X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রাম বন্দরের জাহাজ জট নিরসনে নতুন কৌশল

শফিকুল ইসলাম
২৩ আগস্ট ২০১৭, ০৭:৫৪আপডেট : ২৩ আগস্ট ২০১৭, ১৬:৩৪

চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ জট (ছবি- অনলাইন থেকে নেওয়া)

চট্টগ্রাম বন্দরে চলছে সীমাহীন জাহাজ জট। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যবাহী জাহাজগুলো এই জট অতিক্রম করে পণ্য খালাস করতে পারছে না। এতে বাড়ছে ভোগান্তি, নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বাজারে। আমদানি করা পণ্য চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমায় প্রবেশ করলেও তা খালাসের সময় নিয়ে খুবই বিব্রত ব্যবসায়ীরা। বিষয়টি নিয়ে বিব্রত সরকারও। এ সংকট কাটাতে এখন নতুন কৌশল নিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

চলতি বছরের মে মাসে বন্দরের বহির্নোঙর থেকে জেটিতে ভিড়তে প্রতিদিন গড়ে অপেক্ষায় ছিল ১০টি জাহাজ। গত বছর প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৮টি জাহাজ বহির্নোঙরে পণ্য নিয়ে অপেক্ষায় ছিল। গত জুন মাসে তা বেড়ে দাঁড়ায় প্রতিদিন ১৬টিতে। জুলাই মাসের ১ থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত প্রতিদিন প্রায় ১৭টি জাহাজ পণ্য নিয়ে বহির্নোঙরে অপেক্ষায় থেকেছে। সাধারণত একটি জাহাজে গড়ে ১ হাজার কনটেইনারে বিভিন্ন ধরনের আমদানি পণ্য থাকে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে প্রতি মাসে গড়ে এক লাখ কনটেইনার (প্রতিটি ২০ ফুট লম্বা) পণ্য আমদানি হয়। প্রতি কনটেইনারে সারচার্জ বা বাড়তি ভাড়ার নামে গড়ে ১০০ ডলার করে আদায় করা হলে মাসে ৮০ কোটি টাকা বাড়তি খরচ হয় ব্যবসায়ীদের।

সম্প্রতি দেশে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে বিদেশ থেকে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। আমদানি করা জাহাজভর্তি চাল দেশের বন্দর সীমানায় পৌঁছালেও তা খালাসের জন্য বন্দরের কাছেও ভিড়তে পারছিল না। এ অবস্থায় সরকারের পক্ষ থেকে বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানকে বিশেষ নির্দেশের মাধ্যমে জটে আটকে থাকা জাহাজ বন্দরে ভিড়িয়ে চাল খালাসের ব্যবস্থা করতে হয়েছিল।

দেশের তৈরি পোশাক খাতে বাংলাদেশের প্রতিযোগী ভিয়েতনাম, চীন, শ্রীলঙ্কা, ভারত কিংবা কম্বোডিয়ার মতো দেশগুলোর বন্দরে জাহাজ জটের সমস্যা নেই। কাঁচামাল আমদানি ও রফতানিতে তাদের তুলনায় দেশীয় উদ্যোক্তারা এখন গড়ে এক থেকে দুই সপ্তাহ পিছিয়ে পড়েছেন। জাহাজ জটের কারণে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে দেশের তৈরি পোশাক খাত।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সমস্যাটি এখন জটিল আকার ধারণ করেছে। জটের কারণে একটি জাহাজ বন্দরে ভিড়তে এবং পণ্য খালাস করতে ১ থেকে ১৭ দিন বেশি সময় লাগছে। এতে বাড়ছে জাহাজ ভাড়া। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি আমরা। সমস্যার সমাধান চেয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্তৃপক্ষকে চিঠি পাঠিয়েছি। কিন্তু কোনও সমাধান হয়নি।’  

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের মে মাস থেকে শুরু হওয়া তীব্র জাহাজ জটের এই সমস্যা আজও নিরসন করতে পারেনি বন্দর কর্তৃপক্ষ ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। এমন অবস্থায় বিষয়টি নিয়ে সরকারের সিনিয়র মন্ত্রীরা বসে যৌথ মিটিংও করেছেন। বের করেছেন নতুন কৌশল।

জানা গেছে, এবার সেই সমস্যা নিরসনে সরকার তথা বন্দর কর্তৃপক্ষ পণ্য পরিবহনে সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রেনবিহীন জাহাজ ব্যবহারের উদ্যোগ নিয়েছে। অপেক্ষাকৃত আধুনিক ও বেশি গভীরতার জাহাজ হওয়ায় ক্রেনবিহীন বা গিয়ারলেস জাহাজগুলোতে বেশি কনটেইনার পরিবহন সম্ভব হয়। এতে খরচও কম এবং জাহাজ পাওয়াটা খুব সহজ। এ কারণে এই রুটে জাহাজগুলো পণ্য পরিবহনে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তাই আপাতত এ ব্যবস্থার মাধ্যমে বন্দরের জট নিরসনে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বহির্নোঙরে ক্রেনবিহীন জাহাজের অপেক্ষার সময় ১০ দিন থেকে ৫ দিনে নেমেছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, গ্যান্ট্রি ক্রেন (জাহাজ থেকে কনটেইনার ওঠানো-নামানোর যন্ত্র) মেরামত না হওয়া পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে।

চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ জট (ছবি- অনলাইন থেকে নেওয়া)

জানা গেছে, বন্দরে জাহাজ জটের মূল কারণ হচ্ছে অবকাঠামো সংকট। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বন্দর দিয়ে ২১ লাখ ৮৯ হাজার কনটেইনার পরিবহন হয়। সদ্য বিগত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৪ লাখ ১৯ হাজারে। যে পরিমাণ কনটেইনার পরিবহন বেড়েছে তার জন্য বছরে অন্তত একটি করে নতুন জেটি দরকার। কিন্তু ২০০৭ সালের পর থেকে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে সমুদ্রগামী কনটেইনারবাহী জাহাজের জন্য জেটি নির্মাণ হয়নি। উল্টো ঈদের আগে দুর্ঘটনায় দুটি গ্যান্ট্রি ক্রেন অচল হয়ে পড়ায় একটি জেটির সুবিধা কমেছে। সমস্যা নিরসনে এখনই নির্মাণকাজ শুরু হলেও নতুন জেটি চালু করতে তিন বছরের বেশি সময় লাগবে বলে জানান বন্দর ব্যবহারকারীরা। এতে তারা সামনে আরও ভয়াবহ জটের আশঙ্কা করছেন।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সমুদ্রপথে কনটেইনার পরিবহনের ৯৮ শতাংশ চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে হয়। এই বন্দরে সমস্যা হলে দেশের অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। চট্টগ্রাম বন্দরের ১২টি জেটি ব্যবহার করে কনটেইনার ওঠানো-নামানো হয়।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যন কমডোর খালেদ ইকবাল বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, ‘সমসাটি অনুধাবন করছি। সমাধানের উপায় খোঁজা হচ্ছে। আমরা একটা সমাধানও পেয়েছি। আশা করছি অতিদ্রুত এ সমস্যা কেটে যাবে। অচিরেই চট্টগ্রাম বন্দরে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসবে।’

এ বিষয়ে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বলেছেন, ‘সমস্যা কেটে যাচ্ছে। সমসা সমাধানে তাৎক্ষণিক উদ্যোগের পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। নতুন জেটিও স্থাপিত হবে।’

/এএম/আপ-এমএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
পার্বত্য এলাকার উন্নয়নে হাজার কোটি টাকার কাজ চলছে: প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল
পার্বত্য এলাকার উন্নয়নে হাজার কোটি টাকার কাজ চলছে: প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল
‘আশ্রয়ণ’: গ্রামীণ বসতি রূপান্তরের প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয়
‘আশ্রয়ণ’: গ্রামীণ বসতি রূপান্তরের প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয়
ছক্কা মেরেও আউট হলেন মুশফিক !
ছক্কা মেরেও আউট হলেন মুশফিক !
ট্রেনের ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে কুড়িগ্রামে মানববন্ধন
ট্রেনের ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে কুড়িগ্রামে মানববন্ধন
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা