X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিড়ি কারখানার মোট শ্রমিক ৬৫ হাজার, অর্ধেকই শিশু

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১৩ জুন ২০১৭, ০৪:৩৯আপডেট : ১৩ জুন ২০১৭, ১০:১৪

ছবি: ইন্টারনেট ১২ জুন দেশব্যাপী পালিত হয়েছে বিশ্ব শিশু শ্রম প্রতিরোধ দিবস। শিশু অধিকার সুরক্ষা ও ঝুঁকিপূর্ণ শিশু শ্রম নিরসনের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক শিশু শ্রম সংস্থা (আইএলও) ২০০২ সাল থেকে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে প্রতিবছর দিবসটি পালন করে আসছে। সারা বিশ্বের সঙ্গে যখন বাংলাদেশে এ দিনটি পালিত হচ্ছে, সেই মুহূর্তে দেশের বিড়ি ও সিগারেট কারখানায় কাজ করছে ৬৫ হাজার শ্রমিক। যার অর্ধেকই শিশু। যদিও আইন অনুযায়ী বিড়ি শিল্পে শিশুশ্রম ব্যবহার নিষিদ্ধ। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা’র (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এক গবেষণায় এ তথ্য পাওয়া গেছে।

গবেষণার তথ্য মতে, দেশে মোট বিড়ি কারখানার সংখ্যা ১১৭টি। এসব কারখানায় তালিকাভুক্ত শ্রমিকের সংখ্যা মাত্র ৬৫ হাজার। কারখানাগুলোতে মাসিক ও বার্ষিক মোট উৎপাদন যথাক্রমে ৪০৫ এবং ৪ হাজার ৮৬২ কোটি শলাকা। তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর গবেষণা অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে মোট বিড়ি কারখানার সংখ্যা ১৯৫টি। এ খাতে জড়িত শ্রমিকের সংখ্যা ৭৫ হাজার। যদিও কারখানার মালিকেরা তাদের নিয়োগকৃত গবেষক, লবিস্ট ও ফ্রন্ট গ্রুপের মাধ্যমে এ খাতে ২৫ লাখ শ্রমিক নিয়োজিত আছে বলে দীর্ঘদিন যাবত অপপ্রচার চালিয়ে আসছে। তবে তথাকথিত এসব গবেষক ও শ্রমিক হিতৈষীরা বিড়ি কারখানায় নিয়োজিত শিশু শ্রমিকের সংখ্যা বলতে নারাজ।

বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদন, মিডিয়ায় প্রচারিত খবর এবং প্রজ্ঞার টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রি ওয়াচবিডি টিমের সদস্যদের সরেজমিন বিড়ি কারখানা পরিদর্শন প্রভৃতি থেকে উঠে এসেছে এসব কারখানায় শিশুশ্রম ব্যবহারের ভয়াবহ চিত্র। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বিড়ি উৎপাদন প্রক্রিয়ার বিভিন্ন ধাপে নিয়োজিত অধিকাংশ শিশুর বয়স ৪ থেকে ১২ বছর। হারাগাছ বিড়ি শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ এবং কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে হারাগাছে প্রায় ৩৫টি (যা দেশের মোট বিড়ি কারখানার প্রায় ৩০ শতাংশ) বিড়ি কারখানা চালু রয়েছে। এসব বিড়ি কারখানায় কর্মরত মোট শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার। এই ৪০ হাজার শ্রমিকের ২০ হাজারই (৫০ শতাংশ) শিশু। বাকি ২০ হাজারের মধ্যে ১২ হাজার (৩০ শতাংশ) নারী এবং ৮ হাজার (২০ শতাংশ) পুরুষ।

শিশু শ্রমিকদের মধ্যে প্রায় ১৫ হাজার নিয়মিত অথবা অনিয়মিতভাবে স্কুলে যায়। বাকিরা কখনোই স্কুলে যায় না। স্থানীয়দের মতে, বিড়ি কারখানায় কাজ করা ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়ায় বেশিদূর যেতে পারে না। পঞ্চম শ্রেণিতে গিয়েই অধিকাংশের পাঠ চুকাতে হয়। একইভাবে লালমনিরহাট জেলার সাংবাদিক এবং বিড়ি শ্রমিকদের সঙ্গে আলাপে জানা গেছে, এ জেলার ৯টি বিড়ি কারখানায় (যা দেশের মোট বিড়ি কারখানার প্রায় ৭ দশমিক ৭ শতাংশ) প্রায় ২১ হাজার শ্রমিক কর্মরত রয়েছে। এদের প্রায় ৭০ শতাংশই (১৪ হাজার ৭০০) শিশু। বিড়ি তৈরির বিভিন্ন ধাপে নিয়োজিত এসব শিশুদের বয়স ৪-১৪ বছরের মধ্যে।

সরেজমিনে এলাকার বেশ কয়েকটি বিড়ি কারখানা ঘুরে শিশুশ্রম ব্যবহারের সত্যতা পাওয়া গেছে। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, শ্রমিকদের ৬০-৭০ ভাগই শিশু। অন্যদিকে গৃহস্থালি পর্যায়ে বিড়ির খালি ঠোস বা শলাকা তৈরির সঙ্গে যুক্ত শিশু শ্রমিকদের চিত্র আরও ভয়াবহ। এখানকার ৯০ ভাগ শ্রমিকই শিশু।

পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, শিশুরা সাধারণত বিড়ি তৈরির ৪টি ধাপ যথাঃ (১) বিড়ির খালি ঠোস তৈরি (২) খালি ঠোসে গুঁড়া তামাক ভরা (৩) তামাক ভরা ঠোসের মাথা মোড়ানো এবং (৪) বিড়ির প্যাকেট তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এসব কাজের মধ্যে ঠোস তৈরির কাজ গৃহস্থালি পর্যায়ে এবং বাদবাকি কাজ কারখানাতে সম্পন্ন হয়। সাধারণভাবে শিশুরা সকাল ৯টা থেকে দুপর ১২টা পর্যন্ত বিড়ি কারখানার কাজ এবং বিকাল ৪টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বাড়িতে ঠোস তৈরির কাজ করে। বাড়িতে তৈরি বিড়ির ঠোস কারখানায় নিয়ে তামাক ভরা এবং মাথা মোড়ানোর কাজ শেষ করে প্যাকেটজাত করা হয়। প্যাকেট তৈরির কাজ সাধারণত বয়স্করা করে, তবে শিশুরাও এ কাজ করে। শিশু শ্রমিকদের মজুরির পরিমাণও খুব নগণ্য। বিকেল ৪টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত টানা কাজ করলে একজন শিশুশ্রমিক গড়ে সাড়ে চার হাজার ঠোস তৈরি করতে পারে। প্রতি হাজার ঠোস তৈরির মজুরি গড়ে ৭ টাকা ৫০ পয়সা।

একইভাবে কারখানায় সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত একজন শিশু গড়ে ৫ হাজার বিড়ির মুখ মোড়ানোর কাজ করতে পারে। এ ক্ষেত্রেও প্রতি হাজারে গড় মজুরি ৭ টাকা ৫০ পয়সার বেশি নয়। অর্থাৎ দিনে একজন শিশুশ্রমিকের গড় মজুরি প্রায় ৩৫ টাকা। স্থানীয়দের মতে, বেশিরভাগ কারখানায় মাসে গড়ে ১২ দিন কাজ থাকে। সে হিসেবে একজন শিশুশ্রমিকের মজুরি বাবদ গড় মাসিক আয় মাত্র ৪২০ টাকা। দৈনিক হিসেবে এই আয় মাত্র ১৪ টাকা।

জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদের ৩২ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ‘রাষ্ট্রগুলো অর্থনৈতিক শোষণ থেকে শিশুদের অধিকার রক্ষা করবে। ঝুঁকিপূর্ণ শ্রম অর্থাৎ, শিশুর স্বাস্থ্য অথবা শারীরিক, মানসিক, আত্মিক, নৈতিক, সামাজিক বিকাশের জন্য ক্ষতিকর অথবা ব্যাঘাত ঘটায় অথবা বিপদের আশঙ্কা আছে; এমন সব কাজে যেন শিশুদের ব্যবহার করা না হয় তার ব্যবস্থা নেবে।’ উক্ত সনদের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকার শিশুদের জন্য অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ৩৮টি কাজে শিশুদের নিয়োগ নিষিদ্ধ করে একটি তালিকা প্রণয়ন করেছে। এ তালিকার চার নম্বরেই রয়েছে বিড়ি ও সিগারেট কারখানার কাজ। এছাড়াও বাংলাদেশ সরকার ২০০১ সালে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার কনভেনশন নং ১৮২ অনুসমর্থন করেছে। শিশু অধিকার সংরক্ষণ সংক্রান্ত এসব বিধি-বিধান কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন না হওয়ায় বিড়ি কারখানার মালিকেরা ঝুঁকিপূর্ণ তামাক প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিড়ি উৎপাদন প্রক্রিয়ার বিভিন্ন স্তরে শিশুশ্রম ব্যবহার করছে।

/এসআই/এমপি/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে করারোপ: আইনের বিশ্লেষণ
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে করারোপ: আইনের বিশ্লেষণ
ইউক্রেনের মার্কিন সামরিক সহায়তা আইনে স্বাক্ষর বাইডেনের
ইউক্রেনের মার্কিন সামরিক সহায়তা আইনে স্বাক্ষর বাইডেনের
নামাজ শেষে মোনাজাতে বৃষ্টির জন্য মুসল্লিদের অঝোরে কান্না
নামাজ শেষে মোনাজাতে বৃষ্টির জন্য মুসল্লিদের অঝোরে কান্না
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগে বৃষ্টির আভাস
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগে বৃষ্টির আভাস
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা