X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

কমিশনের সঙ্গে বিরোধ, মামলা কমছে বিইআরসি ট্রাইব্যুনালে

সঞ্চিতা সীতু
১৪ জানুয়ারি ২০১৮, ১০:১৮আপডেট : ১৪ জানুয়ারি ২০১৮, ১০:৩৬

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) জ্বালানি খাতের মামলা নিষ্পত্তির জন্য স্থায়ী ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছিল বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। তবে এখন আর মামলা স্থানান্তর হচ্ছে না বিইআরসি ট্রাইব্যুনালে। কমিশন নিজেই নিষ্পত্তি করছে মামলাগুলো। ফলে কার্যত কর্মহীন হয়ে পড়ছে বিইআরসি ট্রাইব্যুনাল। বিইআরসি ও বিইআরসি ট্রাইব্যুনালের একাধিক সূত্রের সঙ্গে আলাপ করে এই দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিরোধের কথা জানা গেছে। যদিও কমিশন বা ট্রাইব্যুনালের কেউই নাম প্রকাশ করে কিছু বলতে রাজি হননি।

সূত্রগুলো বলছে, বিইআরসি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সময় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা না করেই এককভাবে গেজেট প্রকাশ করে আইন মন্ত্রণালয়। গেজেট প্রকাশের পর বিইআরসি’র সাবেক সদস্য সেলিম মাহমুদকে চেয়ারম্যান করে গঠন করা হয় স্থায়ী ট্রাইব্যুনাল। এতে সদস্য করা হয় বিইআরসি’র আরও দু’জন সাবেক কর্মকর্তাকে। ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর এই খাতের মামলাগুলোও ট্রাইব্যুনালেই আসতে শুরু করে। তবে বিইআরসি’র চেয়ারম্যান হিসেবে সাবেক বিদ্যুৎ সচিব মনোয়ার ইসলাম নিয়োগ পাওয়ার পর আর কোনও মামলা ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়নি।

জানা গেছে, ২০১৪ সালের ২২ জানুয়ারি ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিষয়ে প্রথম গেজেট প্রকাশ করা হয়। এরপর ২০১৬ সালের ২০ এপ্রিল সেটি সংশোধন করে আবার গেজেট প্রকাশ করে সরকার। তাতে বলা হয়, বিইআরসি আইন ২০০৩-এর অধীনে কমিশনের বিচারিক পর্ষদ হিসেবে কাজ করবে ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর প্রথম সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছিল, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সব পর্যায়ের অভিযোগ ট্রাইব্যুনাল দেখবে। এসব অভিযোগের জন্য বাংলাদেশের নিয়মিত কোনও আদালতে যাওয়া যাবে না। অভিযোগ বা মামলা এখানেই করতে হবে। কিন্তু দুই বছর না ঘুরতেই ট্রাইব্যুনাল নিজেই অকার্যকর হয়ে পড়ছে।

২০১৬ সালের জানুয়ারিতে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাইব্যুনাল জানিয়েছিল, তাদের কাছে ৯৫টি মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। তবে ট্রাইব্যুনাল ও কমিশনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ট্রাইব্যুনালে এখন মামলা রয়েছে মাত্র আটটি। অন্যদিকে কমিশন নিজে শুনানি করছে ১৫৬টি মামলা। এর মধ্যে আবেদনকারীদের রিটের পরিপ্রেক্ষিতে কমিশনের বদলে মামলা ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। তবে হাইকোর্টের এই আদেশের বিরুদ্ধে চেম্বার জজ আদালত নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় মামলাগুলো কমিশনই শুনানি করছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিইআরসি’র একজন সদস্য বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ট্রাইব্যুনাল গঠনে আইন মন্ত্রণালয়ের একক সিদ্ধান্ত মানতে পারেনি জ্বালানি বিভাগ। এতে দুই মন্ত্রণালয়ের মধ্যে মতবিরোধ তৈরি হয়। তিনি বলেন, ‘আমরা কমিশনে নতুন সদস্য নিয়োগ হওয়ার পর বিষয়টি বুঝতে পেরেছি। এখন আমরা আর কমিশনের পক্ষ থেকে ট্রাইব্যুনালে মামলা দিতে পারছি না।’ এসব মামলা কমিশনের বদলে ট্রাইব্যুনালে শুনানি হলে তাদের কাজের চাপ কমতো বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তবে কমিশনের আরেক সদস্য রহমান মুরশেদ বলছেন, ‘বিইআরসি’র আইন অনুযায়ী মামলা নিষ্পত্তি করা হয়। সাধারণ মানুষ বিইআরসিতে মামলা করে। এর মধ্যে কিছু মামলা ট্রাইব্যুনালে দেওয়া হয়, কিছু কমিশন নিজেই শুনানি করে সমাধান করছে।’ ট্রাইবুন্যালে মামলা কমে যাওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘কে কত মামলার সমাধান করছে, এটি বড় বিষয় নয়। মামলাগুলো সমাধান হচ্ছে কিনা, সেটাই বড় বিষয়।’

বিইআরসি ট্রাইব্যুনালের একজন সদস্যও নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি এক বক্তৃতায় বলেছেন, জ্বালানি খাতের মামলা নিষ্পত্তিতে আমরা স্থায়ী ট্রাইব্যুনাল করে দিয়েছি। ওই সময় বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী বিইআরসি’র কথা উল্লেখ করেননি। বিইআরসি’র কোনও কোনও সদস্য মনে করেন, এতে বিইআরসি’র মর্যাদা ক্ষুন্ন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বক্তৃতায় ট্রাইব্যুনালের কথা বলার পর থেকেই কমিশন আর কোনও মামলা ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করছে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু মামলাগুলো প্রথমে কমিশনে দায়ের করতে হয়, কমিশনই প্রাথমিকভাবে যাচাই-বাছাই করেই সেগুলো ট্রাইব্যুনালে পাঠায়। সঙ্গত কারণে কমিশন যদি মামলাগুলো ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর না করে, আমাদের কিছু করার থাকে না।’ কমিশনের সদস্যদের আইন বিষয়ে কোনও পারদর্শিতা না থাকলেও তারা একের পর এক মামলার রায় দিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।

এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান সেলিম মাহমুদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ট্রাইব্যুনালে মামলা আসছে। বিইআরসি’র আইন অনুযায়ী ক্রিটিক্যাল মামলাগুলো ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হচ্ছে।’ অন্য মামলাগুলো আসছে না কেন এবং মামলার সংখ্যা হঠাৎ কমে যাওয়ার কারণ কী— জানতে চাইলে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি।

আরও পড়ুন:
গ্যাস সংকট: সন্ধ্যার আগে চুলা জ্বলে না রাজধানীতে

/টিআর/আপ-এসএনএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
দিল্লিকে ভয় ধরিয়ে হারলো গুজরাট
দিল্লিকে ভয় ধরিয়ে হারলো গুজরাট
ডিইউজে নির্বাচনে সভাপতি পদের মীমাংসা মামলার শুনানি ২৫ এপ্রিল
ডিইউজে নির্বাচনে সভাপতি পদের মীমাংসা মামলার শুনানি ২৫ এপ্রিল
জুড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে মারধরের অভিযোগ
জুড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে মারধরের অভিযোগ
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী