X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

পেঁয়াজের কেজি এখনও ৫০ টাকা!

শফিকুল ইসলাম
২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ২১:৪৫আপডেট : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ০৬:২০

 

 ভারত পেঁয়াজ রফতানির ন্যূনতম মূল্য (এমইপি) তুলে নেওয়ার পরও বাংলাদেশের খুচরা বাজারে তার প্রভাব পড়েনি। এখনও দেশে  প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে সর্বনিম্ন ৫০ টাকা কেজি দরে। এলাকা ও বাজার ভেদে কখনও ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরেও বিক্রি হতে দেখা গেছে। আর আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। অথচ গত বছরের (২০১৭) জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে পেঁয়াজের মূল্য ছিল ২৭ থেকে ৩০ টাকা। বছরের শেষ দিকে ডিসেম্বর মাসে পেঁয়াজের মূল্য সর্বোচ্চ দাড়িয়েছিল ১৩০ টাকা পর্যন্ত। এদিকে এ বছরের পেঁয়াজের মৌসুমে ক্রেতারা বাড়তি দামের অভিযোগ করলেও তা মানতে নারাজ সরকার। সরকারের দাবি, বর্তমানে পেঁয়াজের দাম সহনীয় পর্যায়ে আছে।

রাজধানীর কাওরানবাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভরা মৌসুমেও উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলো ও ফরিদপুরের বাজারে পেঁয়াজের দাম কমেনি। পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এবার বৃষ্টিতে ফলন কিছুটা নষ্ট হয়েছে। তাই বাড়তি উৎপাদনের পেঁয়াজ কৃষক ঘরে তুলতে পারেনি। তাই দাম অন্যান্য বছরের মতো এবারও কমবে না।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বগুড়ার শেরপুরের কৃষক আবদুল জলিল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,  ‘শুরুতে ফলন ভালো ছিল। কিন্তু মাঠ থেকে ফসল ঘরে তোলার আগ মুহূর্তে বৃষ্টিতে ফসল নষ্ট হয়েছে। তাই এ বছর পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হয়নি।’

এদিকে রাজধানীর শ্যামবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী আবদুর রাজ্জাক খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘একটি সিন্ডিকেট যেকোনও অজুহাতে পেঁয়াজের বাজারকে অস্থির করার চেষ্টায় থাকে। তারাই আগে বলেছে, ভারতে দাম বেশি হওয়ায় দেশে পেঁয়াজের দাম কমবে না। কিন্তু এখন পেঁয়াজের রফতানি মূল্য প্রত্যাহার করলেও বাংলাদেশে দাম কমছে না। এই ভরা মৌসুমে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৩০-৩৫ টাকার বেশি হওয়া উচিত নয়। কিন্তু খুচরা বাজারে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৫ টাকায়।’

এদিকে ব্যবসায়ীরা যে দামে ভারতীয় পেঁয়াজ কিনবেন, সেই দামেই রফতানি করতে পারবেন বলে আদেশ দিয়েছে ভারতের রফতানি নিয়ন্ত্রক সংস্থা ন্যাশনাল এগ্রিকালচার কো-অপারেটিভ মার্কেটিং ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া। ফলে এখন পেঁয়াজে ভারতের আর কোনও ন্যূনতম রফতানি মূল্য থাকলো না।

কারণ জানতে চাইলে কাওরানবাজারের পাইকারি ব্যাবসায়ী আতিকুর রহমান বাংলা ট্রিবিউকে বলেন, ‘ভারত সরকার যখন পেঁয়াজের রফতানি মূল্য বাড়ায়, তখন বাংলাদেশেও বাড়ে। কিন্তু ভারত কমালে এর প্রভাব বাংলাদেশের বাজারে পড়ে না। ফেব্রুয়ারিতেও যদি পেঁয়াজের দাম ৪০ টাকার নিচে না নামে, তাহলে আর নামবে কবে?’

উল্লেখ্য, গত দুই মাসে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বেড়ে দাঁড়ায় টন প্রতি ৮৫০ ডলার। সম্প্রতি ভারত সরকার বাংলাদেশে রফতানিকৃত পেঁয়াজের ন্যূনতম রফতানিমূল্য পুরোপুরি প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর কমতে থাকে পেঁয়াজের দাম।

জানা গেছে, ভারতে পেঁয়াজের সবচেয়ে বড় আড়ত লাসাগাঁও এবং নাসিকে পেঁয়াজের দাম কমতে থাকে। প্রতি কুইন্টাল (১০০ কেজি) পেঁয়াজের দাম কমে ৯শ’ রুপিতে নেমে যায়। অর্থাৎ আড়তে প্রতি কেজির দাম ৯ রুপি, বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১১ টাকা। নাসিক ছাড়া অন্য আড়তেও পেঁয়াজের দাম কমেছে।

বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ আমদানি হয় ভারতের মহারাষ্ট্রের লাসাগাঁও ও নাসিক থেকে। ভারতের বাজারে দামে ধস নামলেও দেশের আড়তে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। অথচ ভারতে পেঁয়াজের দাম বাড়ার সঙ্গে-সঙ্গে দেশের বাজারে হু হু করে বাড়ে। কিন্তু ভারতে কমলেও দেশে কমার কোনও লক্ষণ নেই।

সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবি বলছে, গত সপ্তাহের তুলনায় পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ টাকা কমে ৫০ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

গত বছর জুলাইয়ের শেষভাগে হঠাৎ করে বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজি প্রতি ২০-২৫ টাকা থেকে বেড়ে ৫০ টাকার ওপরে ওঠে। এর মধ্যে পরিস্থিতি সামলাতে ভারতের বিকল্প হিসেবে মিশর থেকে পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়।

এরপর অতিবৃষ্টির ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে পেঁয়াজের দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হলে দেশটির সরকার রফতানি মূল্য (এমইপি) বাড়িয়ে দেয়। ফলে আরেক দফা ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। তখন দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১২০-১৩০ টাকা পর্যন্ত ওঠে।

এদিকে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ জাতীয় সংসদে বলেছেন, ‘পেঁয়াজের উৎপাদন, আমদানি ও বিপণন ব্যবস্থায় কিংবা এর দাম বৃদ্ধির পেছনে কোনও ধরনের সিন্ডিকেট কাজ করেনি। বাংলাদেশে পেঁয়াজ আমদানির মূল উৎস হচ্ছে ভারত। সেখানে উত্তর প্রদেশ ও মহারাষ্ট্রে অনাকাঙ্ক্ষিত বন্যার কারণে উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ভারত প্রতি মেট্রিক টন পেঁয়াজের সর্বনিম্ন রফতানি মূল্য ৮৫০ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করে। ফলে স্থানীয় বাজারে পেঁয়াজের মূল্য অস্বাভাবিকহারে বেড়েছিল। এখন তা ক্রমশ কমছে।’ আরও কমবে বলে জানান তিনি।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে,  বাংলাদেশে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ২২ থেকে ২৫ লাখ মেট্রিক টন। স্থানীয় উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রক্রিয়াজাতকরণ ঘাটতি বাদে প্রায় ১৭ লাখ ৫ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজের উৎপাদন হয়েছে। দেশে বাৎসরিক চাহিদার তুলনায় পেঁয়াজের উৎপাদন ঘাটতি প্রায় ৭ লাখ মেট্রিক টন। এই ঘাটতি আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হয়।

হিলি বন্দর সূত্রে জানা গেছে, এ সংক্রান্ত নির্দেশনা শুক্রবার বিকেলে হিলি কাস্টমসে এসে পৌঁছেছে। কাস্টমসের সার্ভারে তা দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে এখন থেকে পেঁয়াজ রফতানিতে আর কোনও ন্যূনতম রফতানি মূল্য থাকলো না। এর ফলে ব্যবসায়ীরা যে দামে পেঁয়াজ কিনবেন, সেই দামেই রফতানি করা যাবে। তবে শনিবার ব্যাংক বন্ধ থাকার কারণে নতুন মূল্যে এলসি খোলা যায়নি। এ কারণে শনিবার বন্দর দিয়ে পুরনো দামেই পেঁয়াজ আমদানি হয়। রবিবার ব্যাংক খুললে নতুন মূল্যে এলসি খোলা যাবে এবং বন্দর দিয়ে নতুন মূল্যে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হবে।

জান গেছে, ভারতের নরেন্দ্র মোদী সরকারের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দেশটির কৃষিপণ্যের রফতানি আরও বাড়ানোর লক্ষ্যে পেঁয়াজের এমইপি কমানো হয়েছে।

/এমএনএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ঢাকা ছেড়েছেন কাতারের আমির
ঢাকা ছেড়েছেন কাতারের আমির
জাহাজেই দেশে ফিরবেন এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিক
জাহাজেই দেশে ফিরবেন এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিক
তাপপ্রবাহের গেটওয়ে যশোর-চুয়াডাঙ্গা, টানা ৪ দিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
তাপপ্রবাহের গেটওয়ে যশোর-চুয়াডাঙ্গা, টানা ৪ দিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
৭ দফা আবেদন করেও প্রশাসনের সহায়তা পায়নি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট
৭ দফা আবেদন করেও প্রশাসনের সহায়তা পায়নি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট