X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গারা দেশের অর্থনীতিতে সংকট তৈরি করবে

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৭:০৯আপডেট : ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৭:০৮

 

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনোমিক মডেলিং-এর সেমিনার মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা দীর্ঘ মেয়াদে দেশের অর্থনীতিতে সংকট তৈরি করবে বলে মনে করে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনোমিক মডেলিং (সানেম)। প্রতিষ্ঠানটির মতে, রোহিঙ্গা ইস্যুতে দুই দেশের সম্পর্কের অবনতির জেরে কোনও কারণে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে, তখন সামরিক ব্যয় বেড়ে উন্নয়ন বাজেটের বরাদ্দ কমতে পারে। বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই পর্যালোচনা তুলে ধরা হয়।

সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, ‘গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) সঙ্গে আমরা একমত যে, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের পেছনে বছরে ৪ হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ হবে। এই খরচ কে দেবে? এখন হয়তো বিশ্বের অনেক দেশই এগিয়ে আসছে। তবে দীর্ঘ মেয়াদে এই সংকট নিরসন না হলে হয়তো বাংলাদেশকেই ব্যয়ভার বহন করতে হবে।’ 

ইতোমধ্যেই রোহিঙ্গাদের  কারণে পর্যটনশিল্পে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে অভিযোগ করে ড. সেলিম রায়হান বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের কারণে এই খাতটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আসছে পর্যটন মৌসুমে তা স্পষ্ট হবে। অতিরিক্ত রোহিঙ্গার কারণে নিরাপত্তার সংকট তৈরি হলে ওই জোনে (চট্টগ্রাম, কক্সবাজার) কোনও বিদেশি বিনিয়োগ আসবে না।’ তিনি বলেন, ‘সরকার চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে যে ইকোনোমিক হাব গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখছে, তাতে বাধা তৈরি করতে পারে এই নিরাপত্তা সংকট। অন্যদিকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে বাণিজ্য বাড়ানোর একমাত্র পথ মিয়ানমার। রোহিঙ্গা ইস্যুতে দুই দেশের সম্পর্কের অবনতির জেরে এই সম্ভাবনাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এছাড়া কোনও কারণে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে তখন সামরিক ব্যয় বেড়ে উন্নয়ন বাজেটের বরাদ্দ কমতে পারে।’ এসব আশঙ্কার কথা চিন্তা করেই এখন থেকে রোহিঙ্গাদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট চিন্তা-ভাবনার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘এক্ষেত্রে প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে ত্রাণ ব্যবস্থায় সমন্বয় আনতে হবে।’

সানেমের সদস্য ড. ফরাজী বিনতে ফেরদৌস বলেন, ‘খাত বেঁধে ত্রাণ কার্যক্রম ভাগ করে দেওয়া উচিত। কেউ স্বাস্থ্য খাতের জন্য ত্রাণ দেবে, কেউ পোশাক দেবে, কেউ খাবার দেবে, এভাবে সমন্বয় করলে সুফল পাওয়া যাবে।’

খোলাবাজারে ৩০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির সমালোচনা করে ড. সেলিম রায়হান বলেন, ‘এই দর কেন দ্বিগুণ হয়ে গেল, তা বুঝতে পারছি না। এর আগে যখন খোলাবাজারে চাল বিক্রি করেছিল খাদ্য অধিদফতর, তখন কেজি প্রতি দর ছিল ১০ টাকা, পরে তা ১৫ টাকা করা হয়। এবারে এটি একলাফে ৩০ টাকা করায় দরিদ্ররা এই কার্যক্রমের সুবিধা পাবে না। তাই খোলাবাজারে চালের দর কেজি প্রতি ২০ টাকা করা উচিত।’

দেশে বিনিয়োগ বাড়াতে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রশংসা করলেও এখন পর্যন্ত এই উদ্যোগ আলোর মুখ দেখেনি বলে মনে করে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি। সেমিনারে বক্তারা বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করার কথা থাকলেও এখনপর্যন্ত ৭৯টির বিষয়ে কাজ চলছে। এরমধ্যে মাত্র ৪টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ হয়েছে ৭৫ শতাংশ, আরও ৪টির কাজ হয়েছে ৬৮.৭৫ শতাংশ। ঘোষিত ৩৯টি অর্থনৈতিক অঞ্চলে এখনও কোনও কাজ না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছে সানেম।

চলতি অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, শুরুতেই ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করতে না পারায় হোঁচট খেয়েছে সরকার। এই আইন বাস্তবায়ন হলে যে ২০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব বাড়তো, সেই অর্থ এখন কিভাবে আসবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। সানেমের মতে, ভ্যাট আইন বাস্তবায়নে সরকারের শক্তিশালী রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব ছিল। রোহিঙ্গা সংকট, চাল সংকট, কর্মসংস্থান না বাড়া, ব্যাংকিং খাতের অনিয়ম দুর্নীতি সব মিলিয়ে এবারে বাজেট বাস্তবায়ন কঠিন হবে।

 আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা ইস্যু: নেতিবাচক প্রভাব পড়বে দেশের অর্থনীতিতে

/জিএম/এমএনএইচ/
সম্পর্কিত
উখিয়া ক্যাম্পে রোহিঙ্গা যুবককে কুপিয়ে হত্যা
কক্সবাজার জেলার রোহিঙ্গা ভোটারদের তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট
মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি
সর্বশেষ খবর
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী