X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রবৃদ্ধি হারের নিচে অন্ধকার রয়েছে: ড. দেবপ্রিয়

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১৩ জানুয়ারি ২০১৮, ২১:১৭আপডেট : ১৩ জানুয়ারি ২০১৮, ২১:১৭

সিপিডি মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধিতে গুণগত মানের অভাব রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য। তিনি অর্জিত জিডিপি হারকে একটি ‘শোভন প্রবৃদ্ধির হার’ বলে উল্লেখ করেছেন। আর এই প্রবৃদ্ধির হারের নিচে অন্ধকার রয়েছে বলেও মনে করেন তিনি।

শনিবার (১৩ জানুয়ারি) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশ অর্থনীতি-২০১৭-১৮ অর্থবছর–প্রথম অন্তর্বর্তীকালীন পর্যালোচনা’ শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে তিনি এই মন্তব্য করেন।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, ‘বাংলাদেশ গত এক দশক ধরে একটি শোভন প্রবৃদ্ধির হার রক্ষা করতে পেরেছে। কিন্তু এই শোভন প্রবৃদ্ধির হারের নিচে যে অন্ধকারটি রয়েছে সেটি হলো, দেশের ভেতরে সে তুলনায় কর্মসংস্থান হচ্ছে না, দারিদ্র্য বিমোচনের হার শ্লথ হয়েছে এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই বৈষম্য শুধু আয়ে আর ভোগে বৃদ্ধি পায়নি, সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে সম্পদের বৈষম্য।’ সামষ্টিক অর্থনীতির অগ্রযাত্রার মধ্যে এই বৈষম্য বাড়ার জন্য ‘প্রবৃদ্ধির গুণগত মানের অভাবকে’ দায়ী করেন তিনি।

দেবপ্রিয় আরও বলেন, ‘আমরা যতখানি না প্রবৃদ্ধির পরিমাণ নিয়ে চিন্তিত থাকতাম, এখন সময় হয়েছে সেই প্রবৃদ্ধির গুণগত মান নিয়ে চিন্তা করার। প্রবৃদ্ধি যত সংখ্যক মানুষকে ওপরে তোলার কথা, সে পরিমাণ তুলতে পারছে না। প্রবৃদ্ধির গুণগত মানের অভাবে ধনী-গরিবের সম্পদ বৈষম্য আরও বেড়েছে। কমেছে দারিদ্র্য হ্রাসের হার।’ এজন্য তিনি ব্যাংকের ঋণের টাকা ফেরত না দেওয়া, বড় বড় প্রকল্পের ভেতর থেকে বিভিন্ন ধরনের ঠিকাদারি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অর্থ ভিন্ন দিকে পরিচালনা করাকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, ‘২০০০ থেকে ২০০৫ সালে দারিদ্র্য হ্রাসের হার ছিল এক দশমিক ৮ শতাংশ, যা ২০১০ থেকে ২০১৬ সালে নেমে হয়েছে এক দশমিক ২ শতাংশ। কর্মসংস্থান বৃদ্ধির হার তিন দশমিক ৩ থেকে কমে হয়েছে এক দশমিক ৯ শতাংশ।’

২০১৭ সালে সার্বিকভাবে সামষ্টিক অর্থনীতি দুর্বল হয়েছে বলেও মত দেন সিপিডির এই বিশেষ ফেলো। তিনি বলেন, ‘সামষ্টিক অর্থনীতি দুর্বল হওয়ায় এ বছর অর্থনীতি বাড়তি ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কা থাকবে।’ এই ঝুঁকি মোকাবিলায় অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় রক্ষণশীল নীতি নেওয়ার জন্য সরকারকে পরামর্শ দেন তিনি।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, ‘একটা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০১৭ সাল শুরু হয়েছিল, সেটা ছিল বিনিয়োগ বাড়ানো। কিন্তু বছর শেষে সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হয়নি। ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগ বাড়েনি। যার ফলে অর্থনৈতিক বৈষম্য বেড়ে গেছে।’

অর্থনৈতিক বৈষম্য ভবিষ্যতে প্রবৃদ্ধিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে দেবপ্রিয় বলেন, ‘আমাদের বিশ্লেষণ বলে, যদি একটি দেশের ভেতরে ক্রমান্বয়ে আয়ের বৈষম্য বৃদ্ধি পায়, তাহলে তা প্রবৃদ্ধির হারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। অর্থাৎ, যত বেশি বৈষম্য আছে, সে দেশে প্রবৃদ্ধির হার ওপরের দিকে নেওয়া তত বেশি সমস্যা।’

সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কিছুটা দুর্বল হয়ে গেছে মন্তব্য করে  তিনি বলেন, ‘এটা সামাল দিতে আমরা যে সংস্কারের কথা বলেছিলাম, তা এগোয়নি; বরং পেছনের দিকে গেছে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় উদাহরণ ব্যাংকিং খাত। এই খাতে সংস্কারের পরিবর্তে আরও উল্টো দিকে গেছে। ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করে পরিবারের হাতে ব্যাংকগুলোকে জিম্মি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগের রাজনৈতিক বিবেচনায় লাইসেন্স দেওয়া ব্যাংকগুলোর অবস্থা খারাপ হলেও নতুন করে আরও ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।’

দেবপ্রিয় ২০১৭ সালকে ব্যাংক কেলেঙ্কারির বছর হিসেবে চিহ্নিত করে বলেন, ‘২০১৮ সালেও ব্যাংক খাতের ঘটনাগুলোর কোনও নিরসন হবে বলে মনে হচ্ছে না। ব্যাংক খাতের পরিস্থিতি দিয়ে বোঝা যায়, সংস্কারের বিষয়ে সরকারের মনোভাব কী রকম ছিল।’ তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালের সব কর্মকাণ্ড নির্বাচনমুখী। নির্বাচনি বছরে বহুমুখী চাপ সামলাতে হবে। তবে এ বছর এমন ম্যাজিকাল কিছু ঘটবে না যাতে বড় ধরনের সংস্কার হবে। সংস্কার করার মতো রাজনৈতিক পুঁজিও নেই। তাই গত বছরের আর্থিক ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার সঙ্গে এ বছরের নির্বাচন বাড়তি ঝুঁকি যোগ করবে। এজন্য রক্ষণশীল অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা কার্যকর করতে হবে। ঋণ কমাতে হবে, টাকার মূল্যমান ঠিক রাখতে হবে, মূল্যস্ফীতি বিশেষ করে চালের দাম কমাতে হবে।’

২০১৭ সালে ব্যাংক খাতে কী কী হয়েছে, তা তুলে ধরে দেবপ্রিয় বলেন, ‘ব্যাংকে অপরিশোধিত ঋণ বেড়েছে, সঞ্চিতির ঘাটতি বেড়েছে, অপরিশোধিত ঋণে গুটিকয়েকের প্রাধান্য তৈরি হয়েছে। জনগণের করের টাকায় রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকে মূলধন ঘাটতি পূরণ করা হয়েছে, বিভিন্ন ব্যক্তিখাতের ব্যাংকে প্রশাসনিক ব্যবস্থার মাধ্যমে মালিকানার বদল হয়েছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় দেওয়া নতুন ব্যাংক কার্যকর হতে পারেনি এবং এখন দেখা যাচ্ছে ব্যক্তি খাতের ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাচারের ঘটনা ঘটছে।’ ড. দেবপ্রিয় আরও বলেন, ‘এগুলোর ক্ষেত্রে কোনও প্রতিষেধক ব্যবস্থা না নিয়ে সরকার উল্টো ব্যাংকিং আইন সংশোধন করে ব্যাংকে পরিবারের নিয়ন্ত্রণ বাড়ালো।’

সামগ্রিক এই পরিস্থিতির জন্য দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার দুর্বলতাকে দায়ী করেন দেবপ্রিয়। তিনি বলেন, ‘অর্থ মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বমূলক ভূমিকার ক্ষেত্রে বড় ধরনের ঘাটতি ছিল। এ ঘাটতি তিন জায়গায়–সংস্কারের উদ্যমের অভাব, সমন্বয় করতে না পারা এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতায় দুর্বলতা।’

মিডিয়া ব্রিফিংয়ে ব্যাংক খাত, রোহিঙ্গা ও বন্যার বিষয়টি নিয়ে বিশেষ আলোচনা করা হয়। সিপিডির পক্ষে পর্যালোচনা তুলে ধরেন সংস্থাটির গবেষণা ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান। উপস্থাপনা শেষে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন ও গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

 

/জিএম/এএম/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আঙুরের গোড়া কালো হয়ে যাচ্ছে? জেনে নিন টিপস
আঙুরের গোড়া কালো হয়ে যাচ্ছে? জেনে নিন টিপস
টেকনাফে ১০ জন কৃষক অপহরণের ঘটনায় ২ জন আটক
টেকনাফে ১০ জন কৃষক অপহরণের ঘটনায় ২ জন আটক
এরদোয়ানের যুক্তরাষ্ট্র সফর, যা জানা গেলো
এরদোয়ানের যুক্তরাষ্ট্র সফর, যা জানা গেলো
যুক্তরাষ্ট্রের টি-টোয়েন্টি দলে নিউজিল্যান্ডের সাবেক অলরাউন্ডার
যুক্তরাষ্ট্রের টি-টোয়েন্টি দলে নিউজিল্যান্ডের সাবেক অলরাউন্ডার
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
শাকিব খান: নির্মাতা-প্রযোজকদের ফাঁকা বুলি, ভক্তরাই রাখলো মান!
শাকিব খান: নির্মাতা-প্রযোজকদের ফাঁকা বুলি, ভক্তরাই রাখলো মান!