X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রস্তুতি ছাড়াই বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটার, বেড়েছে গ্রাহক ভোগান্তি

সঞ্চিতা সীতু
১৫ মার্চ ২০১৮, ০৭:৫১আপডেট : ১৫ মার্চ ২০১৮, ১১:৪০

প্রিপেইড মিটার

কোনও ধরনের প্রস্তুতি ছাড়াই প্রিপেইড মিটারে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন গ্রাহকরা। তারা বলছেন, প্রিপেইড মিটারে বিদ্যুৎ বিল দিতে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। এতে সুবিধার চেয়ে ভোগান্তিই বেড়েছে বেশি। এ সমস্যা দূর না করে প্রিপেইড মিটারে বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়ানো হলে ভোগান্তি আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। তবে কর্তৃপক্ষ বলছেন, আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে গ্রাহকদের এই ভোগান্তি কমে আসবে।

বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটারের গ্রাহকরা বলছেন, আগে বিদ্যুৎ ব্যবহারের পরে বিল দিতে হলেও এখন তারা বিল দিচ্ছেন বিদ্যুৎ ব্যবহারের আগেই। অথচ বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে গিয়ে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে তাদের।

রবিবার (১১ মার্চ) রাজধানীর আজিমপুর বাসস্ট্যান্ডের কাছে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) ভেন্ডিং স্টেশনে গিয়ে দেখা যায় লম্বা লাইন। লাইনে দাঁড়ানো গ্রাহক মামুন রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি ভাড়া বাসায় থাকি। আগে মালিকের কাছে মাস শেষে বিদ্যুৎ বিল দিলেই ঝামেলা মিটে যেত। এখন হচ্ছে উল্টোটা। নিজের বিল নিজেকেই দিতে হচ্ছে। একদিকে অফিস, অন্যদিকে বিদ্যুৎ বিল দেওয়ার বিড়ম্বনা। এর ওপর লম্বা লাইন।’ সবকিছু মিলিয়ে নতুন এই পদ্ধতিকে ভোগান্তি মনে করছেন মামুন।

প্রিপেইড মিটারে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধে ভোগান্তির অভিযোগ করেছেন রাজধানীর উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরের বাসিন্দা সুমী ইসলাম। তিনি বলেন, ‘অফিস দিন ছাড়া বিল দেওয়া সম্ভব নয়। তাই আমাকেই আসতে হচ্ছে রিচার্জ করতে। এটি একটি বাড়তি বিড়ম্বনা। গ্রীষ্মের সময় বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়লে লাইনও লম্বা হবে। এর আগেই সহজ কোনও পথ বের করা উচিত, যেন ঘরে বসেই বিল দেওয়া যায়।’

রাজধানীর বেশিরভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে ডিপিডিসি। প্রতিষ্ঠানটির আড়াই লাখ প্রিপেইড মিটার রয়েছে, যা মোট গ্রাহকের প্রায় এক-চতুর্থাংশ। পর্যায়ক্রমে সব গ্রাহককে প্রিপেইড মিটার সরবরাহের পরিকল্পনা নিয়েছে ডিপিডিসি। গ্রাহকদের আশঙ্কা, বিল দেওয়ার নিয়ম সহজ না করে প্রিপেইড মিটারে বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়ানো হলে এই ভোগান্তি আরও বাড়বে।

সরকারের পরিকল্পনায় বলা হচ্ছে, ২০২১ সালের মধ্যে বিদ্যমান ও নতুন মিলিয়ে দুই কোটি ২০ লাখ গ্রাহক প্রিপেইড মিটার পাবেন। এছাড়া পর্যায়ক্রমে দেশের সব গ্রাহককে নিয়ে আসা হবে প্রিপেইড মিটারের আওতায়। অর্থাৎ আগামী পাঁচ বছরের মধ্যেই সারাদেশে ব্যাপকভাবে প্রিপেইড মিটার ছড়িয়ে পড়বে। দেশে বর্তমানে বিদ্যুতের গ্রাহক সংখ্যা ২ কোটি ৭০ লাখের কাছাকাছি। এর বাইরে প্রতিমাসেই প্রায় সাড়ে তিন লাখ নতুন গ্রাহককে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হচ্ছে।

