X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মানসম্মত বিদ্যুৎ দিতে না পারায় জরিমানা, উত্তরণে ডিপিডিসি’র নতুন প্রকল্প

সঞ্চিতা সীতু
১৯ মার্চ ২০১৮, ০৭:৫৫আপডেট : ১৯ মার্চ ২০১৮, ১৯:৫৪

ডিপিডিসি

ঢাকায় মানসম্মত বিদ্যুৎ দিতে না পারায় জরিমানা গুনছে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি)। পাওয়ার ফ্যাক্টর ঠিক না থাকার কারণে গত পাঁচ বছরে কোম্পানিটির ৮৪১ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এরপর পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে ১৫টি সাবস্টেশন নির্মাণের পাশাপাশি ‘ক্যাপাসিটর ব্যাংক’ স্থাপনের উদ্যোগ নেয় সংস্থাটি। আগামী জুন থেকে এ কাজ শুরুর আশা করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ বিভাগ ও ডিপিডিসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোর মধ্যে বিদ্যুতের মান সবচেয়ে ‘খারাপ’ ডিপিডিসির। কারণ হিসেবে বলা হয়, বিদ্যুতের প্রবাহের পাওয়ার ফ্যাক্টর ঠিক না থাকায় এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।

জানা গেছে, সাধারণত পাওয়ার ফ্যাক্টর ৯-এর বেশি থাকতে হয়। কিন্তু ডিপিডিসির বেশিরভাগ এলাকায় তা ৮ দশমিক ৫ থেকে ৮ দশমিক ৮-এর মধ্যে থাকে। এ কারণে প্রতিমাসেই পাওয়ার ফ্যাক্টর চার্জ (পিএফসি) হিসেবে জরিমানা করা হচ্ছে ডিপিডিসিকে। জরিমানার টাকা এখন কিস্তিতে পরিশোধ করছে কোম্পানিটি।

বিদ্যুৎ বিভাগ গত বছর মার্চে সঠিক পাওয়ার ফ্যাক্টরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে না পারায় ডিপিডিসিকে মাসে ৫০ কোটি টাকা করে জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে ডিপিডিসি তাদের সমস্যার কথা তুলে ধরে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে আবেদন করে। ওই আবেদনের পর জরিমানা কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক কিস্তিতে তারা জরিমানা পরিশোধ করছে। তবে তাদের পরামর্শ অনুযায়ী পাওয়ার ফ্যাক্টরের উন্নতি করতে পারেনি কোম্পানিটি।

পাওয়ার সেল সূত্র জানায়, গত পাঁচ বছরে মোট ৮৪১ কোটি ৫৩ লাখ ৭০ হাজার ২০৪ টাকা পিএফসি চার্জ করা হয়েছে ডিপিডিসিকে। এর মধ্যে গত অর্থবছরে অর্থাৎ ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১৯৫ কোটি ৩৩ লাখ ৩৮ হাজার ৭৮২ টাকা জরিমানা করা হয়। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১৮৬ কোটি ৪১ লাখ ৯২ হাজার ৫১৯ টাকা, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১৪৩ কোটি ১৭ লাখ ৮৯ হাজার ৯২১ টাকা, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ১৮২ কোটি ২৩ লাখ ৯৪ হাজার ২৫৬ টাকা এবং ২০১২-১৩ অর্থবছরে ১৩৪ কোটি ৩৬ লাখ ৫৪ হাজার ৭২৬ টাকা পিএফসি চার্জ করা হয়।

ডিপিডিসি জানায়, মগবাজার, মাদারটেক, মানিকনগর, নারিন্দা, মাতুয়াইল, সিদ্ধিরগঞ্জ, শীতলক্ষ্যা, ধানমন্ডি, কামরাঙ্গীরচর, শ্যামপুর, লালমাটিয়া, সাত মসজিদ রোড, পোস্তগোলা, লালবাগে (নতুন ও পুরাতন) নুতন ১৫টি সাবস্টেশন স্থাপন করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বলেন, ‘বিদ্যুতের মান খারাপ তা বলা ঠিক হবে না। এটি পাওয়ার ফ্যাক্টরের সমস্যা।’

