X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

এ বছরে অর্থনীতি বাড়তি ঝুঁকিতে পড়বে: সিপিডি

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১৩ জানুয়ারি ২০১৮, ১৩:৫৮আপডেট : ১৩ জানুয়ারি ২০১৮, ১৪:৫৯

সিপিডির সংবাদ সম্মেলন

এ বছরে অর্থনীতি বাড়তি ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কা করেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। এই ঝুঁকি মোকাবিলায় অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় ‘রক্ষণশীল’ নীতি নেওয়ার জন্য সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি। এছাড়া ২০১৭ সালের আর্থিক দুর্বলতার পাশাপাশি ব্যাংক দখল, অর্থপাচার, দারিদ্র্য ও সম্পদের বৈষম্য বেড়ে যাওয়া এবং জিডিপির গুণগত প্রবৃদ্ধির বিষয়ে সমালোচনা করে সিপিডি। শনিবার (১৩ জানুয়ারি) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশ অর্থনীতি-২০১৭-১৮ অর্থবছর- প্রথম অন্তর্বর্তীকালীন পর্যালোচনা’ শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এসব মন্তব্য করেন সংস্থাটির গবেষকরা।  

সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য বলেন, একটা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০১৭ সাল শুরু হয়েছিল, সেটা ছিল বিনিয়োগ বাড়ানো। কিন্তু বছর শেষে সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হয়নি। ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগ বাড়েনি। তিনি বলেন, জিডিপি প্রবৃদ্ধি হলেও সেই তুলনায় দারিদ্র্য কমেনি। সেই অনুযায়ী কর্মসংস্থানও হয়নি। আবার এই সময়ে সম্পদের বৈষম্যও বেড়েছে। ফলে ২০১৭ সালে সার্বিকভাবে সামষ্টিক অর্থনীতি দুর্বল হয়েছে।

তিনি বলেন, ২০১৮ সালের সব কর্মকাণ্ড নির্বাচনমুখী। ২০১৭ সাল ছিল ব্যাংক খাতে কেলেঙ্কারির বছর। এই খাতে সংস্কার হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। চলতি বছর এমন ম্যাজিক্যাল কিছু ঘটবে না যাতে বড় ধরনের সংস্কার হবে। সংস্কার করার মতো রাজনৈতিক পুঁজিও নাই। গত বছরের আর্থিক ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার সঙ্গে চলতি বছরের নির্বাচন বাড়তি ঝুঁকি যোগ করবে। এজন্য রক্ষণশীল অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা কার্যকর করতে হবে। ঋণ কমাতে হবে, টাকার মূল্যমান ঠিক রাখতে হবে, মূল্যস্ফীতি বিশেষ করে চালের দাম কমাতে হবে। নির্বাচনি বছরে বহুমুখী চাপ সামলাতে রাজনৈতিক দূরদর্শিতা প্রয়োজন।

ব্যাংক খাত সম্পর্কে তিনি বলেন,ব্যাংকের সামগ্রিক সূচক আরও খারাপ হয়েছে। খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে, শুধু তাই নয়, ঋণের টাকা কয়েক ব্যক্তির হাতে কেন্দ্রীভূত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি আশঙ্কার জায়গা প্রশাসনিকভাবে বেশ কিছু ব্যাংকের মালিকানা পরিবর্তন হয়েছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার দুর্বলতা কারণে এসব বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ বা সংস্কার করতে পারেনি। সংস্কারের পরিবর্তে আরও উল্টো দিকে গেছে। ব্যাংক কোম্পানি আইন  সংশোধন করে পরিবারের হাতে ব্যাংকগুলোকে জিম্মি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগের রাজনৈতিক বিবেচনায় লাইসেন্স দেওয়া ব্যাংকগুলোর অবস্থা খারাপ হলেও নতুন করে আরও ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

তিনি বলেন, দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় দায়ী। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংস্কারের উদ্যোগের অভাব ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় ঘটাতে পারেনি অর্থ মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দুর্বল ছিল না।

সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমদানির আড়ালে অর্থ পাচার হচ্ছে। বিশেষ করে পোশাক শিল্পের কাঁচামাল হিসাবে তুলা আমদানি ৭৫ শতাংশ বেড়েছে। যদিও উৎপাদনে তার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বিদেশি বিভিন্ন  সংস্থার হিসেবে বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর ৮ থেকে ৯ বিলিয়ন ডলার পাচার হচ্ছে। এর মধ্যে ৮০ ভাগই আমদানি-রফতানিতে মূল্য কারসাজির মাধ্যমে। বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক  ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের  (এনবিআর) খতিয়ে দেখা উচিত।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বক্তব্য রাখেন। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থাটির রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান।

মূল প্রবন্ধে তিনি উল্লেখ করেন, আমদানি ব্যয় অনেক বেড়েছে রফতানি আয় সেই হারে বাড়েনি। ফলে ব্যালান্স অব পেমেন্টে ঘাটতি হচ্ছে। টাকার মান কমেছে। সার্বিকভাবে সুদ হার কমলেও দেশের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা এই সুবিধা পাননি। সরকার প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ অর্থ জনগণের করের টাকা থেকে সরকারি ব্যাংকগুলোতে মূলধন যোগান দিচ্ছে। এখন বেসরকারি ব্যাংক থেকে বিদেশে অর্থ পাচার হচ্ছে। মূল প্রবন্ধে রোহিঙ্গা সম্পর্কে বলা হয়, গত বছরের আগস্ট থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত ৬ লাখ ৫৫ হাজার ৫০০ জন রোহিঙ্গা মায়ানমার থেকে বাংলাদেশে এসেছে। এটি ফিরিয়ে নেওয়ার আলোচনা চলছে। বর্তমান প্রেক্ষাপট অনুযায়ী, প্রতিদিন যদি ৩০০ জনকে ফেরত পাঠানো হয়, তাহলেও সময় লাগবে কমপক্ষে ৭ বছর এবং এতদিনে খরচ হবে কমপক্ষে ৪৪৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার। আর যদি প্রতিদিন ২০০ জন ফেরত পাঠানো হয়, তাহলে সময় লাগবে কমপক্ষে ১২ বছ এবং এতদিনে খরচ হবে কমপক্ষে ১ হাজার ৪৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার।

/জিএম/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
অডিও ফাঁস, নারীর কাছে ডিবি পুলিশ সদস্যের ‘হেরোইন বিক্রি’
অডিও ফাঁস, নারীর কাছে ডিবি পুলিশ সদস্যের ‘হেরোইন বিক্রি’
উপজেলা নির্বাচনে নেই বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল
উপজেলা নির্বাচনে নেই বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল
মিরপুরে ‘হারল্যান স্টোর’-এর উদ্বোধন করেন নুসরাত ফারিয়া, পণ্য কিনে হতে পারেন লাখপতি
মিরপুরে ‘হারল্যান স্টোর’-এর উদ্বোধন করেন নুসরাত ফারিয়া, পণ্য কিনে হতে পারেন লাখপতি
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা