X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

খেলাপি ঋণ এখন ৮০ হাজার কোটি টাকা

গোলাম মওলা
২১ নভেম্বর ২০১৭, ২০:৪৮আপডেট : ২১ নভেম্বর ২০১৭, ২০:৫৯

বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকিং খাতে মোট ঋণের ১০ দশমিক ৬৭ শতাংশই এখন খেলাপি ঋণ। গত বছর সেপ্টেম্বরের শেষে ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ ছিল ৬৫ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা। এ বছরের সেপ্টেম্বরের শেষে ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের দাঁড়িয়েছে ৮০ হাজার ৩০৭ কোটি টাকারও বেশি। এই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৪ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা। এরমধ্যে গত তিন মাসেই খেলাপির পরিমাণ বেড়েছে ছয় হাজার ১৫৯ কোটি টাকা।
মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ বছরের সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিন পর্যন্ত ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের ঋণ দিয়েছে সাত লাখ ৫২ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা। এরমধ্যে খেলাপি হয়ে পড়েছে ৮০ হাজার ৩০৭ কোটি ২১ লাখ টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ১০ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এ বছরের জুন মাস পর্যন্ত খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৭৪ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ১০ দশমিক ১৩ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার জন্য ব্যাংকগুলোর ওপর মনিটরিং ব্যবস্থা আগের চেয়ে জোরদার করা হয়েছে। নতুন করে যাতে খেলাপি না হয়, সেজন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া আছে।’
প্রসঙ্গত,  ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণের যে হিসাব দিয়ে থাকে, তাকে মূলত নিয়মিত খেলাপি ঋণ বলা হয়ে থাকে। এর বাইরেও ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ রয়েছে, যা অবলোপন করেছে ব্যাংকগুলো। যদিও খেলাপি ঋণের হিসাবে অবলোপন করা ঋণকে সাধারণত  হিসাবে ধরা হয় না। এতে করে সাধারণভাবে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কিছুটা কম দেখানো হয়।

অর্থনীতিবিদদের মতে, অবলোপন করা ঋণও প্রকৃত খেলাপি ঋণ। যেসব ঋণ আদায়ের সম্ভাবনা ক্ষীণ, সেসব ঋণকে আর্থিক হিসাবের সুবিধার্থে ব্যাংকের স্থিতিপত্র বা ব্যালেন্স শিট থেকে বাদ দেওয়া হয়।

ব্যাংকসংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় ঋণ দেওয়ার পাশাপাশি ব্যাংকগুলোর পরিচালকরা নিজেদের মধ্যে আদান-প্রদান করে ঋণ নেওয়ার ফলে খেলাপির পরিমাণ বাড়ছে।

জানা গেছে, ২০১১ সালের শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা, যা ওই সময় পর্যন্ত বিতরণ করা ঋণের ছয় দশমিক ১২ শতাংশ। এখন সেই হার দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৬৭ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ৩৯টি বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ে ছয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে খেলাপি ঋণ এখন বেশি। এ বছরের সেপ্টেম্বরের শেষে রাষ্ট্রীয় মালিকানার সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট বা বিডিবিএল-এ খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৮ হাজার ৫১৭ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ২৯ দশমিক ২৫ শতাংশ। এসময়ে সরকারি এসব ব্যাংক বিতরণ করেছিল এক লাখ ৩১ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকার ঋণ।

এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘ব্যাংকগুলো ডিসেম্বর মাস সামনে রেখে খেলাপি কমিয়ে আনার চেষ্টা করছে।’ অগ্রণী ব্যাংকে আগের চেয়ে খেলাপি কমছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আগামী ডিসেম্বর প্রান্তিকে অগ্রণী ব্যাংকে খেলাপি ঋণ আরও কমবে।’ অন্যান্য ব্যাংকেও ডিসেম্বর নাগাদ খেলাপি কমে আসবে বলে তার ধারণা। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, সেপ্টেম্বর মাসের শেষে বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের বিতরণ করা মোট ঋণের মধ্যে ২৩ দশমিক ৭৯ শতাংশই খেলাপি হয়ে পড়েছে। গত জুন মাসের শেষেও এই দুটি ব্যাংকে খেলাপি ছিল ২৩ দশমিক ৭৯ শতাংশ ঋণ। সেপ্টেম্বর মাসের শেষে এই ব্যাংক দুটি গ্রাহকদের মধ্যে বিতরণ করেছে ২৩ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। এরমধ্যে খেলাপি হয়ে পড়েছে পাঁচ হাজার ৫১৮ কোটি টাকা। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, খেলাপি ঋণ আদায়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে  নজরদারি বাড়ানোর পরও  খেলাপির পরিমাণ কমছে না। এর ফলে ঋণ দিয়ে বিপাকে পড়ছে ব্যাংকগুলো। 

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ার বড় কারণ ব্যাংক খাতে সুশাসন না থাকা।’  তিনি উল্লেখ করেন, ‘খেলাপি ঋণ দিন দিন যেভাবে বাড়ছে, এটা শুধু ব্যাংক খাতে নয়, পুরো অর্থনীতির জন্য উদ্বেগের।’ তিনি বলেন, ‘খেলাপি ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে প্রভিশন রাখতে হয়। ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে পড়ে। খেলাপির পরিমাণ বেড়ে গেলে ব্যাংকের সক্ষমতাও কমে যায়।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, এ বছরের জুন মাসের শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংকে খেলাপি ঋণ ছিল ৩৪ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা, যা গড়ে ব্যাংকগুলোর মোট ঋণের ২৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে এটি বেড়ে হয়েছে ৩৮ হাজার ৫১৭ কোটি টাকা, যা ২৯ দশমিক ২৫ শতাংশ।

এদিকে, খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ার কারণে সরকারি ব্যাংকগুলো পড়েছে মূলধন ঘাটতিতে। তাই পুনঃমূলধনের নামে এই ব্যাংকগুলোকে জনগণের করের টাকা যোগান দেওয়া হচ্ছে। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে জানা যায়,সেপ্টেম্বরে বেসরকারি খাতের দেশীয় ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা পাঁচ লাখ ৬৮৭ হাজার কোটি টাকার মধ্যে খেলাপি ঋণ হয়েছে ৩৩ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা, যা ব্যাংকগুলোর মোট ঋণের পাঁচ দশমিক ৯৭ শতাংশ। জুন মাসের তুলনায় এসব ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বেড়েছে দুই হাজার ২৪৫ কোটি টাকা। গত জুনে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ছিল ৩১ হাজার ৭২৮ কোটি টাকা, ব্যাংকগুলোর মোট ঋণের  পাঁচ দশমিক ৭৭ শতাংশ। 

সেপ্টেম্বর মাসে শেষে বিদেশি ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ২৯ হাজার ১১৬ কোটি টাকার মধ্যে খেলাপি ঋণ হয়েছে দুই হাজার ২৯৮ কোটি টাকা, যা ব্যাংকগুলোর মোট ঋণের সাত  দশমিক ৮৯ শতাংশ। 

আরও পড়ুন: 

ঢামেকে অতিরিক্ত এক্সরে ফিল্ম কেনার ঘটনা তদন্তের সুপারিশ সংসদীয় কমিটির

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
দেয়ালের দেশ: মন খারাপ করা ভালোবাসার এক সিনেমা
সিনেমা সমালোচনাদেয়ালের দেশ: মন খারাপ করা ভালোবাসার এক সিনেমা
দুবাই হয়ে ট্রানজিট ফ্লাইট স্থগিত করলো এমিরেটস
দুবাই হয়ে ট্রানজিট ফ্লাইট স্থগিত করলো এমিরেটস
ঢাকা শিশু হাসপাতালে আগুন
ঢাকা শিশু হাসপাতালে আগুন
রাজশাহীতে বইছে তাপদাহ, হাসপাতালে বাড়ছে রোগী
রাজশাহীতে বইছে তাপদাহ, হাসপাতালে বাড়ছে রোগী
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