X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত অধিকাংশ শ্রমিকের জীবন বীমা নেই

গোলাম মওলা
০১ মে ২০১৭, ০৮:১৮আপডেট : ০১ মে ২০১৭, ১৭:২৭

শ্রমিক। ছবি: ফোকাস বাংলা বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে কারখানার উদ্দেশে রওনা দেওয়া কিংবা কাজ শেষে ঘরে ফেরার পথে কোনও শ্রমিক সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হলে তাকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। কিন্তু বাংলাদেশে কারখানায় শ্রমিকের মৃত্যু হলেও সেই ব্যবস্থা নেই। শুধু তাই নয়, অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠানে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের জন্য নেই জীবন বীমা। কিছু কারখানায় এ ব্যবস্থা থাকলেও শ্রমিকরা বেশিরভাগই এর বাইরে। অবশ্য বেশকিছু গার্মেন্টে সম্প্রতি শ্রমিকদের বীমার আওতায় নেওয়া হয়েছে।

শ্রম আইনে ন্যূনতম ১০০ শ্রমিক কোনও কারখানায় কাজ করলে জীবন বীমা ও গ্রুপ বীমা বাধ্যতামূলক। কিন্তু চামড়াজাত পণ্য ও জুতা শিল্পে এ আইনের প্রয়োগ নেই বললেই চলে। বর্তমানে এই খাতে ১ লাখেরও বেশি শ্রমিক কর্মরত থাকলেও বীমার আওতায় আসেনি তাদের এক-তৃতীয়াংশ। এছাড়া জাহাজ ভাঙা শিল্প, নির্মাণ শিল্প, লোহা ও রি-রোলিং মিল ও কারখানাসহ আরও ডজনখানেক শিল্পে শতভাগ শ্রমিককে বীমার আওতায় আনা সম্ভব হয়নি।

এ প্রসঙ্গে গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এম এম মনিরুল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মালিকদের সদিচ্ছার অভাবে বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকদের বীমার আওতায় আনা যাচ্ছে না। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু শ্রমিকদের অধিকার এখনও প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে না। অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকদের ভালো বেতন দেওয়া হয় ঠিকই, কিন্তু বীমার ব্যাপারে তারা বড্ড উদাসীন।’

শ্রমিক। ছবি: ফোকাস বাংলা শ্রমিক নেতারা বলছেন, ‘শিল্প-কারখানাগুলো দেশের অর্থনীতির প্রধান নিয়ামক হলেও অধিকাংশ কারখানার কর্মপরিবেশই প্রশ্নবিদ্ধ। কারণ কলকারখানা বা নির্মাণকাজে প্রায় প্রতিদিনই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন সাধারণ শ্রমিকরা।’

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সেন্টারের জেনারেল সেক্রেটারি ওয়াজেদুল ইসলাম খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বেশকিছু প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন দাবির ব্যাপারে সচেতন। তবে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত অনেক শ্রমিক সেই প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সহযোগিতা পান না। আইন অনুযায়ী, যে কোনও ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শ্রমিকদের জীবন বীমা করা বাধ্যতামূলক হলেও বাস্তবে এর প্রয়োগ খুব বেশি নেই।’

এদিকে শতভাগ বীমার আওতায় আসেনি এমন চামড়াজাত পণ্য ও জুতা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় ৫০০। জানা গেছে, সারাদেশে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান আছে  প্রায় ১ হাজার। এর মধ্যে চামড়াজাত বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে ২৩টি এবং মাঝারি প্রতিষ্ঠান ১০০টি। এছাড়া ক্ষুদ্র ২৭৪টি এবং অতিক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান আছে ৫৩৩টি। এর মধ্যে লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (এলএফএমইএবি) সদস্য ১৫০টি ইউনিটে কর্মরত শ্রমিকের সংখ্যা ৫৩ হাজার ৬০০ জন। তাদের মধ্যে গ্রুপ ইন্স্যুরেন্স বা গোষ্ঠী বীমার আওতায় আছেন ৩৬ হাজার ৫০০ জন। এ হিসাবে ৩২ শতাংশ শ্রমিকই বীমার আওতায় নেই।

