X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যে কারণে শীর্ষ করদাতার তালিকায় নেই গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা

গোলাম মওলা
২৪ মে ২০১৭, ১৪:৪৬আপডেট : ২৪ মে ২০১৭, ২৩:০৫

তৈরি পোশাক খাত (ছবি: সংগৃহীত) তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখলেও সেরা করদাতার তালিকায় তাদের অনেকেরই নাম নেই। শুধু তাই নয়, তাদের অনেকে দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী হয়েও সেরা করদাতা হতে পারছেন না। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ২০১৫-১৬ করবর্ষের সেরা করদাতার যে তালিকা তৈরি করেছে, তাতে হাকিমপুরী জর্দা কোম্পানির স্বত্বাধিকারী কাউছ মিয়া রয়েছেন সবার শীর্ষে। এছাড়া শীর্ষ দশ করদাতার বাকি নয়জনের মধ্যেও আলোচিত বা প্রভাবশালী কোনও শিল্প-উদ্যোক্তার নাম নেই।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) প্রথম সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জাতীয় রাজস্ব বোর্ড যাদের সেরা করদাতার খেতাব দিয়েছে, তাদের চেয়ে তৈরি পোশাক খাতের অনেকেই বেশি কর দেন। কিন্তু সরকারকে সাধ্যমতো কর দেওয়ার পরও পোশাক খাতের অনেক উদ্যোক্তার ট্যাক্স ফাইল চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি হয় না। আর ট্যাক্স ফাইল চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি না হলে সেরা করদাতার তালিকায় যাওয়ার সুযোগ নেই।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের ২০১২ সালের ফাইল এখনও পর্যন্ত নিষ্পত্তি হয়নি। অথচ সরকারকে কর ঠিকই দিতে হয়েছে।’

তৈরি পোশাক খাতের বড় গ্রুপগুলোর মালিকরা ২০/২৫টি প্রতিষ্ঠানের নামে আলাদাভাবে আয়কর দেন। এটাকেও এই খাতের বড় ব্যবসায়ীদের সেরা করদাতার তালিকায় না থাকার একটি কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন মোহাম্মদ হাতেম। তিনি বলেন, ‘কোনও ব্যবসায়ী প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের নামে এক কোটি টাকা করে কর দিলেও সরকার তার কাছ থেকে বছরে ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকা কর পাচ্ছে। অথচ হয়তো ওই ব্যবসায়ী নিজের নামে আয়কর দেন এক কোটি টাকারও কম। ফলে করদাতার তালিকার শীর্ষে থাকার সুযোগ তার নেই।’

অবশ্য পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী মনে করেন, পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা সেরা করদাতা হওয়ার আশায় সরকারকে কর দেন না। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা মূলত দেশের লাখ লাখ করদাতা তৈরিতে সহায়তা করছেন। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধিতেও ভূমিকা রাখছেন। অনেক উদ্যোক্তা আছেন, যারা দেশের লাখ-লাখ বেকারের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন।’

প্রচলিতভাবে ধারণা করা হয়, যিনি বেশি আয় করেন, তিনিই সরকারকে বেশি কর দেন। ফলে সর্বোচ্চ করদাতা ব্যক্তিকেই সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হিসেবে মূল্যায়ন করার প্রবণতাও আছে সমাজে। কিন্তু, বিষয়টি নির্ধারণে সরকারের কোনও সুস্পষ্ট নির্দেশনা নেই। স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে শীর্ষ ধনী ব্যক্তির কোনও তালিকা করা হয়নি। কিন্তু এনবিআর ২০১৫-১৬ করবর্ষ থেকে শীর্ষ ১০ করদাতার তালিকা প্রকাশ করছে। এই তালিকার প্রথমে রয়েছেন হাকিমপুরী জর্দা কোম্পানির স্বত্বাধিকারী কাউছ মিয়া। শীর্ষ দশের এই তালিকায় দ্বিতীয় থেকে সপ্তম স্থান দখল করে রয়েছেন একই পরিবারের ছয় জন। তারা ড্রাগ ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী খাজা তাজমহল, রুবাইয়াৎ ফারজানা হোসেন, লায়লা হোসেন,  হোসনে আরা হোসেন, এম এ হায়দার হোসেন ও মোহাম্মদ ইউসুফ। তালিকায় অষ্টম স্থানে রয়েছেন সার ব্যবসায়ী কামরুল আশরাফ খান। তালিকা অনুযায়ী, নবম সেরা করদাতা গাজী গ্রুপের পরিচালক গোলাম দস্তগীর গাজী এবং দশম স্থানে রয়েছেন ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের মালিক আবদুল মুক্তাদির।

