X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কারখানাগুলো এখন শতভাগ কমপ্লায়েন্স

শফিকুল ইসলাম
১৬ মার্চ ২০১৮, ২০:৫৮আপডেট : ১৭ মার্চ ২০১৮, ১৮:১২

তৈরি পোশাক খাত (ছবি: সংগৃহীত) দেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি তৈরি পোশাক শিল্পের কারখানাগুলো এখন পুরোপুরি কমপ্লায়েন্স। অর্থাৎ এসব কারখানার মালিক ও শ্রমিক উভয়ের জন্যই চমৎকার কর্মপরিবেশ বিরাজ করছে। ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন নতুন ব্র্যান্ড। এ শিল্পের হাত ধরে বাংলাদেশ বিশ্ববাজারে পেয়েছে নতুন পরিচিতি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন,তাজরীন ও রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর সব ধরনের নেতিবাচক পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প। দেশের বেকার সমস্যার সমাধান, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান বিশেষ করে নারীদের কর্মসংস্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এই শিল্প। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ও জিডিপিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে।

তৈরি পোশাক শিল্পের সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে এর কাঁচামাল হিসেবে বস্ত্র, সুতা, আনুষঙ্গিক উপকরণ, প্যাকেজিং ইত্যাদি শিল্পেরও প্রসার ঘটেছে। এর বাইরেও চাহিদা বেড়েছে পরিবহন, ব্যাংকিং, শিপিং ও ইন্স্যুরেন্স সেবার।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশের তৈরি পোশাক শিল্পের কারখানাগুলোকে শ্রমিকদের জন্য পুরোপুরি কর্মপরিবেশ ফিরিয়ে আনতে অর্থাৎ কারখানাগুলোকে পুরোপুরি কমম্লায়েন্স করতে দুই ধরনের বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এর একটি সামাজিক (সোশ্যাল) ও অন্যটি নিরাপত্তা বিষয়ক (সেফটি)।

বেসরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি এ খাতের উন্নয়নে সরকারের পক্ষ থেকেও নানা ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শ্রমিকদের নিরাপত্তা বিধানে সরকার অবকাঠামো নির্মাণ, অগ্নি নির্বাপণ, কর্মপরিবেশ উন্নয়ন, ন্যূনতম বেতন ভাতা নির্ধারণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে শ্রমিকদের স্বার্থে যেমন আইন প্রণয়ন করেছে, তেমনি রফতানিকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে রফতানি খাতে কর সুবিধাসহ নানা ধরনের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। দুর্ঘটনা প্রতিরোধে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়ার পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কারখানাকে সোশ্যাল কমপ্লায়েন্স হতে হলে দেশের শ্রম আইন অনুসারে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা শ্রমিককে দিতে হয়। বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা থাকতে হয়। আধুনিক সুবিধার বাথরুমসহ স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হয়। নারী শ্রমিকদের শ্রম আইন অনুসারে মাতৃত্বকালীন সুবিধা পাওয়া, নারী শ্রমিকদের শিশু সন্তানদের জন্য ডে কেয়ার সেন্টার থাকতে হয়। শ্রমিকদের খাওয়ার জন্য পরিবেশসম্মত ডাইনিং রুম থাকতে হয়। এর সবগুলোই নিশ্চিত করা হয়েছে।

এ ছাড়া শ্রম আইন অনুসারে শ্রমিকদের অধিকার ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে। আর ইপিজেডে স্থাপিত কারখানাগুলোর শ্রমিকদের কল্যাণে বা তাদের অধিকার আদায়ে সেখানে কাজ করছে ওয়ার্কার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন।

আর কারখানাকে নিরাপদ রাখতে নিশ্চিত করতে হয় সেফটি কমপ্লায়েন্স। এর প্রথমটি অবকাঠামোগত, অন্যটি কারখানায় কখনও আগুন লাগলে তা থেকে শ্রমিকদের জীবনরক্ষা সংক্রান্ত। অর্থাৎ কারখানার ভবনটি হতে হবে শতভাগ নিরাপদ। কখনও দুর্ঘটনাবশত কারখানায় আগুন লাগলে শ্রমিকরা যাতে নিরাপদে বের হয়ে যেতে পারেন, সে জন্য বিকল্প সিঁড়ি এবং পথ থাকতে হবে। আগুন নেভানোর জন্য ফায়ার এস্টিংগুইশারসহ আধুনিক যন্ত্রপাতি থাকতে হবে। কোনও কারখানার ভবন যদি পাঁচতলার ওপরে হয় এবং কারখানার প্রশস্ততা ২২ হাজার বর্গফুটের বেশি হয় তাহলে স্প্রিংকিলার বসাতে হয়। এর মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পানি সরবরাহ করা যায়। আর স্বাভাবিকভাবে আগুন নেভানোর ফায়ার হাইড্রেন সিস্টেম তো থাকতে হবেই। ফায়ার রেজিসটেন্স ডোর, ধোঁয়ায় দেখা যায় সিঁড়িতে এমন আলোর ব্যবস্থাও থাকতে হবে। এ ছাড়া আগুনের উৎসস্থল জানার জন্য ফায়ার ডিটেক্টর বোর্ড সিস্টেম থাকতে হবে।

এ ছাড়া কারখানার ওয়ার্কি প্লেসে কোনও জিনিসপত্র রাখা যাবে না। কোনও কারখানায় বয়লার থাকলে তা ঠিকভাবে আছে কিনা তা প্রতিবছর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে টেস্ট করাতে হবে।

জানতে চাইলে বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কারখানা এখন শতভাগ কমপ্লায়েন্স। তাজরীন ও রানা প্লাজা ধ্বসের পর বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত ঘুরে দাঁড়িয়েছে। সব ধরনের নেতিবাচক ধারনা পাল্টে দিয়ে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশ এখন নতুন ব্রান্ডের নাম।’

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্পের প্রাথমিক যাত্রা শুরু হয় সত্তর দশকে। বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাকের প্রথম চালানটি রফতানি হয় ১৯৭৮ সালে। ১৯৮১-৮২ সালে মোট রফতানি আয়ে এই খাতের অবদান ছিল মাত্র এক দশমিক এক শতাংশ। ২০১০ সালের তৈরি পোশাক শিল্পের অবদান দাঁড়িয়েছে মোট রফতানি আয়ের ৭৬ শতাংশে। আন্তর্জাতিক বাজারে পোশাক শিল্প দেশের জিডিপির ১৩ শতাংশ অবদান রাখছে।

বাংলাদেশ রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৯-৯০ অর্থবছর এই খাতে আয় হয়েছে মাত্র ৬২ কোটি ডলার। ১৯৯৪-৯৫ অর্থবছরে তৈরি পোশাক খাতে রফতানি আয় ২২৩ কোটি ডলারে উন্নীত হয়। ২০০৮ সালে বিশ্বমন্দা দেখা দেওয়ার পর তৈরি পোশাক রফতানি কমে যাবে এমন আশঙ্কা করা হচ্ছিল। চীন, মেক্সিকো, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশে তৈরি পোশাক রফতানি কমেছিল। ২০১১-১২ অর্থবছরে পোশাক রফতানির পরিমাণ ছিল ১৯ হাজার ৮৯ দশমিক ৭৩ মিলিয়ন ডলার। ২০১২-১৩ অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১ হাজার ৫১৫ দশমিক ৭৩ মিলিয়ন ডলারে এবং ২০১৩-১৪ অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত এর পরিমাণ ছিল নয় হাজার ৬৫৩ দশমিক ২৫ মিলিয়ন ডলার।

বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৫০০০ এর ওপর গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি রয়েছে। ৯০ দশকে নারীদের ব্যাপক অংশগ্রহণে এই শিল্প পায় নতুন মাত্রা। বর্তমানে এই শিল্পে মোট শ্রমিকের ৮০ ভাগ নারী শ্রমিক।

 

/এসআই/এইচআই/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা