X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

রড-সিমেন্ট সরবরাহকারীকে দেওয়া হলো শিশুদের দেখাশোনার দায়িত্ব!

গোলাম মওলা
২৪ জুলাই ২০১৭, ১২:৪৯আপডেট : ২৪ জুলাই ২০১৭, ১৭:১১

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডে-কেয়ার সেন্টার ছায়ানীড়

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডে-কেয়ার সেন্টার পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে একটি নির্মাণ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। কোমলমতি শিশুদের দেখাশোনার দায়িত্ব পাওয়া ‘আবু সিদ্দিক অ্যান্ড সন্স’ মূলত ইট, বালু, রড ও সিমেন্ট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান।   ইতোমধ্যে এই প্রতিষ্ঠানটিকে অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বোর্ড। এ নিয়ে  ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন সেইসব কর্মকর্তা-কর্মচারীরা, যারা ব্যাংক চলাকালীন শিশুদের ডে-কেয়ার সেন্টারে রেখে কাজ করেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নিয়ম অনুযায়ী ডে-কেয়ার সেন্টার পরিচালনায় অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে দরপত্র আহ্বান করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু দরপত্রের শর্তের ব্যত্যয় ঘটিয়ে উল্লিখিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে জালিয়াতির মাধ্যমে কাজ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক মো. মাসুম পাটোয়ারি জানালেন এর কারণ। ডে-কেয়ার পরিচালনার জন্য অভিজ্ঞ কোনও প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা না দেওয়ায় বাধ্য হয়েই তাদের এ সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে বলে বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন তিনি।

তার ভাষ্য, ‘ডে-কেয়ার সেন্টার পরিচালনার জন্য দরপত্র আহ্বান করা হলেও এই ধরনের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি। পাঁচবার দরপত্র আহ্বানের পর আবু সিদ্দিক অ্যান্ড সন্সকে দায়িত্ব দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বোর্ড।’

এদিকে আবু সিদ্দিক অ্যান্ড সন্সের ব্যাপারে খোদ বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোম্পানিটি ডে-কেয়ার সেন্টার পরিচালনার সঙ্গে কখনও জড়িত ছিল না। এছাড়া এ সংক্রান্ত কোনও সার্টিফিকেট দরপত্রের কাগজপত্রের সঙ্গে জমা দেয়নি।

ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আবু সিদ্দিক অ্যান্ড সন্স কাজ পেতে ভুয়া দুটি অভিজ্ঞতার সনদ জমা দিলেও ওই প্রতিষ্ঠানে কোনও ডে-কেয়ার সেন্টার নেই। তারা যে অভিজ্ঞতা সনদ জমা দিয়েছে তা কাকলি হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে নেওয়া। অথচ এই কলেজ থেকে বলা হয়েছে, তাদের কোনও ডে-কেয়ার সেন্টার নেই। কাউকে তারা অভিজ্ঞতার সনদও দেয়নি।

অন্যদিকে দরপত্রে যে লিকুইড অ্যাসেট বা ক্রেডিট ফ্যাসিলিটির কথা বলা হয়েছে তাও প্রতিষ্ঠানটির নেই। একই সঙ্গে দরপত্রের শর্তে যে বার্ষিক টার্নওভারের কথা বলা হয়েছে, সেটিও নেই আবু সিদ্দিক অ্যান্ড সন্সের। এ প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী মো. মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কনস্ট্রাকশন থেকে শুরু করে সব ধরনের কাজ করতে পারি আমরা। সাপ্লাই থেকে শুরু করে টিউবওয়েল বসানো, বাংলাদেশ ব্যাংকের ভবন নির্মাণসহ সবাই করেছি।’

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছে, ডে-কেয়ার সেন্টারের কর্মচারীদের কেমন যোগ্যতা থাকতে হবে সেই বিষয়েও বলা হয়েছে দরপত্রে। বিশেষ শর্তাবলীতে মধ্যে বলা হয়েছে, ডে-কেয়ার সেন্টার পরিচালনার জন্য চার বছরের স্নাতক (সম্মান) যোগ্যতাসম্পন্ন একজন ইনচার্জ বা তত্ত্বাবধায়ক থাকবেন, শিশু পরিচর্যাকারী হিসেবে ন্যূনতম এইচএসসি পাস কর্মচারী থাকবেন একজন।

