X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিনিয়োগে আগ্রহ নেই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর

শফিকুল ইসলাম
০৬ অক্টোবর ২০১৭, ২২:১৭আপডেট : ০৭ অক্টোবর ২০১৭, ০৫:৩৭

 

বিনিয়োগে আগ্রহ নেই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও অবকাঠামো সমস্যার কারণে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না বেসরকারি উদ্যোক্তারা। ২০১৫ সালের মার্চের পর দেশে রাজনৈতিক পরিবেশ স্বাভাবিক হলেও বিনিয়োগে কাঙ্ক্ষিত গতি আসতে দেখা যায়নি। বেসরকারি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বার বার প্রতিশ্রুতি দিলেও শেষপর্যন্ত বিনিয়োগে আসছে না। এ কারণে দেশে কর্মসংস্থানের হারও বাড়ছে না। কমছে সরকারের রাজস্ব আয়ও। দেশের বিনিয়োগ খাতের পরিস্থিতি যখন এমন, তখন বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ভবিষ্যতে বাংলাদেশে বিনিয়োগ আরও বাড়াবে, এই প্রতিশ্রুতির মধ্য দিয়ে ঢাকায় চলছে ‘বিনিয়োগ সপ্তাহ-২০১৭’। শেষ হবে ৮ অক্টোবর। চলমান বিনিযোগ সপ্তাহেও কোনও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগে আসছে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।  

বিনিয়োগ বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালে বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ১৫২ কোটি ডলার। আগের বছর এর ছিল ১৫৯ কোটি ডলার। গত ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে দেশীয় বেসরকারি বিনিয়োগ প্রস্তাব নিবন্ধনের পরিমাণ এক হাজার ৭২ কোটি ডলার, এর আগের অর্থবছরে ছিল ৬৩৯ কোটি ডলার। এত অল্প পরিমাণ বিনিয়োগের ওপর ভর করে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে পারবে না। সে জন্য বিদেশি ও বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে দুই দিনের বাংলাদেশ বিনিয়োগ সামিটের এই উদ্যোগ নেয় বিনিয়োগ বোর্ড।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, গত ৮ বছর ধরে এ খাতে বিনিয়োগের চাকা আটকে আছে একই জায়গায়। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব নেওয়ার সময় দেশে বেসরকারি বিনিয়োগ ছিল মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২১ দশমিক ৮৭ শতাংশ। বর্তমানে সেই বিনিয়োগ মাত্র দশমিক ২৭ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ২২ দশমিক ০৭ শতাংশ। ২০০৮-০৯ সালে জিডিপির অনুপাতে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ ২১ দশমিক ৮৭ শতাংশ, ২০০৯-১০ সালে ২১ দশমিক ৫৬ শতাংশ, ২০১০-১১ সালে ২২ দশমিক ১৪ শতাংশ, ২০১১-১২ সালে ২২ দশমিক ৫০ শতাংশ, ২০১২-১৩ সালে ২১ দশমিক ৭৫, ২০১৩-১৪ সালে ২২ দশমিক ০৩ এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে জিডিপির ২২ দশমিক ০৭ শতাংশ বিনিয়োগ হয়েছে।

তবে ‘বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০১৭’তে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিভাগের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রকৃত বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বেড়েছে ধারাবাহিকভাবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ সালে ৯১৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০১১ সালে ১ হাজার ২৩৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০১২ সালে ১ হাজার ২৯৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০১৩ সালে ১ হাজার ৫৯৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০১৪ সালে ১ হাজার ৫২৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০১৫ সালে ২ হাজার ২৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ও ২০১৬ সালে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৩৩২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে।

