X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

রিজার্ভ চুরির অর্থ ফেরত আনতে বাংলাদেশকে সহায়তা করছে চার আন্তর্জাতিক সংস্থা

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২২ অক্টোবর ২০১৭, ২১:০০আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০১৭, ২১:১১

বাংলাদেশ ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ উদ্ধারে বাংলাদেশকে সহায়তা করছে চারটি আন্তর্জাতিক সংস্থা— বিশ্বব্যাংক, এপিজি, এগমন্ট গ্রুপ ও ইন্টারপোল। রবিবার (২২ অক্টোবর) বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এই তথ্য জানানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়াতেই এই চারটি সংস্থাসহ বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক, বাংলাদেশ ব্যাংক ও সুইফটের মধ্যে অনুষ্ঠিত এক সভার সূত্রে একটি ত্রিপক্ষীয় স্টেটমেন্ট জারি করা হয়েছে। এতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে চুরি হয়ে যাওয়া অর্থ উদ্ধার করা এবং দোষীদের শাস্তির আওতায় আনার অঙ্গীকার করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, ফিলিপাইন, চীন, শ্রীলঙ্কাসহ বাংলাদেশে সাইবার হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে অর্থপাচারের সঙ্গে বিভিন্ন পক্ষের জড়িত থাকার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর বিভিন্ন সংস্থার তদন্তাধীন রয়েছে। এক্ষেত্রে আন্তঃদেশীয় সংঘবদ্ধ অপরাধের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ও বাংলাদেশে তদন্ত কার্যক্রম শেষ হলেই কেবল অপরাধীদের শনাক্ত করাসহ সব তথ্য যথাসময়ে প্রকাশযোগ্য হবে।
গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকটি উল্লেখ করেছে, ফিলিপাইনের আদালতে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে অর্থপাচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে সাত জনের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করেছে ফিলিপাইনের বিচার বিভাগ। বিভিন্ন পক্ষের তদন্ত ও ১৪.৫৪ মিলিয়ন ডলার ফেরত দেওয়ার জন্য ফিলিপাইনের আদালত আদেশ দিয়েছে। এর ফলে সাইবার হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ পাচারের বিষয়টিও নিশ্চিত হওয়া গেছে।
ফিলিপাইনের সিনেট অধিবেশনে আরসিবিসি ব্যাংকের তৎকালীন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, যদি আরসিবিসি ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির কেসে কোনোভাবে দায়ী হয়, তাহলে আরসিবিসি ব্যাংক ক্ষতিপূরণ দেবে। এরই মধ্যে ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির সঙ্গে জড়িত হিসাবগুলোর লেনদেনে বিভিন্ন গুরুতর অনিয়ম পাওয়ায় আরসিবিসি ব্যাংকের বিরুদ্ধে ফিলিপাইনের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পরিমাণ জরিমানা (১ বিলিয়ন পেসো বা আনুমানিক ২১ মিলিয়ন ইউএস ডলার) করেছে। এ থেকে আরসিবিসি ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় জড়িত থাকা ও গুরুতর অনিয়ম বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের দাবিকে আরও সুস্পষ্ট করে।
বাংলাদেশ ব্যাংক উল্লেখ করেছে, গত ৩ আগস্ট মার্কিন গণমাধ্যম ব্লুমবার্গে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, চীনের পুলিশ বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির সঙ্গে জড়িত মূল দুই জন সন্দেহভাজন ডিং হিজি ও গাও সুহুএকে গ্রেফতার করেছে। এ বিষয়ে চীনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ ব্যাংক আরও বলেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ চুরির বিষয়টি আন্তর্জাতিক সংঘবদ্ধ চক্রের অপরাধ হিসেবে প্রাথমিকভাবে বিভিন্ন পক্ষের তদন্তে উঠে এসেছে এবং এ অপরাধের সঙ্গে তাদের অপরাধ প্রমাণে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে সাইবার হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে পাচার হওয়া ৮১ মিলিয়ন ইউএস ডলারের মধ্যে ৪.৬৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ৪৮৮.২৮ মিলিয়ন ফিলিপিনো পেসো (মোট ১৪.৫৪ মিলিয়ন ডলার) ফিলিপাইন আদালতের আদেশের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংককে গত বছরের ১০ নভেম্বর ফেরত দিয়েছে। এর আগে, ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসেই ফিলিপাইনের রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশন (আরসিবিসি) বাংলাদেশ ব্যাংককে ০.০৭ মিলিয়ন ডলার ফেরত দেয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, সাইবার হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে পাচার হওয়া অর্থের অবশিষ্ট ৬৬.৪ মিলিয়ন ডলার আইনি প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট আদালতের আদেশের মাধ্যমে উদ্ধারের পর যে পরিমাণ অর্থ অনাদায়ী থাকবে, তা আরসিবিসি ব্যাংকের কাছ থেকে আদায় করতে আইনি উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে চুরি হওয়া অর্থের অবশিষ্ট অংশ দ্রুত উদ্ধার করে ফিরিয়ে আানতে বিভিন্ন আইনি কার্যক্রম বর্তমানে ফিলিপাইনে চলমান রয়েছে। এর মধ্যে সোলারি নামক ক্যাসিনোতে যে ২৯ মিলিয়ন ডলার স্থানান্তরিত হয়, তা ফ্রিজ করে ফিলিপাইনের আদালত। বিষয়টি বর্তমানে ফিলিপাইনের সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন। এর বাইরে ক্যাসিনো ব্যবসায়ী কিম অংয়ের দুই কর্মচারীর হিসাবে ১.২ মিলিয়ন ডলার অর্থের সন্ধান পাওয়া গেছে। এক্ষেত্রে ফিলিপাইনের আদালত অ্যাসেট প্রিজারভেশন অর্ডার জারি করেছেন। অর্থাৎ এ অর্থ আদালতের আদেশ ছাড়া সংশ্লিষ্ট হিসাব থেকে কোনও পক্ষই উত্তোলন করতে পারবে না। এ অর্থ বাজেয়াপ্ত করে বাংলাদেশ ব্যাংককে ফেরত দেওয়ার বিষয়টি ম্যানিলার আঞ্চলিক আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
আবার মানি রেমিট্যান্স কোম্পানির ফিলরেমের কাছে ১৭ মিলিয়ন ডলার রয়েছে বলেও পর্যালোচনা ও অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। এ অর্থ ফিলরেমের কাছ থেকে উদ্ধারের জন্য ফিলিপাইনের অ্যান্টি-মানিলন্ডারিং কাউন্সিল দ্বারা সম্পত্তি বাজেয়াপ্তকরণ মামলা দায়েরের বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ হিসাব থেকে অর্থ চুরির বিষয়ে আরসিবিসি’র বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা জড়িত এবং এক্ষেত্রে ব্যাংকেরও দায় আছে।
আরও পড়ুন-
কবে শুরু হবে প্রতিযোগিতা কমিশনের কার্যক্রম?

/জিএম/টিআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে আসা ৫ টন কফি পাউডার জব্দ
মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে আসা ৫ টন কফি পাউডার জব্দ
শিশুকে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগে ৪ কিশোর সংশোধনাগারে
শিশুকে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগে ৪ কিশোর সংশোধনাগারে
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন