X
মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪
৩ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা নষ্ট করছে সঞ্চয়পত্রের উচ্চ সুদ

গোলাম মওলা
১৬ নভেম্বর ২০১৭, ১৬:১৬আপডেট : ১৬ নভেম্বর ২০১৭, ১৯:৫৩

সঞ্চয়পত্র সঞ্চয়পত্রের উচ্চ সুদ ব্যাংক খাতের শৃঙ্খলা নষ্ট করছে। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানোর জন্য সরকারের কাছে লিখিত প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করছে, সঞ্চয়পত্রের উচ্চ সুদের কারণে সার্বিকভাবে আর্থিক খাত ও বন্ড বাজারের উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গবেষণা বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মাহফুজা আকতার স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, সঞ্চয়পত্রের উচ্চ সুদের কারণে সার্বিকভাবে আর্থিক খাত ও বন্ড বাজারের উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া, ব্যাংকিং খাত থেকে সরকার ঋণ নেওয়ার বদলে আগের ঋণ পরিশোধের ফলে এ খাতে উদ্বৃত্ত তারল্যের সৃষ্টি হচ্ছে, যা নিষ্ক্রিয়করণের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়ন্ত্রণে রাখতে গিয়ে খোদ বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালন ব্যয় বাড়ছে। এ অবস্থায় সঞ্চয়পত্রের সুদহার যৌক্তিকীকরণের বিষয়টি সরকার সুবিবেচনায় নিতে পারে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, সঞ্চয়পত্রের সুদহার অর্থবাজারে বিদ্যমান সুদহারের চেয়ে বেশি হওয়ায় সরকারের দায় বেড়ে যাচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সঞ্চয়পত্রের উচ্চ সুদহারের কারণে কেবল আর্থিক খাতে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে তা নয়, সামগ্রিকভাবে আর্থিক খাতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তিনি বলেন, এর ফলে একদিকে অভ্যন্তরীণ ঋণের পেছনে সরকারের ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালন ব্যয় বাড়ছে।

জানা গেছে, আগামী ২৬ নভেম্বর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় ‘সরকারের আর্থিক মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হার সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল’ এর বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পাঠানো চিঠিটি উপস্থাপন করা হবে।

এর আগে গত জুন মাসে বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানোর কথা বলেছিলেন। ওই সময় তিনি ব্যাংকের সুদের হারের সঙ্গে সঞ্চয়পত্রের সুদের হারের বর্তমান ব্যবধান ২ শতাংশের মধ্যে নামানোর কথা বলেন। তবে তার ওই কথার বিরোধিতা করেন সরকারের অন্য মন্ত্রীরা। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিপুলসংখ্যক সঞ্চয়পত্রের ক্রেতাকে হতাশ না করতে অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন তারা।

জানা গেছে, সঞ্চয়পত্রের দিকে মানুষের আগ্রহের বড় কারণ ব্যাংক আমানতের নিম্ন সুদ হার। ব্যাংকে বর্তমানে আমানতে সুদের হার এখন চার থেকে ছয় শতাংশের মধ্যে। বিপরীতে বিভিন্ন সঞ্চয় প্রকল্পের সুদ হার ১১ থেকে ১২ শতাংশের কাছাকাছি।

এদিকে, সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে নেওয়া ঋণে ১০ থেকে ১২ শতাংশ সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে সরকারকে। যদিও ট্রেজারি বিলের বিপরীতে ২ দশমিক ৯০ শতাংশ সুদে ৯১ দিন মেয়াদি এবং ৫ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ সুদে পাঁচ বছর মেয়াদি ব্যাংকঋণ নিতে পারত সরকার।

এ প্রসঙ্গে বিআইডিএসের গবেষক ও অর্থনীতিবিদ ড. জায়েদ বখত বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ব্যাংক আমানতে সুদ হার কমে যাওয়া ও শেয়ারবাজারের প্রতি আস্থা না থাকার কারণে সব শ্রেণির মানুষ সঞ্চয়পত্রের দিকে ঝুঁকছে। ফলে ঘাটতি বাজেট পূরণে সঞ্চয়পত্রে সরকারের ব্যয়ও বাড়ছে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০০৭-০৮ অর্থবছর শেষে সঞ্চয়পত্র খাত থেকে সরকারের ঋণের পরিমাণ ছিল ৪৫ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা। পাঁচ বছর পর ২০১২-১৩ অর্থবছর শেষে সঞ্চয়পত্র খাতে সরকারের দেনা দাঁড়ায় ৬৪ হাজার ১০৮ কোটি টাকা। তবে পরের পাঁচ বছরে এ খাত থেকে সরকারের ঋণ বেড়েছে তিন গুণেরও বেশি। ২০১৬-১৭ অর্থবছর শেষে সুদাসলে সঞ্চয়পত্রে সরকারের ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে প্রায় দুই লাখ ৯ হাজার ৮২৬ কোটি টাকা।

গত ৬ নভেম্বরের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ স্থিতি ৮৭ হাজার ৪০ কোটি টাকা। গত জুনের তুলনায় যা দুই হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা এবং আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৮ হাজার ৯১৯ কোটি টাকা কম। বর্তমানে ব্যাংক খাতে এক লাখ ১৭ হাজার কোটি টাকা উদ্বৃত্ত তারল্য রয়েছে। এর মধ্যে অলস পড়ে আছে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর মাসে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার ঋণ নিয়েছে তিন হাজার ৬৬৫ কোটি টাকা। আগস্টে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার ঋণ নেয় তিন হাজার ৯৭৫ কোটি টাকা। জুলাইয়ে ঋণ নিয়েছিল পাঁচ হাজার ৫৩ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয় ৭৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি।

চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৪৩ শতাংশ ঋণ নেওয়া হয়েছে। এই অর্থবছরে এ খাত থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার কথা ৩০ হাজার ১৫০ কোটি টাকা।

বর্তমানে পাঁচ বছর মেয়াদি পেনশন সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। পাঁচ বছর মেয়াদি পরিবার সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ শেষে পাওয়া যায় ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ সুদ। পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের সুদের হার এখন ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ। তিন বছর মেয়াদি মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। তিন বছর মেয়াদি ডাকঘর সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ। 

 

 

/এএম/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
তামিমের ফেরা প্রসঙ্গে শান্ত, ‘সবার আগে উনার চাইতে হবে’
তামিমের ফেরা প্রসঙ্গে শান্ত, ‘সবার আগে উনার চাইতে হবে’
পশ্চিম তীরে ২ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করলো ইসরায়েলি সেটেলাররা
পশ্চিম তীরে ২ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করলো ইসরায়েলি সেটেলাররা
রিক্রুটিং এজেন্সিকে মানবিক হওয়ার আহ্বান প্রবাসী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রীর
রিক্রুটিং এজেন্সিকে মানবিক হওয়ার আহ্বান প্রবাসী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রীর
চুয়াডাঙ্গায় বইছে তীব্র তাপপ্রবাহ, তাপমাত্রা ৪০.৬ ডিগ্রি
চুয়াডাঙ্গায় বইছে তীব্র তাপপ্রবাহ, তাপমাত্রা ৪০.৬ ডিগ্রি
সর্বাধিক পঠিত
শেখ হাসিনাকে নরেন্দ্র মোদির ‘ঈদের চিঠি’ ও ভারতে রেকর্ড পর্যটক
শেখ হাসিনাকে নরেন্দ্র মোদির ‘ঈদের চিঠি’ ও ভারতে রেকর্ড পর্যটক
বিসিএস পরীক্ষা দেবেন বলে ক্যাম্পাসে করলেন ঈদ, অবশেষে লাশ হয়ে ফিরলেন বাড়ি
বিসিএস পরীক্ষা দেবেন বলে ক্যাম্পাসে করলেন ঈদ, অবশেষে লাশ হয়ে ফিরলেন বাড়ি
চাসিভ ইয়ার দখল করতে চায় রাশিয়া: ইউক্রেনীয় সেনাপ্রধান
চাসিভ ইয়ার দখল করতে চায় রাশিয়া: ইউক্রেনীয় সেনাপ্রধান
ঘরে বসে আয়ের প্রলোভন: সবাই সব জেনেও ‘চুপ’
ঘরে বসে আয়ের প্রলোভন: সবাই সব জেনেও ‘চুপ’
ডাবের পানি খাওয়ার ১৫ উপকারিতা
ডাবের পানি খাওয়ার ১৫ উপকারিতা