এদিকে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সূত্র মতে, ১৬-১৭ অর্থ বছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি স্থানীয় বিনিয়োগে প্রস্তাব করা হয়েছে, সেগুলো হলো–টেনারি অ্যান্ড লেদার ১.৭৪, কেমিক্যাল শিল্প ২৪.২৯, গ্লাস অ্যান্ড সিরামিক ১.০১ শতাংশ, ইঞ্জিনিয়ারিং ১৬.২১, সার্ভিস শিল্প ১৫.৬১, প্রিন্ট অ্যান্ড পাবলিশিং ৩.১৪, টেক্সটাইল ১৩.১৯, ফুড অ্যান্ড এলাইড ৪.০৭ ও কৃষিভিত্তিক শিল্প ৭.২০, বিবিধি ১১.৪২ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত ৮ বছর ধরে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ না বাড়লেও সরকারি খাতে বিনিয়োগ বেড়েছে ৩ শতাংশেরও বেশি। গত কয়েক বছর ধরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকারও বেড়েছে। ফলে ২০০৮-০৯ সময়ে জিডিপিতে সরকারি বিনিয়োগ ছিল ৪ দশমিক ৩১ শতাংশ, আর এখন সেটি হয়েছে প্রায় ৭ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই থেকে ডিসেম্বর) দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন অন্বেষণের গবেষণা বলছে, দেশে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ স্থবির। রাজস্ব আয়ও কমে গেছে। বৈদেশিক সহায়তায়ও নেই কোনও সুখবর। উল্টো বিদেশে পাচার হচ্ছে টাকা। এর অর্থ হলো দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকগুলো নেতিবাচক। সংস্থাটির মতে, চলতি অর্থবছরে ব্যক্তি বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা ছিল জিডিপির ২৪ শতাংশ। আর সরকারি খাতে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ।

বেসরকারি বিনিয়োগ না বাড়ার কারণে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হারও ৬ শতাংশের ঘরে আটকে আছে। স্বাধীনতার পর প্রতি দশকে বাংলাদেশে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ১ শতাংশ হারে বাড়লেও বিনিয়োগ স্থবিরতায় গত ১২ বছর ধরে দেশের গড় প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের ঘরেই। অবশ্য ২০০৬-২০০৭ অর্থ বছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ হয়েছিল। কিন্তু ২০০৮-২০০৯ এবং ২০০৯-২০১০ অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশের ঘরে নেমে গিয়েছিল। আর সরকারের ৭ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা অনুযায়ী চলতি অর্থবছর (২০১৭-১৮)  জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ।

আর বিনিয়োগ না হওয়ায় এ খাতে নতুন কর্মসংস্থানও কমে আসছে আশঙ্কাজনক হারে। শুধু তাই নয়, বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহও সন্তোষজনক অবস্থায় নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ১৬ শতাংশের বেশি ঋণ প্রবাহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও সেটি অর্জিত হচ্ছে না।

এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিনিয়োগ বাড়াতে যে সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে, তাতেও সুফল পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। কারণ, যে দেশের বিনিয়োগকারীরা নিজের দেশে বিনিয়োগ করেন না,  সে দেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও বিনিয়োগ করতে আসেন না। এক্ষেত্রে যত সামিট করা হোক না কেন, যত প্রণোদনাই দেওয়া হোক না কেন কাজ হবে না। কারণ বিনিয়োগের জন্য সবার আগে অনুকূল পরিবেশ জরুরি। অবকাঠামো উন্নয়ন এখনও তেমন হয়নি। গ্যাসের সমস্যাও রয়েছে। বড় দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে এখনও কোনও সমঝোতা হয়নি।’

জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সরকারি বিনিয়োগমূল্যের দিক থেকে বাড়লেও গুণগত মানের দিক থেকে কমছে। এর ফলে বেসরকারি খাত বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছে না।’

/এমএনএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ছাদে আম পাড়তে গিয়ে নিচে পড়ে শিশুর মৃত্যু
ছাদে আম পাড়তে গিয়ে নিচে পড়ে শিশুর মৃত্যু
বেয়ারস্টো-শশাঙ্কে হেসেখেলে ২৬২ রান করে জিতলো পাঞ্জাব
বেয়ারস্টো-শশাঙ্কে হেসেখেলে ২৬২ রান করে জিতলো পাঞ্জাব
ফরিদপুরে দুই শ্রমিক হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার দাবিতে খেলাফত মজলিসের মিছিল
ফরিদপুরে দুই শ্রমিক হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার দাবিতে খেলাফত মজলিসের মিছিল
মশা তাড়ানোর ৫ প্রাকৃতিক উপায়
মশা তাড়ানোর ৫ প্রাকৃতিক উপায়
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!