X
বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

চালের দাম বেড়েছে ১৭ টাকা, কমেছে ৭ টাকা

শফিকুল ইসলাম
১৬ জানুয়ারি ২০১৮, ২৩:২৫আপডেট : ১৭ জানুয়ারি ২০১৮, ১৯:৩৯

চালের বাজার (ছবি-ইন্টারনেট থেকে)

সম্প্রতি দেশে চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ১৭ টাকা। আর কমেছে ৭ টাকা। জাতীয় সংসদকে জানিয়েছেন স্বয়ং খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। সরকারের ভাষ্য অনুযায়ী, এখনও জনসাধারণকে প্রতি কেজি চাল কিনতে অতিরিক্ত ১০ টাকা গুনতে হচ্ছে। তাহলে চালের দাম কমেনি। এমন দাবি ক্রেতা সাধারণের।

গত ২০১৭ সালের মার্চের শেষ দিকে দেশের হাওরাঞ্চলের অকাল বন্যার অজুহাতে বাড়তে থাকে চালের দাম। সেপ্টেম্বরে তা ভয়ানক আকার ধারণ করে। সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত আমদানি ও শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্তে চালের বাজার কিছুটা স্থিতিশীল থাকলেও এখন আবার অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে। গত মার্চে ৩৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া মোটা চালের দাম এক সময়ে ৫৫ টাকায় ওঠে। সরকারের নানা উদ্যোগের ফলে কিছুটা কমে এখন তা আবার ৫০ থেকে ৫২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে , চালের দাম কমেছে। অঙ্কের হিসেবে দেখা গেছে, চালের দাম বেড়েছিল কেজিতে ১৭ টাকা। আর কমেছে ৭ টাকা। সরকারের ভাষ্য অনুযায়ী এখনও প্রতি কেজি চাল কিনতে ক্রেতাকে অতিরিক্ত গুনতে হচ্ছে ১০ টাকা। তাহলে প্রশ্ন, চালের দাম আসলে কি কমেছে?

সোমবার (১৫ জানুয়ারি) বিকেলে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে জাসদ দলীয় সংরক্ষিত সদস্য লুৎফা তাহেরের এক প্রশ্নের জবাবে খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেছেন, বর্তমানে খাদ্যশস্যের দাম স্থিতিশীল পর্যায়ে রয়েছে। বিশ্ববাজারে খাদ্যের দাম কমার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশেও খাদ্যশস্যের দাম কমেছে। বর্তমানে চালের দাম প্রতি কেজিতে ৪ থেকে ৭ টাকা কমেছে।

একই দিন আওয়ামী লীগ দলীয় সদস্য এম আবদুল লতিফের অপর এক প্রশ্নের জবাবে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, খাদ্যশস্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে সরকার কোনও ভর্তুকি দেয় না। ধান, চাল ও গম সংগ্রহের ক্ষেত্রে সরকার স্ব স্ব পণ্যের উৎপাদন খরচের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ধান, চাল ও গমের সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ করে থাকে।

তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরে বাজেটে অভ্যন্তরীণভাবে ১৬ লাখ মেট্রিক টন চাল ২ লাখ মেট্রিক টন গম সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছিলো। কিন্তু গত বোরো মৌসুমে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চাল সংগ্রহের অনিশ্চয়তা থাকায় খাদ্যশস্য আমদানির লক্ষ্যে বাজেটের নির্ধারিত ৬ লাখ মেট্রিক টনের অতিরিক্ত ৯ লাখ মেট্রিক টন অর্থাৎ সর্বমোট ১৫ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সংশোধিত বাজেটের আওতায় অভ্যন্তরীণভাবে ১৩ দশমিক ৩৭ লাখ মেট্রিক টন চাল ও ১ লাখ মেট্রিক টন গম ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সংশোধিত বাজেটের  ১৩ দশমিক ৩৭ লাখ মেট্রিক টন চাল ক্রয়ের লক্ষ্যে এরইমধ্যে ৫ দশমিক ৩৪ লাখ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করা হয়। আগামী জুনের মধ্যে অবশিষ্ট চাল চলতি আমন মৌসুম ও আগামী বোরো মৌসুমে সংগ্রহ করা হবে। এছাড়া ১ লাখ মেট্রিক টন গম আগামী এপ্রিল-জুন পর্যন্ত সময়ে সংগ্রহ করা হবে বলেও জানান খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের মার্চের শেষে হাওর অধ্যুষিত দেশের ৬ জেলায় পাহাড়ি ঢল ও অকাল বন্যায় বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষতির মধ্য দিয়ে শুরু হয় দেশে চাল সংকট। হাওরের বন্যাকে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করিয়ে ব্যবসায়ীরা চালের দাম কৃত্রিমভাবে বাড়িয়ে দেয়। সেই থেকে শুরু হওয়া চালের দাম বৃদ্ধির প্রবণতা এখনও পর্যন্ত স্থিতিশীল হয়নি। হাওরের বন্যার পানি কমতে থাকলেও এরই মধ্যে শুরু হয় দেশের ৩২ জেলায় বন্যা। এই বন্যা চালের সংকটকে ক্রমান্বয়ে তীব্রতর করেছে। এর ফলে ৩০ থেকে ৩২ টাকা কেজি দরের গরিবের মোটা চালের দাম তখন ৫০ থেকে ৫২ টাকায় উঠে। সরু চালের কেজি এখন ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। চালের বাড়তি দাম ঠেকাতে এর আগে চালের আমদানি শুল্ক ২৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতংশে নামিয়ে আনার পর প্রতিকেজি চালের দাম কমেছিল মাত্র ৫০ পয়সা থেকে ১ টাকা। অথচ দাম বেড়েছিল কেজিতে গড়ে ১০ টাকা।

বর্তমানে চালের সংকট মোকাবিলায় সরকারি নানা উদ্যোগের পরিপ্রেক্ষিতে চালের বর্ধিত দাম তেমনটি না কমলেও মোটামুটি স্থিতিশীল ছিল চালের বাজার। কিন্তু গত ২৫ আগস্ট থেকে দেশে রোহিঙ্গা ইস্যুটি আসায় আবার অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে চালের বাজার। গত ১০ দিনে চালের দাম আবার কেজিতে বেড়েছে ৪ থেকে ৬ টাকা। ফলে মোটা চালের কেজি আবার ৫০ থেকে ৫৫ টাকা ছুঁয়েছে।

বাজারে চাল দাম দাম কেজিতে বেড়েছিল কমপক্ষে ১০ টাকা। বিষয়টি নিয়ে মিডিয়ায় তোলপাড় শুরু হলে দেশের বাজারে চালের সরবরাহ সঠিক রাখতে এবং চালের সংকট মেটাতে চালের আমদানি শুল্ক কমানো এবং চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এরই মধ্যে আমদানি করা চালও দেশে এসে পৌঁছায়। এতে ওই সময় পাইকারি বাজারে চালের দাম কেজিতে কমেছিল মাত্র ৫০ পয়সা থেকে ১ টাকা।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চালের মোকাম বলে খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাজারে আবার বেড়েছে নতুন চালের দাম। এবছর আমন ধানের ভালো উৎপাদন হয়েছে বলে কৃষি বিভাগ দাবি করলেও কৃষকরা বলছেন অন্যকথা। ফলন খারাপ হওয়ায় এবং গ্রামের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ধান গুদামজাত করে রাখায় চালের দাম বাড়তে শুরু করেছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পরিসংখ্যানে দেখানো হয়েছে, গত এক বছরের ব্যবধানে মোটা চালের দাম বেড়েছে ১২ শতাংশ। আর মাসিক মূল্যের ভিত্তিতে মোটা চালের দাম বেড়েছে ১ দশমিক ৩৭ শতাংশ। বছর ভিত্তিতে টিসিবি দেখিয়েছে এক বছর আগে এ চালের কেজিপ্রতি দাম ছিল ৩২ থেকে ৩৪  টাকা। আর বাজারে বর্তমানে এ চালের দাম কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকা দরে। প্রতি কেজিতে মোটা চালের দাম বেড়েছে ১৬ টাকা।

অপরদিকে বাজার বিশ্লেষণকারী বেসরকারি সংস্থা কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) তার এক বিশ্লেষণে বলেছে, গত এক দশকে পাঁচ ধরনের চালের বাজার বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সব ধরনের চালের দাম ১০ বছরের ব্যবধানে দ্বিগুনেরও বেশি হয়েছে।

খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের দেওয়া তথ্য মতে,  ২০১৭ সালের মার্চ - আগস্ট পর্যন্ত এই ৬ মাসে মোটা চালের গড় দর ছিল ৩৮ টাকা ২২ পয়সা।  কিন্তু হঠাৎ করে ২০১৭ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর  প্রতিকেজি মোটা চালের দাম বেড়ে হয় ৪১ টাকা ৫০ পয়সা। ফলে এক মাসের ব্যবধানে মোটা চালের দাম বাড়ে ৪ থেকে ৫ টাকা।

অ্যাডভোকট কামরুল ইসলামের দেওয়া তথ্য মতে,  গত বছরের মার্চ মাসে প্রতিকেজি মোটা চালের দাম ছিল ৩৩ টাকা ২১ পয়সা। এপ্রিল মাসে মোটা চালের দর ছিল ৩৩ টাকা ৩৯ পয়সা। মে মাসে ৩৬ টাকা ৩৯ পয়সা। জুন মাসে ৩৮ টাকা ৩২ পয়সা। জুলাই মাসে ৩৮ টাকা ৭৭ পয়সা।  আগস্ট মাসে ৩৮ টাকা ২২ পয়সা।          

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে  বাবুবাজার- বাদামতলী চাউল আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ  নিজাম উদ্দিন আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, চালের মূল্য যে হারে বাড়ে সে হারে কমে না। চালের মূল্য কমাতে শুল্ক কমানো হলেও বেশি দামে চাল আমদানি করে ব্যবসায়ীরা সুবিধা করতে পারেনি। তাই আশা অনুযায়ী কমেনি চালের দাম।

এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, চালের দাম এখন অনেক কমেছে। চালের দাম সহনীয় রাখতে সরকার আমদানি শুল্ক ৪৮ শতংশ থেকে কমিয়ে মাত্র ২ শতাংশ রেখেছে। চালের দাম আর বাড়বে না। এখন আমনের মৌসুম। দাম আরও কমবে বলেও জানান বাণিজ্যমন্ত্রী।

তবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, চালের মুল্য বৃদ্ধি চেয়েছিলাম, তবে এতো নয়। মোটা চালের দাম কেজি প্রতি ৫০ টাকা হলে কিছু লোকের অসুবিধা হয়।

/এসআই/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আর্সেনালকে হতাশায় ভাসিয়ে সেমিফাইনালে বায়ার্ন
চ্যাম্পিয়নস লিগআর্সেনালকে হতাশায় ভাসিয়ে সেমিফাইনালে বায়ার্ন
টাইব্রেকারে ম্যানসিটির শিরোপা স্বপ্ন ভাঙলো রিয়াল
চ্যাম্পিয়নস লিগটাইব্রেকারে ম্যানসিটির শিরোপা স্বপ্ন ভাঙলো রিয়াল
গলায় কই মাছ আটকে কৃষকের মৃত্যু
গলায় কই মাছ আটকে কৃষকের মৃত্যু
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন: কোন পদে লড়ছেন কে
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন: কোন পদে লড়ছেন কে
সর্বাধিক পঠিত
‘ভুয়া ৮ হাজার জনকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে’
‘ভুয়া ৮ হাজার জনকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে’
হজ নিয়ে শঙ্কা, ধর্ম মন্ত্রণালয়কে ‍দুষছে হাব
হজ নিয়ে শঙ্কা, ধর্ম মন্ত্রণালয়কে ‍দুষছে হাব
এএসপি বললেন ‌‘মদ নয়, রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলাম’
রেস্তোরাঁয় ‘মদ না পেয়ে’ হামলার অভিযোগএএসপি বললেন ‌‘মদ নয়, রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলাম’
এবার নায়িকার দেশে ‘রাজকুমার’ 
এবার নায়িকার দেশে ‘রাজকুমার’ 
‘আমি এএসপির বউ, মদ না দিলে রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেবো’ বলে হামলা, আহত ৫
‘আমি এএসপির বউ, মদ না দিলে রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেবো’ বলে হামলা, আহত ৫