X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ ৭ ব্যাংক

গোলাম মওলা
২২ নভেম্বর ২০১৭, ২৩:৪৬আপডেট : ২৩ নভেম্বর ২০১৭, ১৯:৩৯

বাংলাদেশ ব্যাংক

ব্যাংকিং খাতের ক্রমবর্ধমান খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোর প্রভিশন (নিরাপত্তা সঞ্চিতি) সংরক্ষণের পরিমাণও বেড়েছে। তবে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে রাষ্ট্রীয় খাতের তিন ব্যাংক এবং বেসরকারি খাতের চার ব্যাংক প্রভিশন সংরক্ষণ করতে পারেনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ ব্যাংকগুলো হলো, রাষ্ট্রীয় খাতের সোনালী, রূপালী, বেসিক এবং বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, বাংলাদেশ কর্মাস ব্যাংক ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক। এসব ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি প্রায় ৮ হাজার ৮৭৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, রূপালী ও বেসিক ব্যাংকেরই ঘাটতি ৭ হাজার ৫৬৮ কোটি টাকা।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ২ হাজার ৯০১ কোটি, রূপালী ব্যাংকের ১ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা ও বেসিক ব্যাংকের ৩ হাজার ৪২২ কোটি টাকা। বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে প্রভিশন ঘাটতিতে সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় রয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংক। সেপ্টেম্বরে ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতি ৮৬২ কোটি টাকা। এছাড়া  প্রিমিয়ার ব্যাংকের ১৬০ কোটি টাকা ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ৮৯ কোটি টাকা প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে।

প্রসঙ্গত, ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের যে পরিমাণ ঋণ বিতরণ করে, তার বেশিরভাগই আমানতকারীদের অর্থ। এ কারণে ঋণ যেন ঝুঁকির মুখে না পড়ে, সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা আছে। এর একটি হল প্রভিশন সংরক্ষণ।

নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকের অশ্রেণিকৃত বা নিয়মিত ঋণের বিপরীতে দশমিক ২৫ থেকে ৫ শতাংশ হারে প্রভিশন রাখতে হয়। নিম্নমান বা সাব স্ট্যান্ডার্ড ঋণের বিপরীতে রাখতে হয় ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ এবং মন্দ বা কু-ঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। ব্যাংকের আয় খাত থেকে অর্থ এনে এ প্রভিশন সংরক্ষণ করা হয়। খেলাপি ঋণ বাড়লে আর সে অনুযায়ী ব্যাংকের আয় না হলে প্রভিশন ঘাটতি দেখা দেয়।

ব্যাংক কোম্পানি আইনানুযায়ী, প্রভিশন ঘাটতি থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কোনও লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ার কারণেই ব্যংকিং খাতে প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ বেড়েছে। আর এ সময়ে যেসব ব্যাংক প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে, তাদের মূলধন ঘাটতিতে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, জুন পর্যন্ত সময়ে ছয়টি ব্যাংক প্রভিশন ঘাটতিতে ছিল। সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাতটিতে। এসময়ে নতুনভাবে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক প্রভিশন ঘাটতিতে পড়েছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘খেলাপি ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে প্রভিশন রাখতে হয়। ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে পড়ে। খেলাপির পরিমাণ বেড়ে গেলে ব্যাংকের সক্ষমতাও কমে যায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘খেলাপি ঋণ বাড়ার বড় কারণ, ব্যাংক খাতে সুশাসন না থাকা। খেলাপি ঋণ দিন দিন যেভাবে বাড়ছে, এটা শুধু ব্যাংক খাতে নয়, পুরো অর্থনীতির জন্য উদ্বেগের।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮০ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা, যা মোট ঋণ বিতরণের ১০ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এর সঙ্গে ৪৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ অবলোপন যোগ করলে প্রকৃত খেলাপির পরিমাণ দাঁড়াবে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা।

গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ ছিল ৬৫ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৮০ হাজার ৩০৭ কোটি টাকারও বেশি। এই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৪ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে গত তিন মাসেই খেলাপির পরিমাণ বেড়েছে ৬ হাজার ১৫৯ কোটি টাকা।  চলতি বছরের জুন শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৭৪ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ১০ দশমিক ১৩ শতাংশ।

ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের এই পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মশালায় গভর্নর ফজলে কবির বলেন, ‘খেলাপি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। তবে খেলাপি হঠাৎ সৃষ্টি হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে খেলাপি ঋণ বাড়ছে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতে প্রভিশন সংরক্ষণের প্রয়োজন ছিল ৪৬ হাজার ৩১২ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ব্যাংকগুলো প্রভিশন সংরক্ষণ করেছে ৩৯ হাজার ৯৬৪ কোটি টাকা। ফলে ব্যাংক খাতের সামগ্রিক প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা। আগের প্রান্তিক জুন পর্যন্ত ব্যাংক খাতের সামগ্রিক প্রভিশন ঘাটতি ছিল ৬ হাজার ১৯২ কোটি টাকা।

 

/এমএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মোংলার তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সহসা নামবে না বৃষ্টি
মোংলার তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সহসা নামবে না বৃষ্টি
‘আমি কোনও ছেলেকে বিশ্বাস করতে পারি না’
‘আমি কোনও ছেলেকে বিশ্বাস করতে পারি না’
তাপদাহে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের গাউন পরিধানে শিথিলতা
তাপদাহে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের গাউন পরিধানে শিথিলতা
সারা দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা
সারা দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া