X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

রিজার্ভ চুরির সময় চাকরি ছিল না তিন ডেপুটি গভর্নরের

গোলাম মওলা
২১ মার্চ ২০১৭, ১০:১০আপডেট : ২১ মার্চ ২০১৭, ১৯:৫২

রিজার্ভের অর্থ চুরি

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির এক বছরের বেশি সময় পার হয়েছে। এখনও এ সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি। তবে রিজার্ভ চুরির এক বছর পরে এসেও বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে সুইফটকে আরটিজিএস সিস্টেমের সঙ্গে সংযুক্ত করার বিষয়ে একজন ডেপুটি গভর্নরের বিরোধিতা সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তৎকালীন শীর্ষ কয়েকজন কর্মকর্তার সক্রিয় ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক সূত্রের দাবি, সুইফটের সঙ্গে আরটিজিএসের কানেকশনের বিরোধিতা করা ওই ডেপুটি গভর্নরকে যখন একটি কর্মশালায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়, ঠিক ওই সময়ে সুইফটের সঙ্গে আরটিজিএস সংযুক্তির অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। আরটিজিএসের মাধ্যমে সাধারণত এক দেশের ব্যাংকের টাকা অন্য দেশের ব্যাংক খুব সহজে গ্রহণ করতে পারে। এই আরটিজিএস সিস্টেমটি বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত না থাকলে রিজার্ভ থেকে টাকা চুরি করা সম্ভব ছিল না।

অবশ্য গত বছরের ১৫ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকে সুইফট মেসেজিং প্ল্যাটফরমের সঙ্গে রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট সিস্টেমের (আরটিজিএস) সংযোগের ফলে রিজার্ভ চুরির ঘটনা ঘটে।’

জানা গেছে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে একজন ডেপুটি গভর্নরকে ১৫ দিনের জন্য ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজে (এনডিসি) ক্যাপস্টোন কোর্স করতে পাঠানো হয় ।

২০১৫ সালের ২৬ এপ্রিল থেকে ৭ মে পর্যন্ত ওই ডেপুটি গভর্নর যখন কোর্স করতে যান, ঠিক পরের দিনই (২৭ এপ্রিল) আরটিজিএসের সঙ্গে সংযোগের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই সূত্রের দাবি, বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ একজন কর্মকর্তার নির্দেশে ২০১৫ সালের ২৭ এপ্রিল আরটিজিএসের সঙ্গে সংযোগের সিদ্ধান্তের ফাইলটি ফের উপস্থাপন করা হয়। ২০১৫ সালের ৩০ এপ্রিল ওই ফাইলে তৎকালীন গভর্নর ড.আতিউর রহমানও সই করেন। পরে ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে সুইফটের সঙ্গে আরটিজিএসের কানেকশন করিয়ে দেওয়া হয়।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক একজন ডেপুটি গভর্নর নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘২০১৫ সালের শুরুতে সুইফটকে আরটিজিএস সিস্টেমের সঙ্গে সংযুক্ত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নানাভাবে চেষ্টা করেছেন। তবে তিনি এর বিরোধিতা করার কারণে তখন ওই কর্মকর্তারা সুইফটের সঙ্গে আরটিজিএসের কানেকশন দিতে পারেননি। পরবর্তীতে তিনি যখন বাংলাদেশ ব্যাংকের বাইরে একটি কর্মশালা করতে যান, ঠিক ওই সময়ে ড. আতিউর রহমানকে দিয়ে পাস করিয়ে নেন। তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির জন্য একটি দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা করা হয়েছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রের দাবি অনুযায়ী, রিজার্ভ চুরি নির্বিঘ্ন করতে তিন ডেপুটি গভর্নরের বিদায়কালীন সময়কে বেছে নেয় হ্যাকাররা। অর্থাৎ আলোচিত রিজার্ভ চুরির সময় বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি ছিলো না তিন ডেপুটি গভর্নরের। তিন ডেপুটি গর্ভনরের নিয়োগ পত্রের তথ্য অনুযায়ী, চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় ২০১৬ সালের ২১ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিদায় নেন এসকে সুর চৌধুরী, নাজনীন সুলতানা ও আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান। এরপর ৪ ফেব্রুয়ারি ঘটে রিজার্ভ চুরির ঘটনা। আলোচিত এই ঘটনা ঘটার ৪ দিন পর তিন ডেপুটি গভর্নর পুনর্নিয়োগ পান ৭ ফেব্রুয়ারি। যদিও তারা বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগ দেন ৮ ফেব্রুয়ারি।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর নাজনীন সুলতানা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যখন রিজার্ভ চুরি হয় তখন বাংলাদেশ ব্যাংকে আমার চাকরি ছিল না। এ কারণে রিজার্ভ চুরি নিয়ে কোনও মন্তব্য করা ঠিক হবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমার মেয়াদ শেষ হওয়ায় ২০১৬ সালের ২১ জানুয়ারি শেষ অফিস করেছি। এরপর পুনরায় নিয়োগ পেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগ দিয়েছি ৮ ফেব্রুয়ারি।’

তিনি বলেন, ‘আবার যে সময়ে সুইফটের সঙ্গে আরটিজিএসের কানেকশনের সিদ্ধান্ত হয় তখনও আমি বাংলাদেশ ব্যাংকে ছিলাম না।’

এদিকে, সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান ফায়ার আই ইঙ্ক এবং ওয়ার্ল্ড ইনফরমেট্রিক্সের তৈরি করা এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা অন্তত এক বছর আগে করা হয়। আর চুরির দুই সপ্তাহ আগে থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কম্পিউটার সিস্টেমে নজর রেখেছিল হ্যাকাররা।

এই রিজার্ভ চুরির সঙ্গে দেশি-বিদেশি চক্র জড়িত থাকতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এ নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করে যাচ্ছে।

এই ঘটনায় অবশ্য স্বীকারোক্তি দিয়েছেন ফিলিপাইনের রিজাল ব্যাংকের জুপিটর শাখা ব্যবস্থাপক দিগুইতো। স্বাক্ষর জাল করে অ্যাকাউন্ট খোলার অপরাধে তার বিরুদ্ধে সেদেশে মামলাও হয়েছে। এই ঘটনায় চীনা ব্যবসায়ী কিম অং নামে আরেক মূল হোতার নামও এসেছে। তার কাছ থেকে চুরির অর্থ আদায় করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট্র সূত্রে জানা গেছে, যে অ্যাকাউন্টগুলোর মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি করা হয়েছে, ফিলিপাইনে সেই অ্যাকাউন্টগুলো খোলা হয়েছিল প্রায় এক বছর আগে।

২০১৫ সালের ১৫ মে এই হিসাব খোলার মধ্য দিয়ে শুরু হয় টাকা পাচারের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম। এর মধ্যে অন্যের সই জাল করে একটি হিসাব খোলেন ফিলিপাইনের রিজাল ব্যাংকের জুপিটর শাখা ব্যবস্থাপক দিগুইতো। ওইসব অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য যেসব ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল সেগুলোও ছিল ভুয়া।

/এসটি/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা