আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের নামে আমদানি-রফতানির আড়ালে ব্যাংক লেনদেনের মাধ্যমে বিদেশে অর্থপাচার হচ্ছে বলে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ ক্ষেত্রে অর্থপাচারকারীরা চারটি কৌশল গ্রহণ করছে। এগুলো হলো আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ওভার অ্যান্ড আন্ডার ইনভয়েসিং, ওভার অ্যান্ড আন্ডার শিপমেন্ট, পণ্যের মিথ্যা ঘোষণা ও একাধিক ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে। রবিবার বিআইবিএম অডিটোরিয়ামে ট্রেড সার্ভিস অপারেশনস অব ব্যাংকস শীর্ষক এক কর্মশালায় এই গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।
গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের পরিচালক (প্রশিক্ষণ) ড. শাহ মোহাম্মদ আহসান হাবীব।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী।
গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, অর্থপাচার প্রতিরোধের নীতিমালাগুলো আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হলেও এগুলো আরও উন্নতি ঘটাতে হবে। স্বীকৃত ব্যাংকগুলোকে আমদানি-রফতানি মূল্যের ক্ষেত্রে আরও বেশি সচেতন হতে হবে। এতে আরও বলা হয়েছে, ট্রেড সার্ভিসের মাধ্যমে কেউ যেন ঋণখেলাপি হতে না পারে সেজন্য যথোপযুক্ত তথ্য সরবরাহ করতে হবে। এক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর উচিত হবে, অধিক স্বচ্ছতা নির্ধারণের জন্য এসব তথ্য যাচাই করা।
অনুষ্ঠানে এস কে সুর চৌধুরী বলেন, ‘বাণিজ্যকেন্দ্রিক অর্থপাচার উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।’ তিনি বলেন, এটা কেবল অর্থপাচার নয়, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে অন্যান্য আর্থিক অপরাধগুলোও ঘটছে। এসব দিক বিবেচনা করে বাংলাদেশ ব্যাংক আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ওপরে কড়া নজরদারি করছে। প্রতিদিনের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের লেনদেন তদারকি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।’
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈদেশিক বাণিজ্যের ব্যাংকিং সেবায় আধিপত্য হারাচ্ছে রাষ্ট্রায়াত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক। এতে বলা হয়েছে, আমদানির পাশাপাশি রফতানিতেও আধিপত্য হারাচ্ছে রাষ্ট্রায়াত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক। ২০১১ সালে রাষ্ট্রায়াত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রফতানি আয় এসেছে ১৮ শতাংশ। সেখানে ২০১৬ সালে কমে ঠেকেছে ১০ শতাংশ।
এতে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০১১ সালে রাষ্ট্রায়াত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে আমদানি ব্যয় মেটানো হয় ২৭ শতাংশ। ২০১৬ সালে তা ৭ শতাংশে নেমে এসেছে। অন্যদিকে ২০১১ সালে স্থানীয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ৬৪ শতাংশ আমদানি ব্যয় মিটিয়েছে। ২০১৬ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৫ শতাংশ।
বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে সরকারি ব্যাংকগুলো বেসরকারি ব্যাংকগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না। ওভার ইনভয়েসিং এবং আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে মানি লন্ডারিং বন্ধ করতে হবে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সেবায় আরও গতিশীলতা আনতে ব্যাংকগুলোকে প্রশিক্ষণের ওপর জোর দিতে হবে।’
বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধূরীর সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন এনআরবি ব্যাংকের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক মো. মেহমুদ হোসাইন প্রমুখ।
জিএম/এমএনএইচ/