X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘গ্রাহক হয়রানির শীর্ষে সোনালী ব্যাংক’

গোলাম মওলা
০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৫:৫০আপডেট : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ০৮:৫৭

সোনালী ব্যাংক

২০১৫-১৬ অর্থ বছরে সবচেয়ে বেশি হয়রানির শিকার হয়েছেন রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের গ্রাহকরা। ব্যাংকটির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন ৫৩৬ জন। মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকে আয়োজিত এক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিসেস বিভাগের তৈরি করা এই প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত ৫ বছরে হয়রানির শিকার হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে অভিযোগ করেছেন ১৯ হাজার ৪৫০ জন গ্রাহক। এর মধ্যে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৪ হাজার ৫৩০ জন গ্রাহক। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হয়রানির শিকার হয়েছেন বেসরকারি ব্যাংকের গ্রাহকরা। হয়রানির শিকার হওয়া ৫৮ দশমিক ৭০ শতাংশ গ্রাহক বেসরকারি ব্যাংকে লেনদেন করেন। আর ২৮ দশমিক ২৮ শতাংশ হয়রানির শিকার হয়েছেন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের গ্রাহকরা। বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকে হয়রানির শিকার হয়েছেন ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। বিশেষায়িত ব্যাংকে হয়রানি হয়েছেন ৪ দশমিক ৪৬ শতাংশ, এনআরবি ব্যাংকে হয়েছেন শূন্য দশমিক ৩৮ শতাংশ ও ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে হয়রানি হয়েছেন ৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে গ্রাহক হয়রানির সেরা দশ ব্যাংকের তালিকায় রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের পরই দ্বিতীয় তালিকায় রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংকের নাম। এই ব্যাংকটির ৩৭৩জন গ্রাহক হয়রানির শিকার হয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে লিখিত অভিযোগ করেছেন। গ্রাহক হয়রানির তৃতীয় নম্বরে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক। হয়রানির শিকার হয়ে এই ব্যাংকটির কর্মকর্তাদের ২৯১জন গ্রাহক অভিযোগ করেছেন। গ্রাহক হয়রানির শীর্ষ চারে নাম রয়েছে ইসলামী ব্যাংকের। এই ব্যাংটির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ২৬৮ জন গ্রাহক লিখিতভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন।

এছাড়া হয়রানির ক্ষেত্রে শীর্ষ ৫ থাকা রাস্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের ২৩১ জন, ডাচবাংলা ব্যাংকের ২০৪ জন, কৃষি ব্যাংকের ১৮৪ জন, পূবালী ব্যাংকের ১৩২ জন, রূপালী ব্যাংকের ১৩১ জন এবং গ্রাহক হয়রানির শীর্ষ দশে থাকা ইস্টার্ন ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ১২৬ জন গ্রাহক লিখিতভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে অভিযোগ করেছেন।

প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়েছে, সবচেয়ে বেশি গ্রাহক হয়রানির শিকার হয়েছেন ২০১৫-১৬ অর্থবছরে। এই অর্থবছরে ৪ হাজার ৫৩০ জন লিখিতভাবে হয়রানি শিকার হয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানিয়েছেন। আগের বছর ২০১৪-১৫ অর্থবছরে হয়রানির শিকার হয়ে অভিযোগ করেছিলেন ৩ হাজার ৯৩০ জন। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে অভিযোগ করেছিলেন ৪ হাজার ৪৭৬ জন। ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৪ হাজার ২৯৬ জন গ্রাহক লিখিতভাবে হয়রানির কথা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানিয়েছিলেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ব্যাংক খাতে সুশাসন না থাকার কারণে গ্রাহক হয়রানি বাড়ছে।’ এক্ষেত্রে ব্যাংক কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ না থাকাকেও দায়ী করেন তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, হয়রানির শিকার হওয়া গ্রাহকরা কেবল অভিযোগ করেছে এমন নয়, তারা ব্যাংক খাতের দুর্নীতি ও জালিয়াতির তথ্য দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সেই সব তথ্য নিয়ে বিশেষ পরিদর্শনও চালিয়েছে। এর মধ্যে ২০১৫ সালের ১ জুলাই থেকে ২০১৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বেসরকারি ফারমার্স ব্যাংকেই বিশেষ পরিদর্শন হয়েছে ১৯ বার। ন্যাশনাল ব্যাংকে হয়েছে ৮ বার, রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকে হয়েছে ৬ বার এনআরবি কমার্সিয়াল ব্যাংকে হয়েছে ৪ বার, ব্র্যাক ব্যাংকে হয়েছে ৪ বার এবং সাউথইস্ট ব্যাংকে বিশেষ পরিদর্শন হয়েছে ৪ বার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্রাহকদের হয়রানির অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে ৮৫টি বিশেষ পরিদর্শন (তদন্ত) করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভিজিলেন্স ও এন্টি-ফ্রড বিভাগ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৭১টি পরিদর্শন হয়েছে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে হয়েছে ১২টি পরির্দশন।

প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়েছে, সবচেয়ে বেশি গ্রাহককে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে সাধারণ ব্যাংকিং সংক্রান্ত সেবা নিতে গিয়ে। এই সেবা নিতে গিয়ে হয়রানির শিকার হয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে টেলিফোনে অভিযোগ করেছেন ১ হাজার ১১৬ জন গ্রাহক। এছাড়া লিখিত অভিযোগ করেছেন আরও ৪৪৬ জন। এছাড়া ঋণ নিতে গিয়ে হয়রানির শিকার হয়ে ৩৮৪ জন গ্রাহক বাংলাদেশ ব্যাংকে লিখিতভাবে অভিযোগ করেছেন। এছাড়া একই সেবা নিতে গিয়ে হয়রানির শিকার হয়ে আরও ৩৫৮ জন গ্রাহক টেলিফোনে অভিযোগ করেছেন।

প্রতিবেদন দেখা যায়, গ্রাহক স্বার্থ সংরক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০১৬ সালের জুন মাস পর্যন্ত মোট ১৯ হাজার ৪৫০টি অভিযোগ এসেছে। অভিযোগগুলোর মধ্যে প্রায় সবগুলো নিষ্পত্তি করা হয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক দাবি করছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে গ্রাহক হয়রানির এই প্রতিবেদনটির প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির তিনি গ্রাহক হয়রানি কমিয়ে আনার জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেন।

/এসএনএইচ/এআর/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মাদারীপুরে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা
মাদারীপুরে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা
বেসিস নির্বাচনে ওয়ান টিমের প্যানেল ঘোষণা
বেসিস নির্বাচনে ওয়ান টিমের প্যানেল ঘোষণা
ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি লিভারপুল, সেমিফাইনালে আটালান্টা
ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি লিভারপুল, সেমিফাইনালে আটালান্টা
ইরানের ওপর কোনও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়নি: ইরানি কর্মকর্তা   
ইরানের ওপর কোনও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়নি: ইরানি কর্মকর্তা  
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন