X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

চাপে আছেন মুহিত-মসিউররা

শফিকুল ইসলাম
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ২২:৫৮আপডেট : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১১:০৬

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা মশিউর রহমান পদ্মা সেতু ইস্যুতে বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে দায়ের করা অভিযোগ কানাডার আদালতে খারিজ হয়ে যাওয়ার পর থেকে এক প্রকার চাপে আছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এবং প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমানসহ এই বলয়ের অন্যরা। সোমবার  মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে পদ্ম সেতু ইস্যুতে অনির্ধারিত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্য এই চাপকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে বলেও জানা গেছে।  

সোমবারের (১৩ ফেব্রুয়ারি) বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি হয়নি এবং বিশ্বব্যাংককে এই অভিযোগের প্রমাণ দিতে হবে,  আমি এই চ্যালেঞ্জ দিলেও সেসময় আমাদের অর্থমন্ত্রী ও আমার অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা দুজনেই আমাকে বলেছিলেন, একে বাদ দেন, ওকে জেলে দেন। দেখবেন সব ঠিক হয়ে যাবে। এভাবেই তারা একের পর এক শর্ত জুড়ে দিতে লাগলেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সত্যের প্রমাণ একদিন ঠিকই বেরিয়ে আসে। সত্যের পক্ষে থাকলে একদিন তা ঠিকই প্রমাণ হয়। যখন দুর্নীতির অভিযোগ করা হলো, তখনতো তারা টাকাই দেয় নাই। তাহলে দুর্নীতি হলো কিভাবে? সেদিন তাদের কথায় আমাকে অনেক সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল। ওই সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হয়তো ঠিক হয় নাই। মন্ত্রীকে বাদ দেওয়া, সচিবকে জেলে দেওয়া।’ এতে তারা সমাজে হেয় হয়েছিলেন বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেদিনের আমার সেই চ্যালেঞ্জই তো আজ সত্য প্রমাণিত হয়েছে। ’ 

সেই সময়কার সরকারে ছিলেন এমন একাধিক মন্ত্রী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ওই সময় বলা হয়েছিল, মন্ত্রিসভা থেকে যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে সরিয়ে দিলে এবং তৎকালীন যোগাযোগ সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াকে কিছু দিনের জন্য জেলে দিলেই বিশ্বব্যাংক নমনীয় হবে। তারা তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করবে। পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ১ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণ সহায়তা পাওয়া যাবে। এ ক্ষেত্রে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এবং প্রধানমন্ত্রীর অর্থ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানের ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। যা প্রধানমন্ত্রীও সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে বলেছেন।

মঙ্গলবার দুপুরে শেরেবাংলা নগরের এনইসি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত একনেক (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি) মিটিংয়েও উঠে আসে পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে করা দুর্নীতির ইস্যুটি। কানাডার আদালত মামলাটিকে অনুমান ভিত্তিক বলে খারিজ করে দিয়েছে চলতি বছরের জানুয়ারিতে। রায়টি প্রকাশিত হয় ফেব্রুয়ারিতে। ঘটনাটি কানাডার টরেন্টো স্টার পত্রিকা সূত্রে জানা গেছে। টরেন্টো স্টারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মামলাটির বিচারক নরডেইমার চলতি বছরের জানুয়ারিতে এই রায় দিয়েছেন। কিন্তু এই রায়ের বিষয়টি ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত  প্রকাশ না করার জন্য আদালতের নিষেধাজ্ঞা ছিল। 

একনেকের বৈঠকেও প্রধানমন্ত্রী পুনরায় বলেছেন, ‘এই ঘটনায় দুজন নিরীহ ব্যক্তির ওপর অন্যায় করা হয়েছে।’ তিনি সে সময়কার যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন এবং যোগাযোগ সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়ার নাম উল্লেখ করে বলেছেন, ‘এদের একজনকে মন্ত্রিত্ব থেকে সরিয়ে দিতে হয়েছে। আর সচিবকে জেলে যেতে হয়েছে। এ বিষয়টি সমাজে তাদের ইমেজকে হেয় ও ক্ষুণ্ন করেছে।’  প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এই অভিযোগ তোলা না হলে ২০১৬ সালের আগেই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই সেতুর কাজ শেষ হতো এবং আমাদের জিডিপি ৮ শতাংশের ঘর অতিক্রম করতো। কারণ অর্থনীতি বিশ্লেষকদের মতে, পদ্মা সেতু চালু হলে দক্ষিণবঙ্গসহ দেশের অর্থনীতিতে নতুন দিগন্তের সৃষ্টি হবে। যা জিডিপিতে ১ দশমিক ২ শতাংশ অবদান রাখবে।’ বাংলাদেশের বর্তমান জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ১ শতাংশ। এ বিষয়গুলো সাংবাদিকদের জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ.হ.ম মুস্তাফা কামাল।  

এই ঘটনায় মাল মুহিত ও  ড. মসিউরের সঙ্গে একইভাবে চাপে আছেন মাদারীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন এমন একাধিক কেন্দ্রীয় নেতাও। তারাও মাদারীপুর এলাকায় সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের একচ্ছত্র আধিপত্য ভেঙে দিয়ে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে বিশ্বব্যাংকের অভিযোগের বিষয়টি চারদিকে  তরিৎ গতিতে ছড়িয়ে দিতে সহায়তা করেছিলেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তাদের হিসাব ছিল, দুর্নীতির অভিযোগে সৈয়দ আবুল হোসেনকে মন্ত্রিত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হলে স্থানীয় রাজনীতি থেকে তিনি নির্বাসিত হবেন এবং ইমেজ সংকটে পড়বেন। ফলশ্রুতিতে এলাকায় ওই নেতাদের আধিপত্য সৃষ্টি হবে।

আওয়ামী লীগের দলীয় পরিমণ্ডলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই বলয়ের নেতারা সৈয়দ আবুল হোসেনের বিরোধিতায় সোচ্চার ছিলেন। আর এ কারণেই তিনি মাদারীপুরের কোনও আসন থেকেই ১০ম জাতীয় সংসদে মনোনয়ন পাননি। এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে রয়েছেন এমন দুজনের নাম স্থানীয় অনেকের মুখ থেকে জানা গেছে।

এ বিষয়ে এখনও পর্যন্ত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এবং ড. মসিউর রহমানের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।বর্তমানে ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড ফর এগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্ট (ইফাদ) এর গভর্নিং কাউন্সিলের ৪০তম অধিবেশনে অংশ নিতে অর্থমন্ত্রী বর্তমানে ইতালি সফরে রয়েছেন। ফিরবেন আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি রাতে। আর ড. মসিউর রহমান বর্তমানে দেশে অবস্থান করলেও তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলছেন না। সাংবাদিকদের কারও ফোন ধরছেন না। তার মোবাইল ফোনে পাঠানো এসএমএস’র জবাবও দিচ্ছেন না। তিনি বাইরে কোনও অনুষ্ঠানেও অংশ নিচ্ছেন না। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সব মিলিয়ে তারা দুজনেই বর্তমানে চাপে আছেন।

অন্যদিকে এই ঘটনার সময় সোচ্চার ছিলেন এমন সাংবাদিক এবং সিভিল সোসাইটির কর্তা ব্যক্তিরাও চাপ অনুভব করে ভোল পাল্টিয়ে অন্য সুরে কথা বলছেন। যারা ওই সময় সংবাদপত্রের লেখনিতে এবং রাতে বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে নীতিকথার বন্যা বইয়ে দিতেন। সরকারকে সৎ হওয়ার পরামর্শ ও উপদেশ দিতেন। এদের কেউ এখন বলছেন, বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করা উচিৎ। কেউবা বলছেন, এই ঘটনার জন্য বংলাদেশের কাছে বিশ্বব্যাংকের ক্ষমা চাওয়া উচিৎ। আবার কেউ বলছেন, যেহেতু সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে এবং বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের প্রতি সহনশীল, তাই বেশি বাড়াবাড়ি না করা উচিৎ।

বর্তমানে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন দেশের বাইরে আছেন। তবে দেশের বাইরে যাওয়ার আগ মুহূর্তে সংবাদপত্র অফিসে পাঠানো এক  বিবৃতিতে তিনি এ প্রসঙ্গে বলেছেন, তিনি নির্দোষ। কানাডার আদালতে তা প্রমাণিত হয়েছে। অপরদিকে বর্তমান শিল্প সচিব (যিনি সেই সময়ে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্বে ছিলেন) মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেছেন, সচিব হিসেবে তিনি সরকারের যেকোনও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কাজ করেছেন। তাকে কেন মামলায় জড়াতে হলো? কেন তাকে জেলে থাকতে হলো? মামলাটি জামিনযোগ্য হলেও তাকে ৪০দিন জেলে থাকতে হয়েছে। জামিন দেওয়া হয়নি। এতে তিনি পারিবারিক ও সামাজিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘জেল থেকে বেড়িয়ে আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে এই কথাগুলোই বলেছিলাম। আমার প্রতি যে অন্যায় অভিযোগ করা হয়েছে, তা আমি তখন তার চোখে মুখে দেখেছি।’

/এসআই/এপিএইচ/    

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
হৃদরোগ বিভাগে ছারপোকার রাজত্ব, হাসপাতাল পরিচালক দুষছেন রোগীদের
রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালহৃদরোগ বিভাগে ছারপোকার রাজত্ব, হাসপাতাল পরিচালক দুষছেন রোগীদের
‘মডার্ন মেট্রোপলিস’ থিমে ঈদ সংগ্রহ এনেছে ঢেউ
‘মডার্ন মেট্রোপলিস’ থিমে ঈদ সংগ্রহ এনেছে ঢেউ
কাপাসিয়ায় গরু চোর সন্দেহে ২ জনকে পিটিয়ে হত্যা
কাপাসিয়ায় গরু চোর সন্দেহে ২ জনকে পিটিয়ে হত্যা
ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে কবে সমন্বয় করবে রাজউক?
বহুতল ভবনের সংজ্ঞাফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে কবে সমন্বয় করবে রাজউক?
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়