X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদে চাঙ্গা অবৈধ হুন্ডি বাজার

গোলাম মওলা
২২ জুন ২০১৭, ২১:১৩আপডেট : ২৩ জুন ২০১৭, ২৩:৩২

ঈদে চাঙ্গা হুন্ডি ব্যবসা (ছবি- অনলাইন থেকে সংগৃহীত) ঈদে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে অবৈধ হুন্ডি বাজার। ঈদকে কেন্দ্র করে দেশে আসছে প্রবাসীদের পাঠানো বিপুল পরিমাণ অর্থ। আবার কেনাকাটা করতে যারা দেশের বাইরে যাচ্ছেন, তাদের অনেকেই এর আশ্রয় নিচ্ছেন। বিশেষ করে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দেশ-বিদেশে গড়ে তোলা হয়েছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এ চক্র সহজেই গ্রাহকের টাকা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পৌঁছে দিচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, গত তিন বছরে হুন্ডি বেড়েছে দ্বিগুণ। ২০১৩ সালে প্রবাসী আয়ের মাত্র ১০ দশমিক শূন্য চার শতাংশ হুন্ডির মাধ্যমে আসতো। বর্তামানে আসছে ২২ শতাংশ।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনিন আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অন্যান্য সময়ে হুন্ডি চক্র সক্রিয় থাকলেও ঈদের সময় হুন্ডি প্রবণতা বহুগুণ বেড়ে যায়। বৈধ চ্যানেলে কিছু জটিলতার কারণে অনেকে অবৈধ পথ বেছে নিচ্ছেন। ঈদের সময় প্রবাসীরা হুন্ডির আশ্রয় বেশি নেন। কারণ, এ সময় পরিবারে টাকার চাহিদা বাড়ে। অথচ ব্যাংকিং চ্যানেলে পাঠাতে গেলে সময়ক্ষেপণ, অর্থ ব্যয় ও ভোগান্তি থেকে বাঁচতে প্রবাসীরা হুন্ডিকে বেছে নেন। একইভাবে ঈদের কেনাকাটা করতে বা ঘুরতে যাওয়া মানুষের সংখ্যাও এই সময় বেড়ে যায়। ফলে ঈদের সময় অবৈধ হুন্ডি বাজার সক্রিয় হয়ে উঠে।’
বৈধ উপায়ে ডলার কেনাবেচায় ভোগান্তি বেশি উল্লেখ করে ড. নাজনিন আহমেদ আরও বলেন, ‘বৈধ উপায়ে ডলার কেনা-বেচার হয়রানি বাঁচতে অনেকেই হুন্ডি বাজারে যাচ্ছেন। দেশের বাইরে যারা কেনাকাটা করতে বা ঘুরতে যাচ্ছেন, তাদের অনেকেরই পাঁচ হাজার ডলারে হয় না। তখন বাধ্য হয়ে তারা অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছেন হুন্ডি থেকে। আবার প্রবাসী শ্রমিকরা বৈধ চ্যানেলের ভোগান্তি থেকে বাঁচতে ও তুলনামুলক কম খরচের কারণে হুন্ডিকে বেছে নিচ্ছেন।’

ড. নাজনিন আরও বলেন, ‘বৈদেশিক মুদ্রার রেটও হুন্ডিকে উস্কে দিচ্ছে। এছাড়া চিকিৎসা বা পড়াশুনার বাড়তি খরচ মেটাতে গেলেও হুন্ডির ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।’

ঈদকে সামনে রেখে বাংলাদেশিদের দেশের বাইরে ঘুরতে যাওয়া ও কেনাকাটার প্রবণতা বাড়ছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বাংলাদেশ থেকে গত বছর শুধু ভারতে ঈদ গিয়েছেন দেড় লাখেরও বেশি মানুষ। এবারও ঈদের কেনাকাটায় দেড় লাখেরও বেশি বাংলাদেশির ভারতে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর বাইরে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের আরও প্রায় দেড় লাখ মানুষ ঘুরতে ও কেনাকাটা করতে যাচ্ছেন।

দেশের বাইরে কেনাকাটার এ মনোভাব কেবল উচ্চবিত্তের তা নয়, মধ্যবিত্তকেও গ্রাস করেছে। প্রতিদিনই দেশের হাজার হাজার মানুষ ঈদ উপলক্ষে ছুটছেন কলকাতার বিখ্যাত বিগ বাজারসহ বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন মার্কেটে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি ও এফবিসিসিআই এর সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. হেলাল উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বাংলাদেশে ঈদে কেনাকাটা না করে অনেকেই এখন ছুটে যান ভারতে বা সিঙ্গাপুরে। যারা দেশের বাইরে কেনাকাটা করতে যাচ্ছেন, তারা একদিকে যেমন হুন্ডি করছেন, অন্যদিকে দেশের টাকা বাইরে রেখে আসছেন।’

হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘গত রজমানে ঈদে কেনাকাটা করতে দেড় লাখেরও বেশি বাংলাদেশি ভারতে গিয়েছিলেন। ঈদকে সামনে রেখে ভারতীয় হাইকমিশন গত বছরে অতিরিক্ত এক লাখ ভিসা দিয়েছিল। গত বছরের চেয়ে এবার আরও বেশি মানুষ সেখানে কেনাকাটা করতে যাচ্ছেন।’

হেলাল উদ্দিন তার অভিমত তুলে ধরে বলেন, ‘বিভিন্ন দেশে ঘুরতে যাওয়া বা ঈদে কেনাকাটা করতে যাওয়ার জন্য পাঁচ হাজার ডলার নিয়ে যাওয়া বাংলাদেশির সংখ্যা যদি দেড় লাখও হয়, তাহলে দেশ থেকে পাঁচ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা চলে যাবে বাইরে। প্রত্যেকে যদি সর্বনিম্ন এক হাজার ডলারের (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৭৮ হাজার টাকা) পণ্য কেনাকাটা করেন তাহলে দেশ থেকে এবারের ঈদে এক হাজার ১৭০ কোটি টাকা চলে যাবে বাইরে।

এদিকে, ঈদে হুন্ডির পরিবর্তে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য সেবার মান বৃদ্ধির নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রতিটি শাখায় রেমিট্যান্স হেল্প ডেস্ক স্থাপন ও বৈধপথে রেমিট্যান্স আনার সুযোগ-সুবিধা প্রচার জরুরি ভিত্তিতে প্রবাসীদের অভিযোগ নিষ্পত্তি করার ব্যবস্থাসহ ছয়টি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা নীতি বিভাগ।

প্রসঙ্গত, কয়েক বছর থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমছে। হুন্ডি ও অন্যান্য অবৈধভাবে দেশে রেমিট্যান্স আসার কারণে এটি হয়েছে বলে তদন্তে প্রমাণ পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এর আগে হুন্ডির প্রবণতা সরাসরি দেখতে বাংলাদেশ ব্যাংকের দু’টি প্রতিনিধিদল গত মার্চ মাসে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও সৌদি আরব গিয়েছিল। ওই তিন দেশে গিয়েই দলটি দেখেছে, বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ‘বিকাশ’ এর নামে রেমিট্যান্সের অর্থ নেওয়া হচ্ছে। পাঁচ থেকে ১০ মিনিটের মধ্যে বাংলাদেশের বিকাশ হিসাবে ওই টাকা জমা হয়ে যাচ্ছে। কিছু এলাকায় ডাচ-বাংলা মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ‘রকেট’—এর নামেও এ সেবা দেওয়া হচ্ছে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাবে চলতি অর্থ বছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) এক হাজার ১৫৫ কোটি ৪৮ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। গত অর্থবছরে একই সময়ে রেমিট্যান্স আসে এক হাজার ৩৪৬ কোটি ৪৪ লাখ ডলার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে রেমিট্যান্স কমেছে ১৪ দশমিক ১৮ শতাংশ।

আরও পড়ুন
মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে হুন্ডি: ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশ

হুন্ডির কারণেই রেমিটেন্স কমেছে: সংসদে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী


/এমএ/এসএমএ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ব্রাজিলের জার্সিতে এই বছরই শেষ মার্তার
ব্রাজিলের জার্সিতে এই বছরই শেষ মার্তার
৩ মে ঢাকাসহ সারা দেশে বিক্ষোভ ডেকেছে ইসলামী আন্দোলন
৩ মে ঢাকাসহ সারা দেশে বিক্ষোভ ডেকেছে ইসলামী আন্দোলন
ইসলামী ব্যাংকের নোয়াখালী জোনের কর্মকর্তা সম্মেলন
ইসলামী ব্যাংকের নোয়াখালী জোনের কর্মকর্তা সম্মেলন
ওলামা দলের আংশিক কমিটি দিয়েছে বিএনপি
ওলামা দলের আংশিক কমিটি দিয়েছে বিএনপি
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী