সামস-উল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নতুন পে-স্কেলে ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বেতনভাতা দিতে গিয়ে ব্যাংকগুলোর লোকাসানি শাখার সংখ্যা বাড়ছে। এছাড়া ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণেও লোকসানি শাখা বাড়ছে।’ তবে অগ্রণী ব্যাংকে তিনি যোগ দেওয়ার পর থেকে ১০১ দিনের যে কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন, সেটি সফল হলে ব্যাংকে লোকসানি শাখার সংখ্যা কমে আসবে। তিনি মনে করেন, ‘তার নেওয়া ইউনিট ব্যাংকিং কার্যক্রমের মাধ্যমে সব লোকসানি শাখাকে লাভজনক করা সম্ভব।’

জানা গেছে, সোনালী ব্যাংকের মোট শাখা এখন ১ হাজার ২০৮টি। এর মধ্যে লোকসানি শাখা ২৯০টি। গত বছরের ডিসেম্বর শেষে এই ব্যাংকটির লোকসানি শাখা ছিল ১২৪টি। ওই সময় আর্থিক সূচকের উন্নতির জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সঙ্গে চুক্তির শর্ত অনুযায়ী লোকসানি শাখার সংখ্যা বছর শেষে ৩০টিতে নামিয়ে আনার কথা ছিল।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, অগ্রণী ব্যাংকে এখন মোট শাখা ৯৩২টি। চলতি বছরের ডিসেম্বর শেষে লোকসানি শাখা ১০টিতে নামিয়ে আনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে ব্যাংকটির চুক্তি রয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এই ব্যাংকটিতে  অব্যাহতভাবে লোকসানি শাখা বাড়ছে। গত ছয় মাসে লোকসানি শাখা ৩৪টি থেকে বেড়ে হয়েছে ৯৯টি। ২০১৫ সালে এই ব্যাংকটিকে লোকসানি শাখা ১৫টি কমিয়ে আনার জন্য বলা হয়েছিল।

রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের এখন ৯০৯টি শাখা। এর মধ্যে ৭৪টি শাখা লোকসানে রয়েছে। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে লোকসানি শাখা ছিল ১৫টি। চলতি বছরের শেষে লোকসানি শাখা ৩০টি নামিয়ে আনার কথা থাকলেও উল্টো লোকসানি শাখা বেড়েছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংকের লোকসানি শাখা বৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংকটির যেখানে মাত্র ১০টি শাখা লোকসানে ছিল, চলতি বছরের জুনে এসে তা বেড়ে হয়েছে ১২৬টি। চলতি বছরের শেষে এই ব্যাংকটিকে লোকসানি শাখা ১০টিতে নামিয়ে আনার কথা ছিল। রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের ৬৮টি শাখার মধ্যে এখন ২৮টিই শাখা লোকসানে। গত বছরে জুনে লোকসানি শাখা ছিল ২৬টি। বছর শেষে এ সংখ্যা ৩টিতে নামিয়ে আনার চুক্তি করে ব্যাংকটি। তা করতে সক্ষম হয়নি ব্যাংকটি। উল্টো লোকসানি শাখা আরও বেড়েছে।

২০১৫ সালের জুনে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (বিডিবিএল) লোকসানি শাখা ছিল ১০টি। চলতি বছরের জুনে তা বেড়ে হয়েছে ২৫টি। যদিও এই ব্যাংকের এখন মোট শাখা ৩৮টি। এই ডিসেম্বর শেষে বিডিবিএলের লোকসানি শাখা ৩টিতে নামিয়ে আনার কথা ছিল।

/এমএনএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপের ফাইনাল আজ
বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপের ফাইনাল আজ
টিভিতে আজকের খেলা (২০ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২০ এপ্রিল, ২০২৪)
চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু
চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু
রাজশাহীতে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হলো বিভাগীয় সর্বজনীন পেনশন মেলা
রাজশাহীতে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হলো বিভাগীয় সর্বজনীন পেনশন মেলা
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া