এদিকে সেফটি অ্যান্ড রাইটস সোসাইটির জরিপে বলা হয়েছে, ২০০৯ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন খাতে দুর্ঘটনা ঘটেছে ২ হাজার ২৫৭টি। এসব দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মারা গেছেন প্রায় ৪ হাজার ১১১ জন। এর মধ্যে ৯৫ শতাংশই পুরুষ। নির্মাণকাজে নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রতি অবহেলার কারণেই এই শিল্পে হতাহতের সংখ্যা বেশি।

শ্রমিক। ছবি: ফোকাস বাংলা জানা গেছে, অন্য যে কোনও কাজের তুলনায় জাহাজ ভাঙায় ঝুঁকি অনেক বেশি। কারণ পুরনো এসব জাহাজে থাকে নানান বিষাক্ত দ্রব্য, যা কর্মীদের ফুসফুস ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। এছাড়া অন্যান্য কারখানার কর্মস্থলে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। এতে প্রাণও হারাচ্ছেন অনেকে। কিন্তু শ্রমিকসহ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা প্রাপ্য ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন না। এ কারণে দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের অনেককেই দুর্বিষহ জীবন কাটাতে হচ্ছে। অনেকে সারাজীবনের জন্য পঙ্গুত্ববরণ করছেন। এ ক্ষেত্রে শ্রমিকরা বীমার আওতায় না আসার কারণে আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়ছেন অনেকে।

শ্রম মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ১৩ লাখ শিশু শ্রমিক ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় নিয়োজিত থাকলেও ঝুঁকিপূর্ণ কাজে মোট কত পূর্ণবয়স্ক শ্রমিক নিয়োজিত তার কোনও পরিসংখ্যান নেই। অবশ্য ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশনের (আইএলও) তথ্য অনুযায়ী,  ২০১৪ সালে কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ৯৬ জনের, আহত হয়েছেন ৩০৬ জন। এসব ঘটনায় কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন ১০৯ জন শ্রমিক।

শ্রমিক আর ২০১৫ সালে কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় মারা যান ৭৮ জন, আহত ২০৮ জন এবং কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন ৫৯ জন। আইএলও’র হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশের শিশু শ্রমিকরা ৪৭ ধরনের ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ এবং ১৩ ধরনের ‘অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ’ কাজে নিয়োজিত।

এ প্রসঙ্গে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যে কোনও ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শ্রমিকদের জীবন বীমা করা বাধ্যতামূলক। প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানকেই নিজ নিজ উদ্যোগে শ্রমিকদের বীমার আওতায় আনা উচিত। যারা এটি মানবে না তাদের শাস্তির আওতায় আনা জরুরি।’

/এসএমএ/জেএইচ/আপ-এসএনএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ধারণার চেয়ে কম সেনা প্রয়োজন ইউক্রেনের: সিরস্কি
ধারণার চেয়ে কম সেনা প্রয়োজন ইউক্রেনের: সিরস্কি
ফিরেই ফর্টিসকে বিধ্বস্ত করলো মোহামেডান
ফিরেই ফর্টিসকে বিধ্বস্ত করলো মোহামেডান
লঞ্চঘাটের পন্টুন থেকে পদ্মা নদীতে পড়ে যুবকের মৃত্যু
লঞ্চঘাটের পন্টুন থেকে পদ্মা নদীতে পড়ে যুবকের মৃত্যু
রাশিয়ায় বন্ধ হলো জাতিসংঘের নজরদারি সংস্থার কার্যক্রম
রাশিয়ায় বন্ধ হলো জাতিসংঘের নজরদারি সংস্থার কার্যক্রম
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা