X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাড়ছে আমদানির চাপ

গোলাম মওলা
১৫ অক্টোবর ২০১৭, ১০:২০আপডেট : ১৫ অক্টোবর ২০১৭, ১০:২৫

বাড়ছে আমদানির চাপ দেশে রফতানি আয় কাঙ্ক্ষিত হারে না বাড়লেও আমদানি-ব্যয় ঠিকই বাড়ছে। এর ফলে আমদানির চাপ সামলাতে গিয়ে ব্যাংকগুলোর হাতে থাকা ডলার সব ফুরিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিদিনই ডলার বিক্রি করছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।  

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক মাস ধরে আমদানি ব্যয় বাড়ছে, অথচ কমেছে রফতানি আয়। গত অর্থবছরে আমদানিতে ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও রফতানি বেড়েছে মাত্র ১ দশমিক ৭২ শতাংশ। একইভাবে গত অর্থবছরে রেমিট্যান্স কমেছে ১৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এই ধারা এখনও অব্যাহত রয়েছে। গত আগস্ট মাসে আমদানি ব্যয় বেড়েছে আগের বছরের আগস্টের তুলনায় ২৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ। আবার সেপ্টেম্বরে রফতানি আয় কমেছে আগের বছরের সেপ্টেম্বরের তুলনায় ৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ। এমন অবস্থায় চলতি মাসের ১২ অক্টোবর পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে প্রায় ১ শ মিলিয়ন ডলার বিক্রি করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। 

এ প্রসঙ্গে অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক ড. জায়েদ বখত বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যদি মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি বাড়ে তাহলে, সেটা অর্থনীতির জন্য অনেক ভালো খবর।’ তিনি বলেন, ‘বিনিয়োগকারীরা হয়তো এখন বিনিয়োগে মনযোগ দিচ্ছে, পদ্মা সেতু প্রকল্পসহ বড় বড় প্রকল্প বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা এনে দিয়েছে। যা শিল্পায়নে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।’ তিনি উল্লেখ করেন, ‘বিনিয়োগকারীদের চাহিদা বাড়ার কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার বিক্রি করছে। ’

জানা গেছে, বন্যাসহ বিভিম্ন কারণে সম্প্রতি চাল আমদানির বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে বিনা মার্জিনে চাল আমদানির সুযোগ দেওয়ায় অনেক ব্যবসায়ী চাল আমদানির জন্য এলসি খুলেছেন। এর সঙ্গে খাদ্যপণ্য গম, ভোজ্যতেল, চিনি, পেঁয়াজ আমদানিও চাপ রয়েছে। এছাড়া সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য প্রয়োজনীয় মালপত্র আমদানিতেও ঋণ চাহিদা বেড়েছে। এছাড়া তৈরি পোশাক,  বিদ্যুৎ, সিমেন্ট ও ওষুধ শিল্পের জন্য মূলধনী যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানির চাহিদা বেড়েছে। এ অবস্থায় আমদানি খরচ মেটাতে বৈদেশিক মুদ্রা টানটানিতে পড়েছে অনেক ব্যাংক।

গত তিন মাসে প্রতি ডলারের দর বেড়েছে ২০ পয়সা। এখন আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার ৮০ টাকা ৮০ পয়সায় উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে দাম নিয়ন্ত্রণ ও বাড়তি চাপ সামলাতে ডলার কেনা থেকে সরে এসেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। 

চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে বিভিন্ন পণ্য আমদানি জন্য এক হাজার ১২৬ কোটি ডলারের এলসি (ঋণপত্র) খোলা হয়েছে। যা আগের অর্থবছরের প্রথম দুই মাসের তুলনায় ৫৪ দশমিক ১৬ শতাংশ বেশি। এ সময়ে এলসি খোলা বেশি বেড়েছে চাল, গম ও মূলধনী যন্ত্রপাতির। জুলাইতে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য ৪৪ কোটি ৩৯ লাখ ডলারের এলসি খোলা হয়েছে। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬৯ শতাংশ বেশি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জুলাই মাসে ২৬ কোটি ২৯ লাখ ডলারের এলসি খোলা হয়েছিল। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর মাসে মাত্র ৮৫ কোটি ৩৭ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। মাস হিসাবে বিগত সাড়ে পাঁচ বছরের মধ্যে এটি সর্বনিম্ন।

এদিকে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর মাসে পণ্য রফতানি থেকে বাংলাদেশ ২০৩ কোটি ৪১ লাখ ডলার আয় করেছে। এই অঙ্ক গত বছরের সেপ্টেম্বরের চেয়ে ৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ কম। অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বলা হয়েছে, আমদানির বাড়তি চাহিদার কারণে ব্যাংকগুলোতে ডলারের চাহিদা বাড়লেও দেশে বৈদেশিক মুদ্রার কোনও সংকট নেই।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ রয়েছে প্রায় ৩৩ বিলিয়ন ডলার। এ পরিমাণ অর্থ দিয়ে আট মাসের আমদানি দায় মেটানো সম্ভব।’ তিনি বলেন, ‘গত কয়েক বছর ধরেই আমদানির চেয়ে রফতানি প্রবৃদ্ধি বেশি হচ্ছে। তবু এটাকে আমরা ভয়ের কিছু দেখছি না। আর যদি মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি বাড়ে তাহলে অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক হবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বাজার থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনও ডলারও কেনেনি। ১ জুলাই থেকে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ২০ কোটি  ডলারের বেশি বিক্রি করতে হয়েছে। গত অর্থবছর বাজারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংক থেকে কিনেছিল ১৯৩ কোটি ১০ লাখ ডলার। অবশ্য গত অর্থবছরে ১৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার বিক্রিও করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে ১৬ কোটি ৭০ লাখ ডলার বিক্রি করা হয় চলতি বছরের জানুয়ারি-জুন সময়ে। 

গত বছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কিনেছিল ১৮৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার। এর আগে ২০১৫-১৬ অর্থবছর বাজার থেকে ৪১৩ কোটি ১০ লাখ ডলার কিনলেও এক ডলারও বিক্রি করেনি। একইভাবে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার থেকে ৩৭৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার কিনেছিল। অবশ্য তখন বিক্রি করেছিল ৩৫ কোটি ৭০ ডলার। আর ২০১৩-১৪ অর্থবছর বাজার থেকে ৫১৫ কোটি ডলার কিনলেও কোনও ডলার বিক্রি করতে হয়নি।

প্রসঙ্গত, কোনও ব্যাংক চাইলেই যেমন খুশি তেমন বৈদেশিক মুদ্রা ধারণ করতে পারে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া সীমা মেনে বৈদেশিক মুদ্রা ধারণ করতে হয় ব্যাংকগুলোকে। সীমার অতিরিক্ত ডলার থাকলে তা অন্য ব্যাংক বা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে বিক্রি করতে হয়। 

 

/এমএনএইচ/আপ-এসটি
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
কান উৎসব ২০২৪জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
ড্যান্ডি সেবন থেকে পথশিশুদের বাঁচাবে কারা?
ড্যান্ডি সেবন থেকে পথশিশুদের বাঁচাবে কারা?
লখনউর কাছে হারলো চেন্নাই
লখনউর কাছে হারলো চেন্নাই
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া