X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাংকমুখী হচ্ছেন উদ্যোক্তারা

গোলাম মওলা
০৮ অক্টোবর ২০১৭, ১০:১২আপডেট : ০৮ অক্টোবর ২০১৭, ২০:৫৭

ব্যাংক

ব্যাংকমুখী হতে শুরু করেছেন বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা। এ কারণে গত তিন মাস রেকর্ড পরিমাণ ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো। এর ফলে ব্যাংকিং খাতে ঋণের চাহিদা বেড়েছে। একইসঙ্গে, বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া লক্ষ্যমাত্রাও ছাড়িয়ে গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

চলতি বছরের ডিসেম্বর নাগাদ বেসরকারি খাতে ১৬ দশমিক ২০ শতাংশ ঋণের প্রবৃদ্ধি বেঁধে দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু ৫ মাস আগেই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ করেছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় মাসে (আগস্ট) বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৭ দশমিক ৮৪ শতাংশ।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক ড. জায়েদ বখত বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ব্রিজ `পদ্মা সেতু প্রকল্প’ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা এনে দিয়েছে। এছাড়া আরও কয়েকটি বড় প্রকল্পের কাজ শুরু হতে যাচ্ছে। যা শিল্পায়নে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। যার প্রমাণ দেখা যাচ্ছে ব্যাংকের ঋণ বিতরণের মধ্য দিয়ে।’ তিনি উল্লেখ করেন, ‘এখন দেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এক ধরনের আবহ সৃষ্টি হয়েছে। অনেক দিন ধরে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। আবার সুদের হারও অনেক কমেছে। ফলে দেশি উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে বেশ তৎপরতা দেখাচ্ছেন।’

গত পাঁচ বছরের মধ্যে এটিই বেসরকারি খাতে ঋণের সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে (জুলাই) বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ। আর গত অর্থবছর শেষে অর্থাৎ জুনে ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৫ দশমিক ৯৭ শতাংশ।

এক বছরের ব্যবধানে বেসরকারি খাতে ঋণ বেড়েছে এক লাখ ১৯ হাজার ৮৮৩ কোটি টাকা। গত আগস্ট শেষে বেসরকারি খাতে মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৯১ হাজার ৮০৭ কোটি টাকা। ২০১৬ সালের আগস্ট শেষে মোট ঋণ ছিল ৬ লাখ ৭১ হাজার ৯২৪ কোটি টাকা। যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ দশমিক ৮৪ শতাংশ বেশি।

এ প্রসঙ্গে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহম্মদ শামস-উল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দেশে বিনিয়োগ পরিবেশ স্বাভাবিক থাকায় উদ্যোক্তারা ব্যাংকমুখী হয়েছেন। পাশাপাশি ব্যাংকগুলোর কাছে বিনিয়োগযোগ্য তহবিলও রয়েছে। ব্যাংকঋণে সুদের হারও এখন অনেক কম। এছাড়া সরকার বিনিয়েগের জন্য বিভিন্ন অবকাঠামো তৈরি করছে। আবার গ্যাস, বিদ্যুতের যে সমস্যা ছিল, তাও দূর হচ্ছে।’ তিনি উল্লেখ করেন, ‘ঋণের টাকা যে বিনিয়োগে যাচ্ছে, তার পেছনে যুক্তি হলো, সম্প্রতি এলসি খোলার হারও বেড়েছে।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইতে মূলধনী যন্ত্রপাতি (ক্যাপিটাল মেশিনারি) আমদানির জন্য ৪৪ কোটি ৩৯ লাখ ডলারের এলসি (ঋণপত্র) খোলা হয়েছে। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬৯ শতাংশ বেশি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জুলাই মাসে ২৬ কোটি ২৯ লাখ ডলারের এলসি খোলা হয়েছিল।

জানা গেছে, গত কয়েক বছর তৈরি পোশাক ছাড়াও বিদ্যুৎ, সিমেন্ট ও ওষুধ শিল্পের সম্প্রসারণে উদ্যোক্তারা ঋণ নিচ্ছেন। এসব খাতের মূলধনী যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানিতে ঋণ চাহিদা বেড়েছে। একইসঙ্গে বিনা মার্জিনে চাল আমদানির সুযোগ দেওয়ায় সম্প্রতি অনেক ব্যবসায়ী ব্যাংকের অর্থে চাল আমদানির জন্য এলসি খুলেছেন। এর সঙ্গে খাদ্যপণ্য গম, ভোজ্যতেল, চিনি, পেঁয়াজ আমদানিতেও অর্থায়ন করেছে ব্যাংকগুলো। এছাড়া সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য প্রয়োজনীয় মালপত্র আমদানিতেও ঋণ চাহিদা বেড়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালের শুরুতে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বেসরকারি ঋণপ্রবাহে ভাটা পড়েছিল, যা পরের বছরেও প্রলম্বিত হওয়ায় ঋণপ্রবাহে মন্দাভাব দেখা দেয়। ২০১৩-১৪ অর্থবছর বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবৃদ্ধি হয় ১০ দশমিক ৮৫ শতাংশ হয়। পরের দুই অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হয় ১২ দশমিক ২৭ শতাংশ। ২০১৫ সালের শুরুতে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি কমে ১৩ শতাংশে নেমে আসে। ২০১৫ সালের জুনে দাঁড়ায় ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশে। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে এসে বেসরকারি খাতে ব্যাংক ঋণের প্রবৃদ্ধি দাঁড়ায় ১৪ দশমিক ১৯ শতাংশে। ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে ছিল ১৪ দশমিক ৮২ শতাংশ এবং ফেব্রুয়ারিতে ছিল ১৫ দশমিক ১১ শতাংশ। আর মার্চ শেষে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহের প্রবৃদ্ধি দাঁড়ায় ১৫ দশমিক ১৬ শতাংশে।

এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ’র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দেশে বিনিয়োগ পরিবেশ আরও পরিচ্ছন্ন হওয়া জরুরি। বিনিয়োগকারীরা যেন হয়রানির শিকার না হন, সে ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে। তাহলে উদ্যোক্তারা নতুন নতুন শিল্প কারখানা গড়ে তুলতে পারবেন। তাতে কর্মসংস্থানও বাড়বে।’

জানতে চাইলে রফতানিকারক সমিতির সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি আরও হওয়া দরকার। কারণ, সাড়ে তিন থেকে চার বছর ধরে বাংলাদেশে বিনিয়োগ স্থবিরতা বিরাজ করছিল। এখন অনেকেই বিনিয়োগ করতে চাচ্ছে। এখনও বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও অবকাঠামো খাতের সমস্যা রয়েছে, এসব সমস্যার সমাধান করা জরুরি।'

 

/এমএনএইচ/আপ-এসটি
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখলে আমাদের লজ্জা হয়: শাহবাজ
বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখলে আমাদের লজ্জা হয়: শাহবাজ
৬ ম্যাচ পর জয় দেখলো বেঙ্গালুরু 
৬ ম্যাচ পর জয় দেখলো বেঙ্গালুরু 
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
‘নীরব এলাকা’, তবু হর্নের শব্দে টেকা দায়
‘নীরব এলাকা’, তবু হর্নের শব্দে টেকা দায়
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা