X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাংকে পড়ে আছে পিডিবির ৭ হাজার ৭০০ কোটি টাকা!

সঞ্চিতা সীতু
১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৯:৩৬আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ০১:৫১

 

ব্যাংকে পড়ে আছে পিডিবির ৭ হাজার ৭০০ কোটি টাকা! দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে প্রায় সাত হাজার ৭০০ কোটি টাকা ফেলে রেখেছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এই টাকা টাকা ব্যাংকে ফেলে রেখে দুই থেকে তিন শতাংশ হারে সুদ নিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। সম্প্রতি বিদ্যুৎ বিভাগের একটি পর্যালোচনায় পিডিবির আর্থিক স্বচ্ছতা নিয়ে এই প্রশ্ন উঠেছে। মোট সাত হাজার ৭৩৪ কোটি টাকার মধ্যে ঢাকার পিডিবি সদস্য (অর্থ পরিদফতর)-এর অধীনে রয়েছে ৫ হাজার ৬১৭ কোটি টাকা। বাকি অর্থ বিভিন্ন বিতরণ জোনের অধীনে ব্যাংক হিসেবে পড়ে রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, প্রতি মাসে পিডিবির রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ দুই হাজার ১০০ কোটি টাকা থেকে দুই হাজার ২০০ কোটি টাকা। আর প্রতিমাসে ব্যয় দুই হাজার ৪৫০ থেকে দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এতে প্রতিমাসে পিডিবির ঘাটতি থাকে ৩৫০ কোটি থেকে ৪০০ কোটি টাকা। ধরে নেওয়া হয়, পিডিবি তিন মাসের ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল (পরিচলন ব্যয়) হাতে রাখতে চায়। সেক্ষেত্রে সর্বোচ্চ তাকে এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা হাতে রাখতে হয়।

এ প্রসেঙ্গ বিদ্যুৎ বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, ‘পিডিবির প্রায় সব অর্থই শর্টটার্ম ডিপোজিটস (এসটিডি) হিসেবে রাখা হয়েছে। ব্যাংক ভেদে এমন আমানতের ওপর সুদের হার আড়াই থেকে তিন শতাংশ। অন্যদিকে এসব টাকা যদি ফিক্সড ডিপোজিট (এফডিআর) করে রাখা হতো, তাহলেও পিডিবি আর্থিকভাবে বেশি লাভবান হতো। এফডিআর-এ এখন বিভিন্ন ব্যাংক সর্বোচ্চ সাড়ে সাত ভাগ পর্যন্ত মুনাফা দিয়ে থাকে। যেখানে বছরের পর বছর কোনও কোনও লেনদেন নেই বা বছরে একবার বা দুই বার লেনদেন করা হয়েছে, সেখানে এসটিডির পরিবর্তে কেন এফডিআর হিসেবে টাকা রাখা হয়নি, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।’

পিডিবি বিদ্যুৎ বিভাগে সব শেষ যে হিসাব দিয়েছে, তাতে দেখা যায়, তাদের ঢাকার প্রধান কার্যালয়ের অধীনে পাঁচ হাজার ৬১৭ কোটি টাকা এসটিডি হিসাবে রেখেছে তারা। জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে পিডিবির কাছে এ বিষয়ে জবাব চাইলে সংস্থার চেয়ারম্যান প্রকৌশলী খালেদ মাহমুদ বলেন, ‘এমন তো হওয়ার কথা নয়, আমরা দেখছি বিষয়টি।’ ওই বৈঠকে থাকা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, এত বিপুল অঙ্কের টাকা ফেলে রাখার বিষয়টি তার জানা নেই।

এ বিষয়ে পাওয়ার সেলের পরিচালক আমজাদ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সরকারের উচিত পিডিবিকে ব্যবসা করার জন্য একটি পরিষ্কার ব্যালেন্সশিট দেওয়া। এসব দেনা পিডিবির পক্ষে পরিশোধ করা কোনও ক্রমেই সম্ভব না। সঙ্গতকারণেই এই দেনা সম্পর্কে একটি বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’

অভিযোগ রয়েছে, এমন সব ব্যাংকে এসব টাকা রাখা হয়েছে যাদের সঙ্গে বছরের পর বছর ধরে কোনও লেনদেনও করে না সরকারের লোকসানি এই প্রতিষ্ঠানটি।এদিকে ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে পিডিবির লোকসানের পরিমাণ ছিল তিন হাজার ৮৭৪ কাটি টাকা।আর ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা।চলতি বছর তাদের লোকসান কমাতে সরকারের কাছে ১০ হাজার কোটি টাকা চেয়েছে পিডিবি।

এ অবস্থায় জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আনু মুহম্মদ বলেন, ‘এভাবে ব্যংকে টাকা ফেলে রাখাটা উদ্দেশ্যমূলক। একদিকে পিডিবি বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সময় বারবার বলছে তারা লোকসান দিচ্ছে। কিন্তু অন্যদিকে ব্যাংকে পড়ে আছে অলস টাকা। এই টাকা পিডিবি যদি খরচ করতো তাহলে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রয়োজনই পড়তো না। এক দিকে তারা বেশি সুদে ঋণ নিয়ে প্রকল্প করছে অন্যদিকে তারা কম সুদে নিজেরদের টাকা ফেলে রেখেছে।’ এভাবে টাকা ফেলে না রেখে সুষ্ঠুভাবে তা বিভিন্ন প্রকল্পে ব্যয় করা হলে বিদ্যুতের দাম কমে আসতো বলে তিনি মনে করেন।

 

/এমএনএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
প্রার্থিতা নিয়ে মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা দলীয় নির্দেশনা না মানলে ব্যবস্থা
উপজেলা নির্বাচনপ্রার্থিতা নিয়ে মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা দলীয় নির্দেশনা না মানলে ব্যবস্থা
মোংলায় নামাজ পড়ে বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা
মোংলায় নামাজ পড়ে বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা
শিল্পকলায় মঞ্চায়িত হলো আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের ‘হি-রোজ’
শিল্পকলায় মঞ্চায়িত হলো আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের ‘হি-রোজ’
খারকিভে আবাসিক ভবনে রুশ হামলায় আহত ৬
খারকিভে আবাসিক ভবনে রুশ হামলায় আহত ৬
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
হংকং ও সিঙ্গাপুরে নিষিদ্ধ হলো ভারতের কয়েকটি মসলা
হংকং ও সিঙ্গাপুরে নিষিদ্ধ হলো ভারতের কয়েকটি মসলা