X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

বিরোধী দলের ওয়াক আউটের মুখে ‘ব্যাংক কোম্পানি বিল’ পাস

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১৬ জানুয়ারি ২০১৮, ২০:৫৬আপডেট : ১৬ জানুয়ারি ২০১৮, ২১:১৪

 

বিরোধী দলের ওয়াক আউটের মুখে ‘ব্যাংক কোম্পানি বিল’ পাস বিরোধী দলের ওয়াক আউটের মুখে মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে ‘ব্যাংক কোম্পানি বিল ২০১৮’ পাস হয়েছে। পাস হওয়া বিলে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে একসঙ্গে একই পরিবারে চার সদস্য থাকার বিধান রেখে সংসদে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত মঙ্গলবার বিলটি সংসদে পাসের প্রস্তাব করলে কণ্ঠভোটে তা পাস হয়।

বিলটিতে সংশোধনী প্রস্তাব অর্থমন্ত্রীর ‘গ্রহণ না করার ঘোষণায়’ জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা ওয়াক আউট করে। তবে, বিলটি পাসের প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর তারা আবার সংসদে প্রবেশ করেন।

গত ১২ সেপ্টেম্বর বিলটি সংসদে উত্থাপন করার পর তা পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়। এর আগে গত বছরের ৭ মে বিলটি মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেওয়া হয়।

বিলটি মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর থেকে ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টরা সরকারের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে আসছেন। নতুন এই সিদ্ধান্তে বেসরকারি ব্যাংকে ‘পরিবারতন্ত্র’ কায়েমের সুযোগ তৈরি হবে বলে তারা অভিযোগ তুলেছেন।

প্রস্তাবিত আইনে একটানা নয় বছর পরিচালক পদে থাকার বিধানও রাখা হয়েছে।

বিদ্যমান আইনে এক পরিবার থেকে সর্বোচ্চ দু’জন সদস্য একটি ব্যাংকের পরিচালক হতে পারেন।আর তিন বছর করে পরপর দুই মেয়াদে মোট ছয় বছর একই ব্যক্তি পরিচালক হতে পারেন। এরপর তিন বছর বিরতি দিয়ে আবারও পরিচালক হতে পারেন। 

বিদ্যমান আইনে অনেকেরই পরিচালক থাকার মেয়াদ শেষ হয়ে আসছিল। এর মাধ্যমে ব্যাংক পরিচালকদের কাছে সরকারের নতি স্বীকার হল বলেও মনে করেন অনেকে।

প্রস্তাবিত আইনে পরিচালকের মেয়াদ সংক্রান্ত ধারায় বলা হয়েছে, এই আইন কার্যকর হওয়ার পর কোনও ব্যক্তি কোনও ব্যাংক কোম্পানির পরিচালক পদে টানা নয় বছরের বেশি থাকতে পারবেন না।

একই ধারায় বলা হয়, টানা নয় বছর পদে থাকার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তিন বছর অতিবাহিত না হলে তিনি পরিচালক পদে পুনঃনিযুক্তির জন্য যোগ্য হবেন না।

এই ধারার ব্যাখ্যায় বলা হয়, কোনও ব্যক্তি পরিচালক পদে তিন বছরের চেয়ে কম সময় অধিষ্ঠিত না থাকলে টানা নয় বছর হিসাবের ক্ষেত্রে উক্ত সময়েও অন্তর্ভুক্ত হবে।

বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে বলা হয়েছে, কোনও পরিবারের কেউ পৃথকভাবে ব্যবসা করলে এবং নিজেই করদাতা হলে, তাকে পরিবারের ওপর নির্ভরশীল বলা যায় না। বর্তমান বিধানে একক পরিবার থেকে পরিচালক পদে নিয়োগযোগ্য সদস্যসংখ্যা দু’জনে সীমিত। একক পরিবার থেকে দু’জনের স্থলে চার জনকে সুযোগ দেওয়া হলে এ সমস্যা অনেকাংশে দূর হবে।

