X
মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪
৫ চৈত্র ১৪৩০

বিদেশে বিনিয়োগের অনুমতি পেয়েছে সাত প্রতিষ্ঠান

গোলাম মওলা
১৮ জুলাই ২০১৭, ২১:৪০আপডেট : ১৮ জুলাই ২০১৭, ২১:৪০

বাংলাদেশ ব্যাংক দেশে বিনিয়োগের সুযোগ কম, তাই বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা ছুটছেন বিদেশে। ইতোমধ্যে বিদেশে বিনিয়োগে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতিও পেয়েছে সাত প্রতিষ্ঠান।   মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংক আয়োজিত এক কর্মশালায় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক এ এন এম আবুল কাশেম এই তথ্য জানান।

তবে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে যেখানে আরও দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন সেখানে বিনিয়োগ বাইরে চলে যাওয়াকে স্বস্তিকর মনে করছেন না অর্থনীতিবিদরা। তাদের মতে, একদিকে বিভিন্ন কৌশলে হাজার হাজার কোটি টাকা দেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে সরকার বৈধ পথেও বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ দিচ্ছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনিন আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিদেশে বিনিয়োগের পর লাভের অর্থ নিয়ম মেনে যথাযথভাবে দেশে আনা হলে তা দেশের জন্য ভালো হবে। তবে যে বিনিয়োগ বাইরে যাচ্ছে, সেটা দেশেই হলে আরও ভালো হতো। তাতে দেশে কর্মসংস্থান বাড়তো।’ ব্যবসায়ীদের বিদেশমুখী হওয়া ঠেকাতে দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতির উন্নতি করার তাগিদ দেন তিনি।

জানা গেছে, বিদেশে বিনিয়োগকারী দেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে বস্ত্রখাতের শিল্প গ্রুপ দুলাল ব্রাদার্স (ডিবিএল গ্রুপ)। প্রতিষ্ঠানটি আফ্রিকার দেশ ইথিওপিয়ায় তৈরি পোশাক খাতে ৮০ লাখ ডলার বিনিয়োগ করেছে। ওষুধ খাতের প্রতিষ্ঠান স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস কেনিয়ায় ৮০ লাখ ডলার বিনিয়োগ করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক এ এন এম আবুল কাশেম জানান, এর আগে স্কয়ারকে ৫০ লাখ ডলার বিনিয়োগের অনুমোদন দিলেও তখন বিনিয়োগে যেতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি।

পেট্রোলিয়াম খাতের প্রতিষ্ঠান মবিল যুমনা পার্শ্ববর্তী মিয়ানমারে পাঁচ লাখ ১০ হাজার ডলার বিনিয়োগ করেছে। দেশটিতে মবিল যমুনা খুবই সমাদৃত বলে জানান আবুল কাশেম। তিনি বলেন, ‘ওষুধ খাতের আরেক প্রতিষ্ঠান এসিআই ফার্মাসিউটিক্যালসকে প্যাটেন্টের (স্বত্ব) অর্থ পরিশোধের জন্য ৩০ লাখ ডলার পরিশোধের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।’ একে বিনিয়োগ বলা ঠিক হবে না বলেও মন্তব্য করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই নির্বাহী পরিচালক। তিনি বলেন, ‘একই খাতের আরেক প্রতিষ্ঠান ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস যুক্তরাজ্যে দশ হাজার স্টারলিং (১৩ হাজার ডলারের বেশি) বিনিয়োগ করছে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতের প্রতিষ্ঠান স্পেকট্রাম ইঞ্জিনিয়ারিং সিঙ্গাপুরে সাড়ে দশ হাজার সিঙ্গাপুরি ডলার (সাড়ে সাত হাজার মার্কিন ডলার) বিনিয়োগ করছে। একই খাতের আরেক প্রতিষ্ঠান সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ারিং সাড়ে সাত হাজার ডলার বিনিয়োগের অনুমোদন পেয়েছে। লৌহখাতের প্রতিষ্ঠান বিএসআরএমকে ৪৬ লাখ ৭০ হাজার ডলার বিনিয়োগের অনুমোদন দেওয়া হলেও প্রতিষ্ঠানটি এখনও বিনিয়োগে যেতে পারেনি।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের দেওয়া তথ্যমতে, এসিআই এর অর্থপরিশোধ ছাড়া বাকি সাতটি প্রতিষ্ঠান দুই কোটি ১২ লাখ ডলারের বেশি অর্থ বিদেশে বিনিয়োগের অনুমোদন পেয়েছে। বিদেশে বিনিয়োগ করা অর্থ থেকে অর্জিত লভ্যাংশ বাংলাদেশে ফেরত আনা, অর্থপাচার না করাসহ বেশ কিছু শর্ত দিয়ে দেশি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিনিয়োগের অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

২০১৩ সালে প্রথমবারের মতো মবিল যমুনাকে বিদেশে বিনিয়োগের অনুমতি দেওয়া হয়। সেখানে তারা এমজেএল অ্যান্ড এ কে টি পেট্রোলিয়াম নামে একটি কোম্পানি গঠন করে। মবিল যমুনা প্রথম বিনিয়োগের সুযোগ পেলেও এখন পর্যন্ত সবেচেয়ে বড় বিনিয়োগের অনুমতি পেয়েছে তৈরি পোশাক খাতের ডিবিএল গ্রুপ।

২০০৯ সাল থেকে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বিদেশে বিনিয়োগের আবেদন করলেও তা নাকচ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই সময় নিটল-নিলয় গ্রুপ আফ্রিকার উগান্ডায় কৃষিজমি কেনার জন্য সেদেশে অর্থ নেওয়ার অনুমতি চেয়ে সরকারের কাছে আবেদন করলে এ নিয়ে একটি কমিটি করা হয়। শেষ পর্যন্ত নিটল-নিলয় বিনিয়োগের অনুমতি পায়নি। এছাড়া, সিঙ্গাপুরে শিপইয়ার্ড কারখানা স্থাপনের অনুমোদন চেয়ে আবেদন করেছিল সামিট গ্রুপ। বিদেশে আখনির্ভর চিনিকল স্থাপনের জন্য দেশবন্ধু গ্রুপ অর্থ নেওয়ার অনুমতি চেয়েছিল। কম্বোডিয়ায় জমি কিনে শিল্প স্থাপনের অনুমোদন চেয়েছিল মেঘনা গ্রুপ। ভারতে কোম্পানি খোলার জন্য প্রাণ গ্রুপ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে আবেদন করেছিল। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাউকেই অনুমোদন দেয়নি।

সম্প্রতি আকিজ জুটমিলস লিমিটেড মালয়েশিয়ায় রোবিনা রিসোর্সেস (মালয়েশিয়া) এসডিএন বিএইচডি ও রোবিনা ফ্লোরিং এসডিএন বিএইচডি নামের দুটি কোম্পানি অধিগ্রহণ করতে দুই কোটি ডলার (১৬১ কোটি টাকা), হা-মীম গ্রুপ হাইতিতে একটি তৈরি পোশাক কারখানা স্থাপনের জন্য এক কোটি চার লাখ ৪০ হাজার ডলার (৮৪ কোটি টাকা) এবং নিটল-নিলয় গ্রুপ গাম্বিয়ায় গাম্বিয়া কমার্স অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচারাল ব্যাংক লিমিটেড নামের একটি ব্যাংক স্থাপনে ৭০ লাখ ডলারসহ (৫৬ কোটি টাকা) আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বিদেশে বিনিয়োগের আবেদন করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এসব আবেদন অনুমোদন করে মতামতের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।

একই সময়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. ইউনুসুর রহমানের কাছে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন পাঠায় বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বলা হয়, জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের (এসডিজি) জিডিপির কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ন্যূনতম স্থানীয় বিনিয়োগ জিডিপির ৩২ শতাংশ হওয়া প্রয়োজন। তাই এ পর্যায়ে স্থানীয় বিনিয়োগে উৎসাহিত না করে বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া যথাযথ হবে কি না, তা সতর্ক বিবেচনার দাবি রাখে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেন, ‘উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে হলে ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে। এজন্য দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।’ এ বিষয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা আরও বাড়াতে হবে বলে মনে করেন তিনি।

/জিএম/এএম

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
রাজধানীতে মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার ২৩
রাজধানীতে মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার ২৩
কুমিল্লায় ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা, শেখ ইনানকে হত্যার হুমকি
কুমিল্লায় ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা, শেখ ইনানকে হত্যার হুমকি
হলমার্কের এমডি তানভীর ও তার স্ত্রীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
হলমার্কের এমডি তানভীর ও তার স্ত্রীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
পদোন্নতি পেলেন বিএনপির তিন নেতা
পদোন্নতি পেলেন বিএনপির তিন নেতা
সর্বাধিক পঠিত
সুইডেনের রাজকন্যার জন্য দুটি হেলিপ্যাড নির্মাণ, ৫০০ স্থানে থাকবে পুলিশ
সুইডেনের রাজকন্যার জন্য দুটি হেলিপ্যাড নির্মাণ, ৫০০ স্থানে থাকবে পুলিশ
পদ্মার গ্রাহকরা এক্সিম ব্যাংক থেকে আমানত তুলতে পারবেন
একীভূত হলো দুই ব্যাংকপদ্মার গ্রাহকরা এক্সিম ব্যাংক থেকে আমানত তুলতে পারবেন
সঞ্চয়ী হিসাবের অর্ধকোটি টাকা লোপাট করে আত্মগোপনে পোস্ট মাস্টার
সঞ্চয়ী হিসাবের অর্ধকোটি টাকা লোপাট করে আত্মগোপনে পোস্ট মাস্টার
দিন দিন নাবিকদের সঙ্গে কঠোর আচরণ করছে দস্যুরা
দিন দিন নাবিকদের সঙ্গে কঠোর আচরণ করছে দস্যুরা
‘সরলতার প্রতিমা’ খ্যাত গায়ক খালিদ আর নেই
‘সরলতার প্রতিমা’ খ্যাত গায়ক খালিদ আর নেই