X
বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

মশলার পুরোটাই ভারতের!

শফিকুল ইসলাম
২৪ জুন ২০১৭, ২২:১৪আপডেট : ২৫ জুন ২০১৭, ১২:৫৪





মশলার বাজার দেশের মশলার বাজার এখন পুরোটাই দখলে রেখেছে ভারত। তবে ব্যক্তিবিশেষে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চাহিদার একটা অংশ ইন্দোনেশিয়া, গুয়েতেমালা, ব্রাজিল ও ইরান থেকেও আসে। চাহিদা ও আমদানির ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ মশলাই আসে ভারত থেকে। আর ভারত থেকে আসা মশলার বেশিরভাগই আসে চোরাইপথে। অবৈধ পথে আসা ভারতীয় এলাচ ও জিরা দেশীয় বাজার দখল করেছে। বছরে ২ হাজার টন এলাচ এবং ৬ হাজার টন জিরা চোরাই পথে বাংলাদেশে আসে। সে কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে মশলার দর এ ক্ষেত্রে অনেকটাই অপ্রয়োজনীয়। এ তথ্য জানিয়েছেন রাজধানীর চকবাজার ও মৌলভীবাজারের একাধিক ব্যবসায়ী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানান, বৈধপথে আমদানি করে মশলার ব্যবসায় টিকে থাকা যায় না। চোরাইপথে আসা মশলার দাম কিছুটা কম থাকে বলে আমরা ভালো মুনাফা করতে পারি। এ ছাড়া জটিলতাও কম। মশলা দেখে কিনি। তাই মানও ভালো থাকে।


বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ঈদকে ঘিরে ইতিমধ্যে পাইকারি ও খুচরা উভয় বাজারে বেড়েছে মশলার দাম। তবে পাইকারি ও খুচরা বাজারে এর ব্যবধান বিস্তর। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কম থাকায় বাড়তি আমদানি ও মজুদের কারণে গত সপ্তাহেও নিম্নমুখী ছিল মশলার দাম। বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় ঈদে চাহিদা বাড়ে সব ধরনের মশলার।এই চাহিদাকে পুঁজি করে ব্যবসায়ীরা বাড়তি মুনাফা আদায় করছেন ক্রেতার কাছ থেকে। ঈদের বাড়তি চাহিদাকে কেন্দ্র করে অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট বাজারে মশলার সরবরাহ কিছুটা কমিয়ে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে সব ধরনের মশলার দাম বাড়ানোর চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। ফলে ঊর্ধ্বমুখী হয়ে পড়ছে মশলার দাম। ঈদকে হাতিয়ার করে ৯শ’ টাকা কেজি দরে কেনা এলাচ খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৮শ’ টাকা কেজি দরে। একইভাবে ৪শ’ টাকা কেজি দরের জিরা ৮শ’ টাকা, ৫শ’ টাকা কেজি দরের গোলমরিচ ১২শ’ টাকা, ৪ থেকে ৫শ’ টাকা কেজি দরের লবঙ্গ ১ হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর চকবাজার ও মৌলভীবাজার হচ্ছে সকল প্রকার মশলার পাইকারি বাজার। এখানকার ব্যবসায়ীরা বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, রাজস্ব দিয়ে ভারত থেকে আমদানি করা প্রতি কেজি এলাচ বিক্রি করতে হবে ১৫শ’ টাকার বেশি দরে। আর অবৈধ পথে আসা এলাচ ও জিরার বাজারদাম মাত্র ৯শ’ টাকা। ফলে বৈধ পথে আমদানি করা মশলা বিক্রি দিন দিন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সব ধরনের মশলার পর্যাপ্ত মজুদ আছে। দামও কিছুটা সহনীয়। পাইকারি বাজারে কোনও সমস্যা নাই। তবে দাম নিয়ে সমস্যা যদি তৈরি হয় তাহলে সেই সমস্যা খুচরা বাজারে। এ বিষয়টি তো সরকারের পর্যবেক্ষণ করা দরকার।
মৌলবীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ বাজার ঠিকমতো পর্যবেক্ষণ করলে পাইকারি ও খুচরা বাজারের দামে এতো পার্থক্য হতো না। কিন্তু কখনও সরকারি লোকজন মশলার বাজার মনিটরিং করে না। সুযোগ বুঝে খুচরা ব্যবসায়ীরা দ্বিগুনেরও বেশি মুনাফা করছেন।
রাজধানীর শন্তিনগর বাজারের ব্যবসায়ী গোলাম রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, পাইকারি বাজার থেকে আমরা মশলা কিনি কেজি হিসেবে। কিন্তু আমাদের তা ক্রেতার কাছে বিক্রি করতে হচ্ছে ২০০ গ্রাম, ১০০ গ্রাম, ৫০ গ্রাম করে। এতে এক কেজি মশলায় কমপক্ষে ২০০ থেকে ৩০০ গ্রাম ঘাটতি পড়ে। ঘাটতির এই লোকসান মেটাতে হয় কিছুটা দাম বাড়িয়ে। তবে যেভাবে বলা হয় সেভাবে আমরা খুচরা ব্যবসায়ীরা দাম বাড়াই না।
ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা যায় বিগত দু'তিন মাস ধরেই আন্তর্জাতিক বাজারে মশলাজাতীয় পণ্যের দাম নিম্নমুখী। পাশাপাশি দেশেও বাড়তি সরবরাহের কারণে মশলার দাম ছিল অনেকটাই কমতির দিকে। কিন্তু ঈদকে সামনে রেখে সম্প্রতি আমদানি বাড়লেও দাম কমেনি। উল্টো কয়েক দিন থেকে বাড়ছে। দেশে ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার মৌলভীবাজারে গত কয়েকদিনে মশলাজাতীয় পণ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে এলাচ, রসুন ও শুকনা মরিচের। তাছাড়া ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে জিরা, হলুদ, দারচিনি, লবঙ্গ ও বাদামের দামও।
সূত্র জানায়, ইন্দোনেশিয়া, গুয়েতেমালা ও ইরান থেকেও কিছু পরিমাণ মসলা আসে। তাতে বাজারে কোনও প্রভাবই পড়ে না। আমাদের দেশেও এখন কিছু পরিমাণ দারচিনি ও তেজপাতা উৎপাদিত হয়। কিন্ত তা বাজারে আসার মতো না। তা উৎপাদক পর্যায়েই সীমাবদ্ধ। একই সঙ্গে ইন্দোনেশিয়া ও ভারত থেকেও যে পরিমাণ জিরাসহ গরম মশলা আসে তা বাজারে প্রভাব ফেলে না। বাজারে এখন পুরোটাই ভারতীয় মশলা। বিশেষ করে গরম মশলা। রসুন আসে চীন থেকে।
এক সপ্তাহের কম সময়ের ব্যবধানে কেজিতে ১শ' টাকা বেড়ে আমদানি (এলএমজি) করা এলাচ পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৯শ’ টাকা দরে। প্রতি কেজি জিবিসি এলাচ ৯২০ ও জেপিবি এলাচ ১ হাজার ১৪০ থেকে ১ হাজার ১৪৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ এক সপ্তাহ আগেও প্রতি কেজি জিবিসি ৮৬০ ও জেপিবি এলাচ ১ হাজার ৬০ থেকে ১ হাজার ৭০ টাকায় লেনদেন হয়। পাশাপাশি প্রতি কেজিতে ১০-২০ টাকা বেড়ে ভারতীয় জিরা ২৮৫ টাকা, আফগান জিরা ৩১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি কেজি চীনা দারচিনি ৩০৫, ভিয়েতনামের দারচিনি ২৩৫, ভারতীয় লবঙ্গ ৮৫০-৮৬০ ও ব্রাজিলের লবঙ্গ ৯৮০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ এক সপ্তাহ আগেও এসব পণ্য কেজিতে ১০-১৫ টাকা কমে লেনদেন হয়েছিল। কিন্তু এই দামে কিনে তা খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২গুণ থেকে তিনগুণ বেশি দামে।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গোলমরিচের চাহিদা মেটানো হয় মূলত ভিয়েতনাম থেকে। মোট আমদানির ৬১ শতাংশ গোলমরিচ আসে ভিয়েতনাম থেকে। এ ছাড়া ভারত, মাদাগাস্কার, ইন্দোনেশিয়া থাইল্যান্ড থেকেও গোলমরিচ আমদানি করা হয়। গত বছর ৬৯৮ টন গোল মরিচ আমদানি করা হয়েছে বলে ব্যবসায়ী সূত্রে জানা গেছে।
ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, দেশে মশলা আমদানিতে ৬১ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক পরিশোধ করতে হয়—যা ভারতে মাত্র ১০-১৫ শতাংশ। এক বছরে বৈধ পথে দেশে জিরা ও এলাচ আমদানি হয়েছে প্রায় আট হাজার টন। এর বাইরেও ২০ থেকে ২২ হাজার টন জিরা ও এলাচ বাজারে প্রবেশ করছে অবৈধভাবে।
/এসআই/এনআই/টিএন/

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
দুই চিকিৎসকের ওপর হামলার প্রতিবাদে হাসপাতালে কর্মবিরতির ঘোষণা
দুই চিকিৎসকের ওপর হামলার প্রতিবাদে হাসপাতালে কর্মবিরতির ঘোষণা
১৯টি সামরিক সমঝোতা স্মারক সই করেছে বাংলাদেশ, ২৭টি নিয়ে আলোচনা চলছে
১৯টি সামরিক সমঝোতা স্মারক সই করেছে বাংলাদেশ, ২৭টি নিয়ে আলোচনা চলছে
সালাউদ্দিনের ছেলের অভিষেকের দিনে প্রাইম ব্যাংকের বড় জয়
সালাউদ্দিনের ছেলের অভিষেকের দিনে প্রাইম ব্যাংকের বড় জয়
বৈধপথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধপথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
সর্বাধিক পঠিত
এএসপি বললেন ‌‘মদ নয়, রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলাম’
রেস্তোরাঁয় ‘মদ না পেয়ে’ হামলার অভিযোগএএসপি বললেন ‌‘মদ নয়, রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলাম’
মেট্রোরেল চলাচলে আসতে পারে নতুন সূচি
মেট্রোরেল চলাচলে আসতে পারে নতুন সূচি
রাজধানীকে ঝুঁকিমুক্ত করতে নতুন উদ্যোগ রাজউকের
রাজধানীকে ঝুঁকিমুক্ত করতে নতুন উদ্যোগ রাজউকের
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার