বাংলাদেশ ব্যাংকে আগুনের ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ অনুসন্ধান কমিটি। মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে কমিটির প্রধান ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আহমেদ জামাল বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের হাতে এই প্রতিবেদনের কপি তুলে দেন। এ তথ্য জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা।
তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ কমিটির রিপোর্ট মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে গভর্নরের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে।’ তবে রিপোর্টে কী আছে, সে বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি তিনি।
প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন তদন্ত কমিটির অন্য দুই সদস্য নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা বিভাগের মহাব্যবস্থাপক লে. কর্নেল (অব.) মো. মাহমুদুল হক খান চৌধুরী ও ব্যাংকের কমন সার্ভিস ডিপার্টমেন্টের মহাব্যবস্থাপক মো. তফাজ্জল হোসেন।
জানা গেছে, প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আগে গভর্নর ফজলে কবিরের সঙ্গে বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আহমেদ জামালের নেতৃত্বাধীন তদন্ত কমিটির সদস্যরা। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান ও ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে আগুনের ঘটনায় ক্ষয়-ক্ষতির বিবরণ চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের কাছে চিঠি দিয়েছে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি।আগামী ৩০ মার্চের মধ্যে ক্ষয়-ক্ষতির বিবরণ চাওয়া হয়েছে।এছাড়া এই কমিটি আগুনের সময়কার বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের সিসিটিভির ফুটেজও চেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে।
এ প্রসঙ্গে তদন্ত কমিটির প্রধান ও ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক (ঢাকা) সমরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আগুনের সময়কার বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের সিসিটিভির ফুটেজসহ ক্ষয়-ক্ষতির বিবরণ চাওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে।’
এর আগে তিনি সাংবাদিকদের জানান, আগুনের ঘটনায় ব্যাংক কর্মকর্তাদের নাশকতার কোনও পরিকল্পনা ছিল না। তবে তাদের গাফিলতি ছিল। মঙ্গলবার দুপুরে ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটির সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন। পরে সাংবাদিকদের তিনি এসব তথ্য জানান।
প্রসঙ্গত,গত বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক ৯ টা ২০ মিনিটে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের ৩০ তলা ভবনের ১৪ তলায় আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিস এসে ৩০ মিনিটের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
বাংলাদেশ ব্যাংকে আগুনের ঘটনায় ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করতে ঘটনার রাতেই ব্যাংকের তিন সদস্যের একটি অভ্যন্তরীণ অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়।কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আহমেদ জামালের নেতৃত্বাধীন এই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন আজকের (২৮ মার্চ) মধ্যে জমা দেওয়ার কথা ছিল।
প্রতিবেদন তৈরির আগে বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলা ছাড়াও বেশ কয়েকবার ঘটনাস্থলে গিয়েছেন অভ্যন্তরীণ অনুসন্ধান কমিটির সদস্যরা।
এর আগে তদন্ত কমিটির প্রধান আহমেদ জামাল বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছিলেন, ‘আগুনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ খুবই সামান্য। বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের মহাব্যবস্থাপকের রুম ও তার ব্যক্তিগত সহকারীর কক্ষ পুড়ে গেছে। এছাড়া আগুনের ধোঁয়া লাগার কারণে পাশের ডেস্কগুলো কালো হয়ে গেছে।’ বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটের কারণে আগুন লাগতে পারে বলেও মন্তব্য করেছিলেন তিনি।
আলোচিত এই আগুনের ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ অনুসন্ধান কমিটি ছাড়াও তদন্ত করছে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি। এছাড়া ছায়া তদন্ত করছে র্যাব ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ইতোমধ্যে আগুনে পুড়ে যাওয়া কক্ষ থেকে বিভিন্ন আলামত নিয়ে গেছেন সিআইডির কর্মকর্তারা।
উল্লেখ্য, সোমবার ও মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মাসুদ বিশ্বাসের কক্ষে থাকা চেয়ার টেবিল, টেবিলে থাকা কম্পিউটার, প্রিন্টার, টেলিফোন সেট এবং ওই কক্ষে থাকা আলমারি পুড়ে গেছে। তার রুমটি কালো কয়লা হয়ে গেছে। এছাড়া মাসুদ বিশ্বাসের সহকারীর টেবিল-চেয়ারও একেবারেই পুড়ে গেছে। শুধু তাই নয়, আগুন পুড়ে যাওয়া ওই বিভাগটি এখন ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। আগুন নেভাতে ব্যবহৃত পানির কারণে অন্যান্য ডেস্কের বেশ কিছু কাগজপত্র নষ্ট হয়েছে। এছাড়া ফ্লোর পুরোটাই কালো হয়ে পড়েছে।
/জিএম/এপিএইচ/