X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাংক খাতে অবহেলিত বাংলা

গোলাম মওলা
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৪:০১আপডেট : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ০৮:৩৪

 

 

 




ব্যাংক দেশের ব্যাংকিং খাতে মাতৃভাষা বাংলা চরমভাবে অবহেলিত। বাংলা আন্তর্জাতিক ভাষা হওয়া সত্ত্বেও ব্যাংক খাতে ইংরেজি ভাষার দাপট চলছে যুগের পর যুগ। নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংকও ইংরেজির দাপট থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ৫৭টি ব্যাংকের মধ্যে ৪৮টি ব্যাংকই দেশি উদ্যোক্তাদের। এছাড়া আমানতকারীদের মধ্যে বাঙালি গ্রাহকের সংখ্যা ১০ কোটিরও বেশি। শুধু তাই নয়, যারা এই খাত থেকে ঋণ নিচ্ছেন, তারাও শতভাগ বাঙালি। অথচ ব্যাংক খাতের যাবতীয় দালিলিক কর্মকাণ্ড চলছে ইংরেজি ভাষায়। ব্যাংকের পর্ষদে উপস্থাপন হচ্ছে ইংরেজি ভাষার বিভিন্ন ডকুমেন্ট। কোটি কোটি গ্রাহককে বাংলার পরিবর্তে ইংরেজি কাগজে সই করতে হচ্ছে। তাদের লেনদেনও করতে হয় ইংরেজি ফরমে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ এক কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে লেনদেনের ক্ষেত্রে ইংরেজি জরুরি হলেও দেশের অভ্যন্তরীণ লেনদেনের ক্ষেত্রে ইংরেজি একেবারেই জরুরি নয়। তিনি বলেন, দেশের অভ্যন্তরীণ সব ধরনের লেনদেন, ডকুমেন্ট ও আদেশ-নির্দেশ বাংলা ভাষায় হওয়া উচিত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাষ্ট্রায়ত্ত কয়েকটি ব্যাংকে সীমিত আকারে বাংলা ভাষার ব্যবহার চললেও বেশিরভাগ ব্যাংকের কার্যক্রম চলছে ইংরেজিতে। বাংলাদেশ ব্যাংক এক্ষেত্রে কোনও ভূমিকাই রাখতে পারছে না। বরং দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকটিতেও বাংলা ভাষা উপেক্ষিত রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সব বিভাগের নামই রাখা হয়েছে ইংরেজিতে। ব্যাংকটির প্রজ্ঞাপন জারি থেকে শুরু করে অধিকাংশ প্রতিবেদন ইংরেজিতে তৈরি করা হয়। ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয় ইংরেজিতেই।

অবশ্য গত বছর ব্যাংক খাতে বাংলার ব্যবহার বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু উদ্যোগ নিলেও বাস্তবে তা খুব বেশি কাজে আসেনি। গত বছরের ১ এপ্রিলের মধ্যে সব ব্যাংককে হিসাব খোলার অভিন্ন আবেদন ফরম ও গ্রাহক পরিচিতি সম্পর্কিত ফরম চালু করার নির্দেশ দিয়েছিল বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।

বিএফআইইউ’র নির্দেশ অনুযায়ী, হিসাব খোলার আবেদন ফরম ও গ্রাহক পরিচিতি বাংলা অথবা ইংরেজি অথবা উভয় ভাষায় মুদ্রণ করার কথা বলা হয়েছিল।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র জি এম আবুল কালাম আজাদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ব্যাংক খাতে বাংলার ব্যবহার আরও বাড়ানো জরুরি। বিশেষ করে দেশের অভ্যন্তরীণ লেনদেনের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো ইচ্ছে করলে গ্রাহকদের সঙ্গে বাংলা ভাষায় করসপন্ডিং করতে পারে। তবে বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে ইংরেজিতেই করসপন্ডিং করতে হয়। ফলে এক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষাটাও গুরুত্বপূর্ণ।’

অবশ্য রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, অগ্রণী, জনতাসহ কয়েকটি ব্যাংকের কার্যক্রম বাংলায় পরিচালিত হচ্ছে। তবে বিদেশি ও বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর আবেদনপত্র ও বিভিন্ন দলিলে বাংলার অনুপস্থিতির কারণে অনেকেই সমস্যায় পড়েন। যদিও সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রচলনের জন্য আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। জাতীয় সংসদে বাংলা ভাষা প্রচলন আইনও পাস হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান আরাস্তু খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ইসলামী ব্যাংকে বিদেশি শেয়ারহোল্ডার থাকার কারণে আমাদের বোর্ডে সব কাগজপত্রই উপস্থাপন হয় ইংরেজিতে। তবে গ্রাহক পর্যায়ে বাংলা ভাষার প্রচলন বাড়ানো দরকার।’ তিনি মনে করেন, যেসব ব্যাংকে বিদেশিদের কোনও অংশ নেই, তারা বাংলা ভাষার ব্যবহার বাড়াতে পারে।

বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে বাংলার প্রচলন না থাকার কারণে  সাধারণ মানুষকেও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে এ নিয়ে। কেউ ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে চাইলে তাকে কয়েকটি ইংরেজি ফরম দেওয়া হয়। স্বল্পশিক্ষিতদের পক্ষে এটা পূরণ করা সম্ভব নয়। এসব ফরমে ২০টিরও বেশি স্বাক্ষর দিতে হলেও সেখানে কী কী শর্ত লেখা থাকে, তা অনেকেই বুঝতে পারেন না।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ব্যাংক খাতে বাংলা ভাষার ব্যবহার আগের চেয়ে হয়তো কিছু বেড়েছে। তবে আরও বাড়ানো জরুরি।’ তিনি উল্লেখ করেন, ‘এ খাতে বাংলার প্রচলন বৃদ্ধি করা গেলে আমাদের মর্যাদা আরও বাড়বে।’

জানা গেছে, দেশের ৫৭টি তফসিলভুক্ত ব্যাংকের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি ব্যাংকের হিসাব খোলার আবেদনপত্র ইংরেজিতে লেখা। ব্যাংক খাতে লেনদেনের অন্যতম ঋণপত্রের (এলসি) আবেদন, ঋণ বা বিনিয়োগ আবেদন, আমানত জমাপত্র বা ভাউচার, লকারে সম্পদ রাখার আবেদন ফরম, চেক বইয়ের জন্য আবেদনপত্র, চেক বই, টাকা স্থানান্তরপত্র, আরটিজিএস ফরম এবং বিভিন্ন স্কিমের আবেদনপত্রও ইংরেজিতে লেখা। ব্যাংকগুলোর ওয়েবসাইটেরও একই অবস্থা। প্রায় সব সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের ওয়েবসাইটে যাবতীয় তথ্য লেখা থাকে ইংরেজিতে। ব্যাংকের পরিচিতি, বিভিন্ন ঋণপণ্য ও আমানতের তথ্যও থাকে ইংরেজিতে।

যদিও প্রতিবেশী দেশ ভারতে ব্যাংকগুলোতে প্রতিটি কাগজপত্র তিনটি ভাষায় লেখা হয়। ব্যাংকের শাখা যে রাজ্যে, সেই রাজ্যের নিজস্ব ভাষার পাশাপাশি রাষ্ট্রভাষা হিন্দি ও ইংরেজিতে লেখা থাকে সবকিছু।

 

/জিএম/এপিএইচ/চেক-এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
এমপি দোলনের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ, সাংবাদিক আহত
এমপি দোলনের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ, সাংবাদিক আহত
চরের জমি নিয়ে সংঘর্ষে যুবলীগ কর্মী নিহত, একজনের কব্জি বিচ্ছিন্ন
চরের জমি নিয়ে সংঘর্ষে যুবলীগ কর্মী নিহত, একজনের কব্জি বিচ্ছিন্ন
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
কান উৎসব ২০২৪জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া