পোশাক খাতের ব্যবসায়ীদের মতে, অনেক শিল্প-উদ্যোক্তা তাদের কোম্পানির লাখ-লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতা দিতে গিয়ে সেরা করদাতার তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন। তারা মূলত প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কর পরিশোধ করেন। ফলে তাদের ব্যক্তিগত সম্পদের পরিমাণ কম থাকে। এ কারণে ব্যক্তিগত খাত থেকে তারা বেশি কর দিতে পারেন না। একসঙ্গে অনেক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে গিয়ে ব্যক্তিগত হিসাবে তাদের করের পরিমাণ হয় কম।

এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সেরা করদাতার তালিকায় তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের নাম না থাকলেও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই খাতের উদ্যোক্তারা সরকারকে বেশি কর দিয়ে থাকেন।’ তিনি বলেন, ‘এই খাতের উদ্যোক্তাদের অনেকে একাধিক প্রতিষ্ঠানের নামে কর দিচ্ছেন, আবার বৈদেশিক মুদ্রায় আয় করছেন। লাখ লাখ বেকারের কর্মসংস্থানও ঠিক করে দিচ্ছেন তারা।’

এ প্রসঙ্গে বিকেএমইএ’র সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের আয় বেশি না হওয়ার কারণেই সেরা করদাতার তালিকায় যেতে পারে না। অনেকেরই ধারণা, পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা অনেক লাভ করেন। আসলে তা নয়। অনেক সময় এই খাতের উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ করা টাকাও ফেরত পাওয়া যায় না।’ তিনি বলেন, ‘এই খাতের উদ্যোক্তারা সেরা তালিকায় না থাকলেও দেশের অর্থনীতিতে তাদের অবদান বেশি। পোশাক খাতে এমন অনেক উদ্যোক্তা আছেন, যিনি অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠানের মালিক।’ তিনি মনে করেন, যারা ব্যাংকের টাকা নিয়ে ব্যবসা করছেন, তাদের পক্ষে সেরা করদাতা হওয়া কঠিন ব্যাপার।

এ প্রসঙ্গে এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ধনীরাই বেশি কর ফাঁকি দেন, এটা সার্বজনীন সমস্যা। বিদেশেও ধনীরাই কর ফাঁকি দেন। বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলসহ একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থার বিভিন্ন গবেষণায় উঠে আসে ধনীদের কর ফাঁকি দেওয়ার তথ্য।’ তিনি বলেন, ‘আমরা দেশের সব ধনীদের বিবেকের কাছে আবেদন করছি, তারা যেন নিয়মিত কর দেন, তারা যেন নাগরিক দায়িত্ব পালন করেন।’

সেরা করদাতার এই তালিকায় দেশের আলোচিত বড় বড় শিল্প উদ্যোক্তার নাম না থাকার কারণ প্রসঙ্গে হাকিমপুরী জর্দার মালিক কাউছ মিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছিলেন, ‘আলোচিত ও প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের অধিকাংশই ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করছেন। তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লাভ বেশি হলেও ব্যাংকের টাকা শোধ দিতে গিয়ে কাঙ্ক্ষিত কর দিতে পারছেন না। তবে ইচ্ছে করেও অনেকে কর ফাঁকি দিচ্ছেন। যারা লাভের টাকা বিদেশে নিয়ে যান, তারাই কর ফাঁকি দেন বেশি।’

/টিআর/টিএন/আপ-এফএস/

আরও পড়ুন- 
রোড টু ইলেভেন: কখন কী করবে ইসি

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!