অন্য কোনও বিতরণ সংস্থা জরিমানা দিচ্ছে না, ডিপিডিসিকে কেন জরিমানা দিতে হচ্ছে জানতে চাইলে বিকাশ দেওয়ান বলেন, ‘ডিপিডিসির বিদ্যুৎ সরবরাহ করা এলাকাগুলোয় অনেক ছোট কারখানা রয়েছে, সেখানে বিদ্যুতের ব্যবহার বেশি। পিএফসি চার্জ গ্রাহকের দেওয়ার কথা। এর আগে একবার গ্রাহকের কাছ থেকে আদায় করার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছিল। কিন্তু তখন শিল্প-মালিকরা আন্দোলন করে জরিমানা প্রত্যাহারে সরকারকে বাধ্য করেন। গ্রাহক পর্যায়ে পাওয়ার ফ্যাক্টর উন্নয়নের জন্য পাওয়ার ফ্যাক্টর ইমপ্রুভমেন্ট (পিএফআই) ডিভাইস বসানোর জন্য গ্রাহকদের উদ্বুদ্ধ করা হলেও কেউ তা মানছেন না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছি। প্রকল্পটি জুন নাগাদ শুরু করার চেষ্টা করবো।’ এতে পাওয়ার ফ্যাক্টর আগের তুলনায় ভালো হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, ডিপিডিসির অধীন ফতুল্লা, লালবাগ, কামরাঙ্গীরচর, আজিমপুর, পোস্তগোলা, জুরাইনসহ বেশকিছু এলাকায় শিল্পকারখানার সংখ্যা বেশি। এসব কারখানায় বিদ্যুৎ সরবরাহের পরিমাণও বেশি। এসব শিল্পে মোটর চালাতে গিয়ে রিঅ্যাকটিভ পাওয়ার বেশি ব্যবহার হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে গ্রাহক পর্যায়ে ‘পাওয়ার ফ্যাক্টর কারেক্টর ডিভাইস’ বসাতে হয়। এছাড়া এক জায়গার সমস্যা যাতে অন্য জায়গায় ছড়িয়ে না পড়ে সে জন্য ‘ক্যাপাসিটর ব্যাংক’ বসাতে হয়। কিন্তু এর কোনোটিই না থাকার কারণে কারখানার বাইরে সাধারণ গ্রাহক বিদ্যুতের সঠিক মান পাচ্ছেন না।

পাওয়ার ফ্যাক্টর কেন প্রয়োজন জানতে চাইলে ডিপিডিসির পরিচালক (প্রকৌশল) রমিজ উদ্দিন সরকার বলেন, ‘পাওয়ার ফ্যাক্টর যদি ৯-এর নিচে নামে তাহলে বলতে হবে বিদ্যুতের মান ভালো নয়। পাওয়ার ফ্যাক্টর কমে গেলে গ্রাহক মানসম্মত বিদ্যুৎ পায় না। এজন্য সঠিক পাওয়ার ফ্যাক্টর অনুসরণ করতে হয়। এতে করে সাধারণত লো ভোল্টেজ এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ তরঙ্গে সমস্যা হয়।’ তিনি বলেন, ‘এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য ৮৫০ মেগাবার (রিঅ্যাকটিভ পাওয়ার পরিমাপক)-এর একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এতে প্রায় ৬০০ থেকে ৭০০ কোটি টাকা খরচ হতে পারে। এই প্রকল্পের আওতায় ফ্রান্সের দাতা সংস্থা এএফডি ডিপিডিসিকে ঋণ দিতে সম্মত হয়েছে। আশা করছি এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিদ্যুৎ বিতরণকারী অন্য সংস্থাগুলোর পাওয়ার ফ্যাক্টর ভালো, বিশেষ করে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) ও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি)। এ দুই সংস্থার পাওয়ার ফ্যাক্টর বেশিরভাগ সময় গ্রাহক প্রান্তে ৯ দশমিক ৫-এর বেশি থাকে। ফলে বিতরণ সংস্থায় গিয়ে তা দাঁড়ায় ৯-এর মতো। ফলে তাদের জরিমানাও গুনতে হয় না। কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব সংস্থার অধীন এলাকায় শিল্প-কারখানার সংখ্যা কম। ফলে তাদের বিদ্যুতের ব্যবহারও কম।

 

/এইচআই/এমএনএইচ/চেক-এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!