বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম বলেছেন, ‘বাংলাদেশে উৎপাদিত পাটের মাত্র ১০ শতাংশ বীজ আমরা স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করে থাকি, বাকি ৯০ শতাংশ বীজের জন্য আমরা ভারতের ওপর নির্ভরশীল। শনিবার (১৩ মে) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) এবং ইউএসএআইডি যৌথভাবে আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
‘পাট হতে পরিবেশবান্ধব পাল্প ও কাগজ প্রস্তুত’ শীর্ষক সেমিনারে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. ফজলে ওয়াহিদ খন্দকার বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
মির্জা আজম বলেন, ‘পাটের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমাদের বীজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের কোনও বিকল্প নেই। বর্তমান সরকার পাট চাষিদের পাটের ন্যায্য মূল্য দেওয়ার পাশাপাশি পাট চাষি এবং এ খাতের ব্যবসায়ীদের স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
পাট প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে বর্তমানে ৮৫ লাখ বেল পাট উৎপাদিত হচ্ছে এবং এটাকে ১ কোটি বেলে উন্নীত করার লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিজেএমসি’র মাধ্যমে দেশে প্রথমবারের মতো পাট থেকে পরিবেশবান্ধব পাল্প ও কাগজ উৎপাদনের শিল্প-কারখানা স্থাপন করা হবে।’
সরকার কাঁচা পাট হতে পলিমার ব্যাগ উৎপাদনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বলে তিনি জানান।
সেমিনারে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, ‘একসময় বাংলাদেশের রফতানি আয়ের প্রধান উৎস ছিল পাট খাত এবং পাটকে সোনালী আঁশ বিবেচনা করা হতো। সারা পৃথিবীতে উৎপাদিত পাটের ৩৩ শতাংশ বাংলাদেশ উৎপাদন করে এবং কাঁচা পাটের মোট রফতানির ৯৪ শতাংশ সারা পৃথিবীতে রফতানি করা হয়।’ ডিসিসিআই সভাপতি পাট পণ্যের বহুমুখীকরন এবং নতুন নতুন চাষাবাদ পদ্ধতি ও প্রযুক্তির ব্যবহার আবিষ্কারের লক্ষ্যে গবেষণা কার্যক্রম আরও বৃদ্ধির জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. ফজলে ওয়াহিদ খন্দকার বলেন, ‘বাংলাদেশের যেসব অঞ্চলে পাটের চাষ বেশি হয়, সেখানে পাল্প ও কাগজ প্রস্তুতকারী কারখানা স্থাপন করতে হবে, যার মাধ্যমে স্বাশ্রয়ী মূল্যে পাট থেকে পাল্প ও পেপার প্রস্তুতে পাট চাষি ও ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করা সম্ভব হবে।’
তিনি বছরে দুবার পাট চাষের পদ্ধতি আবিষ্কার করার জন্য বিজেআরআই-এর গবেষকদের প্রতি আহ্বান জানান। এছাড়া তিনি পাট চাষি, গবেষক এবং এ খাতের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আরও সুদৃঢ় সম্পর্ক স্থানের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সেমিনারে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইন্সটিটিউটের (বিজেআরআই) পরিচালক ড. আসাদুজ্জামান মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে উৎপাদিত পাট হতে আন্তর্জাতিক মানের পাল্প ও কাগজ প্রস্তুত সম্ভব এবং এ ক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার একান্ত আবশ্যক।’
নির্ধারিত আলোচনায় বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিজেআরআই) মহাপরিচালক ড. মো. মনজুরুল আলাম, ডিসিসিআই’র আহ্বায়ক রাশেদুল করীম মুন্না এবং বিজেএমসি’র প্রাক্তন যুগ্ম সচিব ও পরিচালক বাবুল চন্দ্র রয় এতে অংশগ্রহণ করেন।
বক্তারা পাট পণ্যের বহুমুখীকরণ ও নতুন নতুন পণ্য উদ্ভাবনে গবেষণা পরিচালনা, এ খাতের উদ্যোক্তাদের স্বল্প সুদে আর্থিক সহায়তা প্রদান, সারা বিশ্বে বাংলাদেশি পাট পণ্যের প্রসারের লক্ষ্যে ব্র্যান্ডিং কার্যক্রম পরিচালনা করা এবং পাট পণ্যের শিল্প-কারখান স্থাপনে জমি, বিদ্যুৎ, গ্যাস সংযোগ সহ অন্যান্য অবকাঠামোগত সুবিধা প্রদানের বিষয়ে সরকারের প্রতি আহবান জানান।
/জিএম/এআর/