বিতরণ সংস্থা বলছে, প্রিপেইড মিটারে বিদ্যুৎ সরবরাহের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে বিদ্যুৎ ব্যবহারের আগেই গ্রাহক বিল পরিশোধ করে থাকেন। এতে গ্রাহকের কোনও অর্থ বকেয়া থাকে না। এই পদ্ধতিতে গ্রাহক অনুমোদিত লোডের বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারেন না। এতে বিদ্যুৎ চুরি ও সিস্টেম লসের পরিমাণ কমে আসে। সামগ্রিকভাবে বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আসে। তবে বিল পরিশোধের জন্য ভেন্ডিং স্টেশনের সংখ্যা কম থাকায় এই সুবিধা গ্রাহকদের কাছে ভোগান্তি হয়ে এসেছে।

বুধবার (১৪ মার্চ) রাজধানীর আসাদ গেটে ডিপিডিসির আরেকটি ভেন্ডিং স্টেশনে গিয়েও বিদ্যুৎ বিল আদায়ে একই ধরনের ভোগান্তির চিত্র দেখা গেছে। এখানে বিল দিতে আসা গ্রাহক মোরশেদ রহমান জানালেন, বিল দিতে এলে সেদিন আর কোনও কাজ করা যায় না। লম্বা লাইনে দাঁড়ানো অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এই গ্রাহক জানালেন, মাসের প্রায় প্রতিদিনই এরকম লাইন পাওয়া যায়। তবে মাসের শুরু ও শেষের দিকে লাইনটি লম্বা হয়।

এখানে দাঁড়িয়ে থাকা আরেক গ্রাহক নাজমা হক বলেন, ‘আমাদের তো লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে বিল দেওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় নেই।’ তিনি মনে করেন, সরকার বিল দেওয়ার এই পদ্ধতি সহজ না করলে ভোগান্তি দিনের পর দিন বাড়বে। এই গ্রাহক বলেন, ‘সারাদেশের প্রায় ১০ কোটি গ্রাহক মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন। তাদের রিচার্জ করার সময় তো এভাবে লাইন ধরতে হয় না। তাহলে বিদ্যুতের বিল পরিশোধের জন্য কেন লাইন ধরতে হবে?’

গ্রাহকদের এই ভোগান্তির অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বলেন, ‘কিছু সমস্যা হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি সেগুলোর সমাধান করতে। এর মধ্যে একটি মোবাইল ফোন অপারেটরের সঙ্গে চুক্তিও হয়েছে। অন্য আরও মোবাইল ফোন কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করা হবে।’ শিগগিরই এই সমস্যার সমাধান হবে বলে তিনি জানান।

ডেসকোর ভোগান্তি কম বলে দাবি করেন সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহীদ সারওয়ার। তিনি বলেন, ‘ডিপিডিসির গ্রাহক সংখ্যা অনেক বেশি। সে তুলনায় ডেসকোর কম। যদিও এখন গ্রাহক সংখ্যা বাড়ছে। আর ডেসকোর গ্রাহকদের বেশিরভাগই প্রিপেইড মিটারের আওতায়।’

শাহীদ সারওয়ার বলেন, মাসের শুরুতে ও শেষদিকে বেশিরভাগ গ্রাহক বিল দিতে যান। এতে বুথগুলোতে লম্বা লাইন হলেও কয়েকটি কাউন্টার থাকার কারণে তাতে খুব একটা ভোগান্তি  হচ্ছে না বলে দাবি করেন তিনি।

প্রিপেইড মিটারের ভোগান্তির বিষয়টি বিদ্যুৎ বিভাগের নজরে এসেছে জানিয়ে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেইন বলেন, ‘আমরা পেমেন্ট গেটওয়ে তৈরি করছি। দেশে মোবাইলে যেভাবে রিচার্জ করা হয়, একইভাবে পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিলও দেওয়া যাবে। আশা করছি এই কাজ শেষ করতে দুই থেকে তিন মাস সময় লাগবে। এরপর গ্রাহকদের ভোগান্তি কমে আসবে।’

 

/টিআর/এমএনএইচ/চেক-এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
নাগরিক জীবনের সব ক্ষেত্রে পুলিশের অবস্থান রয়েছে: ডিএমপি কমিশনার
নাগরিক জীবনের সব ক্ষেত্রে পুলিশের অবস্থান রয়েছে: ডিএমপি কমিশনার
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
মহাকাশে অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধে জাতিসংঘের ভোটে রাশিয়ার ভেটো
মহাকাশে অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধে জাতিসংঘের ভোটে রাশিয়ার ভেটো
তামাক কর বাস্তবায়নে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ তরুণের অকালমৃত্যু প্রতিরোধ সম্ভব
তামাক কর বাস্তবায়নে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ তরুণের অকালমৃত্যু প্রতিরোধ সম্ভব
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না