এছাড়া দারোয়ান বা নিরাপত্তা প্রহরী হিসেবে একজনকে নিয়োজিত থাকতে হবে, যার শিক্ষাগত যোগ্যতা হবে এসএসসি। একইসঙ্গে আয়া বা কুকের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা চাওয়া হয়েছে অষ্টম শ্রেণি পাস। তাদের সবারই তিন বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে বলেও দরপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আবু সিদ্দিক অ্যান্ড সন্সের কাছে এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীও নেই।

জানা গেছে, প্রতি তিন বছর পরপর ডে-কেয়ার সেন্টারটির জন্য দরপত্র আহ্বানের নিয়ম রয়েছে। বর্তমানে ‘সেবা নারী ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র’ এটি পরিচালনার কাজ করছে।তারা পরিচালনার দায়িত্ব পায় ২০০৬ সালে। গত ১১ বছরের মধ্যে প্রতি তিন বছর পরপর প্রতিষ্ঠানটিকে ডে-কেয়ার পরিচালনার চুক্তি নবায়ন করতে হয়েছে।

তবে ২০১৫ সালের পর থেকে সেবা নারী ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের সঙ্গে আর চুক্তি নবায়ন না করে দরপত্র আহ্বান করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত দুই বছরে এ পর্যন্ত পাঁচবার দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এর মধ্যে চারবারই তা বাতিল হয়।

জানা যায়, ১৯৮০ সাল থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংকে ডে-কেয়ার সেন্টারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। ব্যাংকের তৎকালীন কর্মকর্তা নাজনীন সুলতানাসহ কয়েকজন নারী কর্মকর্তা সেসময় মতিঝিলকেন্দ্রিক ব্যাংকগুলোতে কর্মরত ব্যক্তিদের সন্তানদের জন্য একটি ডে-কেয়ার সেন্টার প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করেন। তবে নানা বাধার কারণে তাদের উদ্যোগ তখন সফল হয়নি। এরপর ২০০৬ সালে এই ডে-কেয়ার সেন্টারটি প্রতিষ্ঠা করেন তারা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর নাজনীন সুলতানা জানান, তিনি যখন জিএম তখন ২০০৬ সালে ডে-কেয়ার সেন্টারটি প্রতিষ্ঠা করেন। নাম দেন ‘ছায়ানীড়’। বর্তমানে এই সেন্টারে প্রতিদিন ৭০ থেকে ৮০টি শিশু সেবা পাচ্ছে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ শিশুদের খাবারসহ প্রয়োজনীয় সব সুবিধা দিয়ে থাকে।

অনভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠানকে পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়ায় অভিভাবকদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে বলেও জানান তিনি।

/জেএইচ/ এপিএইচ/

আরও পড়ুন: 
পশ্চিমবঙ্গে কারাগারে থাকা শিশুদের বেশিরভাগই বাংলাদেশি

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ড্রিমলাইনারের কারিগরি বিষয়ে বোয়িংয়ের সঙ্গে কথা বলতে বিমানকে মন্ত্রীর নির্দেশ
ড্রিমলাইনারের কারিগরি বিষয়ে বোয়িংয়ের সঙ্গে কথা বলতে বিমানকে মন্ত্রীর নির্দেশ
চাঁদপুরে লঞ্চে আগুন, হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে আহত ১০
চাঁদপুরে লঞ্চে আগুন, হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে আহত ১০
ঈদযাত্রার সময় দুর্ঘটনায় ৪৩৮ জন নিহত: জরিপ
ঈদযাত্রার সময় দুর্ঘটনায় ৪৩৮ জন নিহত: জরিপ
ট্রাম্পের বিচার চলাকালে আদালতের বাইরে গায়ে আগুন দেওয়া ব্যক্তির মৃত্যু
ট্রাম্পের বিচার চলাকালে আদালতের বাইরে গায়ে আগুন দেওয়া ব্যক্তির মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া