X
বুধবার, ১৫ মে ২০২৪
৩১ বৈশাখ ১৪৩১

এক কোটি ৭০ লাখ ব্যাংক গ্রাহকের চার্জ দিতে হয় না

গোলাম মওলা
২৬ অক্টোবর ২০১৭, ০১:১৬আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০১৭, ০১:৩৯

বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংক খাতে এক কোটি ৭০ লাখ ৭৪ হাজার ৪৫৪ জন গ্রাহকের এক টাকাও চার্জ বা ফি দিতে হয় না। এসব গ্রাহকের হিসাবে ন্যূনতম স্থিতি রাখারও কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। ২০১৭ সালের জুন প্রান্তিকের তথ্য নিয়ে তৈরি করা বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চার্জ বা ফি দিতে হয় না— এমন হিসাবে জমা রয়েছে এক হাজার ৩১১ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আর্থিক অন্তর্ভুক্তির আওতায় কৃষকসহ ১৩ ধরনের ব্যক্তিরা কোনও ধরনের চার্জ বা ফি ছাড়াই ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করার সুবিধা পাচ্ছেন। এর মধ্যে কৃষকের হিসাব রয়েছে ৯১ লাখ ৯০ হাজার ৬৪টি। এর বাইরে এক টাকাও চার্জ বা ফি দিতে হয় না ২২ লাখ ৮৭ হাজার ১৭৯ জন হতদরিদ্র মানুষের। কোনও চার্জ বা ফি ছাড়াই লেনদেন করছেন দুই লাখ এক হাজার ১১৩ জন মুক্তিযোদ্ধা।
চার্জ বা ফি ছাড়াই ব্যাংক হিসাব চালানোর সুবিধা পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে আরও আছেন এক লাখ ৬০ হাজার ১৭৬ জন প্রতিবন্ধী, দুই লাখ ৩০ হাজার ১৪৩ জন তৈরি পোশাক শিল্পে কর্মরত শ্রমিক। এর বাইরে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ভাতাভোগী রয়েছেন ৪৪ লাখ ২১ হাজার ৯০৬ জন। এছাড়া, ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে দুস্থদের পুনর্বাসনের অনুদানের উপকারভোগী রয়েছেন ১ হাজার ২৭৭ জন। ফুড ও লাইভলি হুড সিকিউরিটি প্রকল্পে রয়েছেন ৯৭ হাজার ৭৮২ জন। সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন শ্রমিক রয়েছেন ৯ হাজার ৭৩৪ জন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কর্মসূচিতে ব্যাংক হিসাব খোলা কার্যক্রমের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে কৃষকদের অন্তর্ভুক্তি। চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত বিভিন্ন খাতে খোলা বিশেষ হিসাবের মধ্যে মোট ৫৪ শতাংশ হিসাবই কৃষকদের। এসব হিসাবে মোট সঞ্চয়ের পরিমাণ ২৬৪ কোটি ১৯ লাখ কোটি টাকা। এর বাইরে ২৩ হাজার ৩৭৩ জন কৃষকের ব্যাংক হিসাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের দুইশ কোটি টাকার তহবিলের ৫৩ কোটি টাকা পুনঃঅর্থায়ন করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণের অংশ হিসেবে কৃষকসহ সুবিধাবঞ্চিতদের অর্থনীতির মূল ধারায় নিয়ে আসার চেষ্টা করছে। তারই অংশ হিসেবে ১০ টাকায় ব্যাংক হিসাব খোলার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর বাইরে সরকারের বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অর্থ বিতরণ, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিশেষ হিসাব, ক্ষুদ্র জীবন বীমা গ্রহীতা, বেকার যুবক বা যুব নারী ও স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যাংক হিসাব খুলতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’ বিশেষ করে কৃষক যেন প্রয়োজনমতো লেনদেন করতে পারেন, সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া আছে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সময়মতো সরকারের দেওয়া ভর্তুকি জমা ছাড়াও স্বাভাবিক ব্যাংকিং কার্যক্রমে ১০ টাকায় খোলা কৃষকের হিসাবের মাধ্যমে কৃষি ঋণ বিতরণ করা হচ্ছে। এসব কৃষকের মধ্যে সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে উঠছে, যা সামগ্রিক আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণ প্রক্রিয়াকে বেগবান করছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ৪ হাজার ৩৬৫ জন পথশিশু ব্যাংকে লেনদেন করেছে। তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে এখন ২৬ লাখ ৪৮ হাজার টাকাও বেশি পরিমাণ অর্থ জমা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, আর্থিক সেবা থেকে বঞ্চিত মানুষদের ব্যাংকিং সেবায় নিয়ে আসার উদ্যোগ নেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান। তার প্রচেষ্টায় ২০১০ সালের ১৭ জানুয়ারি প্রথমবারের মতো মাত্র ১০ টাকায় কৃষকের হিসাব খুলতে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে দেশের সুবিধাবঞ্চিতদের অর্থনীতির মূল ধারায় আনার মাধ্যমে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়ানোর লক্ষ্যে অতিদরিদ্র উপকারভোগী, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির সুবিধাভোগী, কর্মজীবী পথশিশু-কিশোর ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধীসহ অন্যদের জন্যও ১০ টাকার বিনিময়ে ব্যাংকগুলো হিসাব খোলার বিশেষ কার্যক্রম নেয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মনিবন্ধন সনদ বা কৃষি উপকরণ সহায়তার কার্ড নিয়ে যেকোনও সরকারি ব্যাংকে গিয়ে এ হিসাব খোলা যায়। কোনও ব্যাংক এসব হিসাবে ন্যূনতম স্থিতি রাখার বাধ্যবাধকতা আরোপ কিংবা কোনও ধরনের চার্জ নিতে পারবে না।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ব্যাংকিং খাতকে মানুষের কল্যাণে প্রতিষ্ঠা করা হলেও দীর্ঘদিন আর্থিক সেবা থেকে অনেকেই বঞ্চিত ছিল। এখন তাদেরকে আর্থিকসেবা দেওয়া হচ্ছে। ব্যাংক এদের হিসাবের ওপর চার্জ আরোপ করলে এরা ব্যাংকমুখী হতো না।’ সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রতি ব্যাংকের মানবিক হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
আরও পড়ুন-
১৩ লাখ স্কুল শিক্ষার্থী ব্যাংক হিসাবধারী

/টিআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
‌‘এখনও ঘুমালে মনে হয় জলদস্যুরা এই বুঝি গুলি করলো’
এমভি আবদুল্লাহর চিফ অফিসার‌‘এখনও ঘুমালে মনে হয় জলদস্যুরা এই বুঝি গুলি করলো’
‘দলীয় সাংবাদিক’ ও সাংবাদিকতায় অনাস্থা
‘দলীয় সাংবাদিক’ ও সাংবাদিকতায় অনাস্থা
‘আমাদের ছাড়াতে এয়ারক্রাফটের মাধ্যমে মুক্তিপণ দেওয়া হয়েছিল’
‘আমাদের ছাড়াতে এয়ারক্রাফটের মাধ্যমে মুক্তিপণ দেওয়া হয়েছিল’
লিগ্যাল এইড পরিচালনায় অসামঞ্জস্য তুলে ধরলেন প্রধান বিচারপতি
লিগ্যাল এইড পরিচালনায় অসামঞ্জস্য তুলে ধরলেন প্রধান বিচারপতি
সর্বাধিক পঠিত
শুক্রবারও চলবে মেট্রোরেল
শুক্রবারও চলবে মেট্রোরেল
সজনে পাতা খেলে মিলবে এই ১২ উপকারিতা
সজনে পাতা খেলে মিলবে এই ১২ উপকারিতা
রংপুরের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ
রংপুরের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ
সাকিব-তামিমের কারণে দলের পরিবেশ নষ্ট হয়েছে: ইমরুল 
সাকিব-তামিমের কারণে দলের পরিবেশ নষ্ট হয়েছে: ইমরুল 
সোনার অলংকার কেনাবেচায় নতুন হার নির্ধারণ
সোনার অলংকার কেনাবেচায় নতুন হার নির্ধারণ