‘ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১’ পাস হওয়ার পর থেকে বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে পরিচালকদের মেয়াদ-সম্পর্কিত ধারাটি পাঁচ বার সংশোধন করা হয়েছে। এই ধারায় ব্যাংকের পর্ষদে একজন পরিচালক কত বছর পরিচালক থাকতে পারবেন, সে কথা বলা রয়েছে। সর্বশেষ ধারাটি সংশোধন করা হয় ২০১৩ সালে। এবার ষষ্ঠবারের মতো সংশোধনের প্রস্তাব এসেছে। 

আইন সংশোধনের কারণ নিয়ে সংসদে লিখিত ব্যাখ্যায় অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বিদ্যমান আইনের কয়েকটি ধারায় অস্পষ্টতা রয়েছে। পরিচালনা পর্ষদের পরিচালকরা সংক্রান্ত তিনটি ধারায় অস্পষ্টতা দূর করা না হলে ব্যাংকগুলোর গতি বৃদ্ধির প্রচেষ্টা ব্যাহত হতে পারে বলে আশঙ্কা থেকে যায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘কোনও পরিবারের কেউ পৃথকভাবে ব্যবসা করলে এবং নিজেই করদাতা হলে তাকে পরিবারের ওপর নির্ভরশীল বলা যায় না।’

বিলটির ওপর জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব দিয়ে স্বতন্ত্র সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, ‘ফরাজী বলেন, বিলটি আমাদের বিস্মিত করেছে। ব্যক্তিস্বার্থের জন্য ৫ বার করা সংশোধন হয়েছে। জনস্বার্থের জন্য নয়। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত দেওয়ার কৌশল। পরিচালকরা ব্যাংকিং সেক্টরের উন্নতি চান না। আত্মীয়-স্বজনের নামে ঋণ নেয়। একসময় খেলাপি হয়ে যান। এই টাকা আদায় করা যায় না। কয়েকজন লুটেরার জন্য আইন সংশোধন করতে পারি না। তারা টাকা লুট করে বিদেশে পাঠান।’

অর্থমন্ত্রীর উদ্দেশে জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম বলেন, ‘‘যখন আপনি বলেন ‘রাবিশ’; এটা দেশপ্রেম, স্বাধীনতার চেতনা থেকে বলেন। যখন বলেন, ব্যাংকে সাগর চুরি হচ্ছে, সেটাও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে বলেন। আপনাকে বোঝানোর কিছু নেই। আপনি জাতির গর্ব। আপনার অভিজ্ঞতার কাছে আমাদের তুলনা হয় না। আমি বলবো না আপনার সুবোধ হোক। বলবো, চিন্তা প্রসারিত হোক।’’

সংসদে আনা বিলটি প্রত্যাহার করে দাবি জানিয়ে ফখরুল ইমাম বলেন, ‘ব্যাংককে কেউ নিজের বলে দাবি করতে পারে না। স্পন্সর ডিরেক্টরদের স্বার্থে যদি আইন করেন, তাহলে বাকি ৯০ ভাগকে বঞ্চিত করা হয়। বিলটা তুলে নিলে জাতি উপকৃত হবে।’

বিরোধী দলীয় হুইপ নুরুল ইসলাম ওমর বলেন, ‘একই ব্যক্তি এক পদে দীর্ঘদিন থাকলে আধিপত্য দেখা যায়। দিন দিন আমানতকারীদের সুবিধা কমানো হচ্ছে। আমানতকারীদের সুদের হার কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘ব্যাংকিং ব্যবস্থা ধ্বংসের মুখোমুখি। অর্থমন্ত্রী বিজ্ঞ ও অভিজ্ঞ। মানুষ এখন ব্যাংকে টাকা রাখতে ভয় পায়। ২০১৭ সাল ব্যাংক খাতের দুর্যোগময় অবস্থা। বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনও নিয়ন্ত্রণ আছে বলে মনে হয় না। ব্যাংক খাতকে সমূলে ধ্বংস করতে বিলটি আনা হয়েছে। বিলটি প্রত্যাহার করে নেওয়াই উচিত।’

রওশন আরা মান্নান বলেন, ‘ব্যাংক মালিকদের চাপে এই আইন সংশোধন করা হচ্ছে। দেশবাসী ব্যাংকিং খাত নিয়ে উদ্বেগে আছে।’

পরে অর্থমন্ত্রী বিলটির যৌক্তিকতা তুলে ধরে বলেন, ‘দেড় থেকে দুই বছর বিলটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কয়েকবছর ধরে আইনটি আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। সেই পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতেই সংশোধনের জন্য আনা হয়েছে। সংসদীয় কমিটিতে আলোচনা হয়েছে। সেখানে আমিও ছিলাম। অনেক কথার জবাব দিয়েছি। সংসদ সদস্যরা যে প্রস্তাব দিয়েছেন, তা প্রত্যাহার করে নেওয়ার অনুরোধ করছি।’

এরপর বিরোধী দলীয় প্রধান হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী দাঁড়িয়ে ফ্লোর চাইলে অধিবেশনে সভাপতিত্বকারী ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া বলেন, ‘বিল নিয়ে আলোচনার মধ্যভাগে এভাবে দাঁড়ানো কোনও রুল পারমিট করে না। আমি দিতে পারছি না বলে দুঃখিত।’

এ সময় ডেপুটি স্পিকার জাতীয় পার্টিকে উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা তো সংশোধনী প্রস্তাব দিয়েছেন। সেটা তো অর্থমন্ত্রী চাইলে গ্রহণও করতে পারেন। আপনাদের তো কার্যপ্রণালী বিধি মানতে হবে। আপনারা সংবিধান মানবেন না, কার্যপ্রণালী বিধি মানবেন না, এটা তো হতে পারে না।’ 

ডেপুটি স্পিকার এসময় তাদের সংশোধনী প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার সময় কথা বলার আহ্বান জানান। তবে তাজুল ইসলাম তার দলীয় সদস্যদের নিয়ে রাত ৭টা ৪০ মিনিটে ওয়াক আউট করেন। এ সময় স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজীও ওয়াক আউট করেন। পরে বিল পাস হওয়ার পর তারা সংসদে ফিরে আসেন।

এদিকে ওয়াক আউটের কারণ সম্পর্কে জাতীয় পার্টির চিফ হুইপ তাজুল ইসলাম বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলে দিয়েছেন, বিলটি পরিবর্তন, পরিবর্ধন করার সুযোগ নেই। সংশোধনী মানা সম্ভব নয়। আপনারা সংশোধনী প্রস্তাব প্রত্যাহার করেন। আমাদের বিল পাসের পুরো প্রক্রিয়ায় সংসদে থাকার উদ্দেশ্য ছিল। কিন্তু আমরা সংশোধনী দেওয়ার আগেই তিনি নাকচ করে দিয়েছেন। বলে দিয়েছেন মানা সম্ভব নয়। অর্থমন্ত্রী এটা বলতে পারেন না। যার প্রতিবাদে আমরা ওয়াক আউট করেছি।’

প্রসঙ্গত, সংসদে মঙ্গলবারের অধিবেশন শুরুর আগে  সচিবালয়ে সফররত বিশ্ব ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যানিটি ডিক্সন অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এই আইন পাস সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘এই আইন সম্পর্কে আমার আপত্তি ছিল। আপত্তি আছে। নিশ্চয়ই পাস করব। ক্যাবিনেট পাস করে দিয়েছে, আই হ্যাভ টু পাস ইট।’

/ইএইচএস/এসআই/এমএনএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষে বাস উঠে পড়লো রেললাইনে, ট্রেন থামিয়ে যাত্রীদের উদ্ধার
ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষে বাস উঠে পড়লো রেললাইনে, ট্রেন থামিয়ে যাত্রীদের উদ্ধার
আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেন তিন বিচারপতি
আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেন তিন বিচারপতি
চুরি করা গরুসহ ট্রাক থামিয়ে পালিয়ে যায় চোরেরা, আগুন ধরিয়ে দিলো জনতা
চুরি করা গরুসহ ট্রাক থামিয়ে পালিয়ে যায় চোরেরা, আগুন ধরিয়ে দিলো জনতা
বাংলাদেশ সফরের জিম্বাবুয়ে দলে অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেলের ছেলে
বাংলাদেশ সফরের জিম্বাবুয়ে দলে অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেলের ছেলে
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…