ব্যাংক আমানতের ওপর অবগারি শুল্ক আরোপ ইস্যুতে ক্রমেই একা হয়ে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। নিজ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নানও মন্ত্রীর নেওয়া সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত নন। আসন্ন ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যাংক আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক আরোপ করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
প্রথম দিকে অর্থমন্ত্রী বারবার বলেছেন, অবগারি শুল্ক আরোপের প্রস্তাবে পরিবর্তন আসবে না। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্য, সরকারদলীয় হুইপ, এমনকি খোদ সরকারের কয়েকজন মন্ত্রীও এর বিরোধিতা করে বক্তব্য রেখেছেন। বিষয়টি সরকারকে অনেকটাই বিব্রত করেছে।
প্রস্তাবিত বাজেটে এই শুল্ক আরোপ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক থেকে শুরু করে সর্বশেষ কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীও বক্তব্য রাখেন। বক্তব্যে তারা এর তীব্র বিরোধিতা করেন। এই শুল্ক আরোপের বিষয়টি যে জনগণ ভালোভাবে গ্রহণ করেনি, তা আঁচ করতে পেরে খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ নিয়ে কথা বলেছেন। এ মাসের ৪ তারিখে জাতীয় প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের এক ইফতার অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে কোথাও কোনও সমস্যা থাকলে তা জাতীয় সংসদে আলোচনার পর সংশোধন করা যাবে।
বাজেট উপস্থাপনের পরের দিন (২ জুন) বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলন থেকেই সমালোচনা হচ্ছিল ব্যাংক আমানতে অবগারি শুল্ক আরোপের প্রস্তাব নিয়ে। যাদের এক লাখ টাকা ব্যাংকে আছে তারা সম্পদশালী— অর্থমন্ত্রীর এমন মন্তব্য সমালোচনার আগুনে ঘি ঢেলেছে। সংবাদ সম্মেলনেই সংবদিকরা তাকে এ সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করেন। তবে নমনীয় হননি তিনি। অর্থমন্ত্রী বারবারই বলেছেন, ‘এ শুল্ক আগে থেকেই ছিল, এ বছর আমি পরিমাণ কিছুটা বাড়িয়েছি। এর বেশি তো কিছু করিনি। এটি বহাল থাকবে।’
তবে শেষ পর্যন্ত এই ইস্যুতে সুর নরম করেছেন অর্থমন্ত্রী। গত বুধবার সচিবালয়ে ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে তিনি বলেছেন, ‘আগে থেকেই এ শুল্ক ছিল। আমি এ বছর এর হার সামান্য বাড়িয়েছি। আর আপনারা (সাংবাদিকরা) তাতেই এমনভাবে চিল্লা পাল্লা শুরু করে দিলেন যেন এটি একটি নতুন বিষয়।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘সংসদে আলোচনা হচ্ছে। প্রস্তাবিত এ হার পরিবর্তন হতে পারে।’
বাজেট প্রস্তাবনার পর থেকেই দেশের অন্যতম ইস্যুতে পরিণত হয়েছে ব্যাংক আমানতে অবগারি শুল্ক আরোপের বিষয়টি। ব্যাংক আমানতের ওপর শুল্ক হার লাখে আটশ টাকা, এক লাখ টাকা ব্যাংকে রাখলে পাওয়া যাবে ৯৯ হাজার টাকা— এমন নানা ধরনের নানামুখী আলোচনায় মানুষের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্যের ছড়াছড়ি সব জায়গায়। অর্থমন্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তিও করছেন কেউ কেউ, কথা তুলছেন তার বয়স নিয়েও।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত স্বভাবসুলভ হাসিমাখা মুখে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এর নাম গণতন্ত্র। আলোচনা-সমালোচনা তো হবেই। সংসদে প্লেস করেছি। সংসদের আলোচনার পরেই তো যেকোনও বিষয় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়। এ ক্ষেত্রেও তাই হবে।’
আরও পড়ুন-
প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফরের সমালোচনায় খালেদা জিয়া
বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সম্পত্তি জব্দে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে: সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
/এসআই/টিআর/