X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

আগামী মাসেই কমতে পারে সঞ্চয়পত্রে সুদের হার

গোলাম মওলা
২৪ জুন ২০১৭, ১১:০৯আপডেট : ২৪ জুন ২০১৭, ১১:১৩

সঞ্চয়পত্র কয়েক বছর ধরে ব্যাংকের আমানতে সুদের হার ধারাবাহিকভাবে কমছে। মেয়াদি আমানতে এখন সুদের হার নেমে এসেছে ৫ শতাংশেরও নিচে। এর মধ্যে অর্থমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন, কিছুদিনের মধ্যেই কমবে সঞ্চয়পত্রে সুদের হার। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রও বলছে, আগামী মাস থেকেই মেয়াদি বিভিন্ন সঞ্চয়পত্রে সুদের হার দেড় থেকে দুই শতাংশ পর্যন্ত কমানো হতে পারে। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ নীতিমালাতেও বেশকিছু পরিবর্তন আনা হচ্ছে। পাশাপাশি অবসরে যাওয়া সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশনার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ডাবল ডিজিটে রাখা হলেও এ দফায় তা সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনা হতে পারে। অবশ্য দীর্ঘদিন ধরেই সঞ্চয়পত্রে সুদের হার কমাতে সরকারকে পরামর্শ দিয়ে আসছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
দেশের নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষরা মূলত ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করে থাকে। বিশেষ করে বয়স্ক ও নির্ধারিত আয়ের মানুষ তাদের জমানো অর্থ এসব জায়গায় বিনিয়োগ করে মাসিক খরচের একটি অংশ আয় করে থাকেন। কয়েক বছর ধরে একমাত্র সঞ্চয়পত্র ছাড়া অন্য ক্ষেত্রগুলো থেকে মিলছে না আশানুরূপ মুনাফা।
অন্যদিকে, আমানতে সুদের হার কমে যাওয়ায় ব্যাংকে সঞ্চয়ের আগ্রহ হারাচ্ছে গ্রাহকরা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংক আমানতে সুদের হার বর্তমানে ৫ থেকে ৬ শতাংশ। কিন্তু সঞ্চয়পত্রে সুদের হার এখনও ১১ শতাংশের ওপরে রয়েছে। বর্তমানে পাঁচ বছর মেয়াদি পরিবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১.৫২ শতাংশ, পাঁচ বছর মেয়াদি পেনশনার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১.৬৭ শতাংশ, তিন বছর মেয়াদি ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক মেয়াদি হিসাবের মুনাফার হার ১১.২৮ শতাংশ, পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১.২৮ শতাংশ এবং তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১.০৪ শতাংশ। এ অবস্থায় অনেকে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ব্যাংকগুলোতে টাকা রাখলে মুনাফা এখন অনেক কম পাওয়া যায়। শেয়ার বাজারেও আস্থা নেই। ফলে অনেকে বাধ্য হয়েই ব্যাংক থেকে আমানত তুলে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করছেন।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত চার বছরের ব্যবধানে ব্যাংকের আমানতে সুদের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ৮ শতাংশ। এ কারণে অনেকেই বেশি সুদের আশায় ব্যাংক থেকে টাকা তুলে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করছেন। এর ফলে সরকারকে সঞ্চয়পত্রের সুদ বাবদ ব্যয় করতে হচ্ছে বিপুল পরিমাণ অর্থ। এই ব্যয় কমাতেই সঞ্চয়পত্রে সুদের হার কমানো হচ্ছে। এর আগে ২০১৫ সালের মে মাসে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তখনও সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদের হার দেড় থেকে দুই শতাংশ কমানো হয়েছিল।
এদিকে, অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাই- এপ্রিল) সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি হয়েছে ৪২ হাজার ৯৮ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে এই অর্থবছরে ১৯ হাজার ৬১০ কোটি টাকা ঋণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সরকারের। সরকার আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে টাকা ধার নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে ৩০ হাজার ১৫০ কোটি টাকা।
সরকারের অর্থবিভাগ থেকে বলা হয়েছে, সঞ্চয়পত্র বিক্রির এই গতিধারা অব্যাহত থাকলে অর্থবছর শেষে এ খাত থেকে ঋণের পরিমাণ দ্বিগুণেরও বেশি হতে পারে। এর ফলে সুদ বাবদ সরকারকে অতিরিক্ত অর্থ পরিশোধ করতে হবে, যা স্বল্প ও মধ্য মেয়াদে সরকারের বাজেটের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করবে। অন্যদিকে সরকারের সম্পদ উদ্বৃত্তের পরিমাণ ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে সঞ্চয় প্রকল্পের সুদের হার রিভিউ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।
গত মাসে খোদ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, ‘আমাদের এখানে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার আসলেই বেশি। সাধারণত ব্যাংক আমানতের সুদের হারের চেয়ে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১/২ শতাংশ বেশি হয়ে থাকে। বর্তমানে এই ব্যবধান ৪ শতাংশের বেশি। এটা চলতে থাকলে এ খাতে বিনিয়োগ আরও বেড়ে যাবে। সরকারের ভবিষ্যত ঋণের বোঝা বেড়ে যাবে। সে কারণেই আমরা এই হার পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সমাজের একটি অংশকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্যই সঞ্চয়পত্রের বেশি সুদ দেওয়া হয়ে থাকে। তবে সেটা আমরা বেশি দিতে চাই না। মার্কেট রেটের চেয়ে ১/২ শতাংশ বেশি দিতে চাই। ৪/৫ শতাংশ নয়।’
এভাবে ঘোষণা দিয়ে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোকে নীতি-পরিপন্থী বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ডেপুটি গভর্নর। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সঞ্চয়পত্রে সুদের হার কমানো বা বাড়ানো বিষয়ে জনসম্মুখে অগ্রিম জানানোটা প্রচলিত নীতির পরিপন্থী।’ তিনি বলেন, ‘সুদের হার নিয়ে অর্থমন্ত্রীর অগ্রিম ঘোষণার ফলে সঞ্চয়পত্র কেনার হিড়িক পড়ে গেছে।’
প্রসঙ্গত, পাঁচ বছর মেয়াদি এক লাখ টাকার পরিবার সঞ্চয়পত্র কিনলে মাসে পাওয়া যাচ্ছে ৯১২ টাকা।

আরও পড়ুন-

ঈদে চাঙ্গা অবৈধ হুন্ডি বাজার

/টিআর/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী