X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

মুচলেকা দেবে বিজিএমইএ, সময় চাইবে একবছর

শফিকুল ইসলাম
২৭ মার্চ ২০১৮, ১৮:৫০আপডেট : ২৮ মার্চ ২০১৮, ১০:৫৯

বিজিএমইএ ভবন (ছবি: নাসিরুল ইসলাম) তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ-এর নিজস্ব আইনজীবী প্যানেল রয়েছে। রয়েছে নিজস্ব পরিচালনা পরিষদ।  কাওরানবাজারের হাতির ঝিলে অবস্থিত বিজিএমইএ ভবন থেকে অফিস স্থানান্তরের জন্য আইনজীবী প্যানেল ও বিজিএমইএ পরিচালনা পরিষদের সঙ্গে পরামর্শ করে পুরনো ভবন ছেড়ে যেতে কাল আদালতের পরামর্শ অনুযায়ী আরও একবছরের সময় চাইবে বলে বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমরা আদালতের কাছে শুরুতেই তিন বছর সময় চেয়েছিলোম। কিন্তু আদালত আমাদের একসঙ্গে ওই সময় দেননি। যদিও আদালত দুই দফায় বছর খানেক সময় দিয়েছিলেন। নতুন জায়াগায় যেতে কমপক্ষে আরও একবছর সময় প্রয়োজন। আমরা আদালতের নির্দেশমতোই আন্ডারটেকিং (মুচলেকা) দিয়েই আগামীকাল একবছর সময় চাইবো।’

রাজধানীর হাতিরঝিলে বিজিএমইএ ভবন ভাঙতে ভবিষ্যতে আর সময় চাওয়া হবে না, সংগঠনটির কাছ থেকে এমন মুচলেকা পাওয়ার শর্তে আপিল বিভাগ বিজিএমইএ-এর কাছ থেকে পাওয়া সময়ের আবেদন বিবেচনা করার আশ্বাস পাওয়ার পর মঙ্গলবার বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপকালে এ সব তথ্য জানান দেশের প্রধান রফতানি খাত তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ এ নির্দেশ দিয়েছেন।

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, আমরা নতুন ভবনে অফিস স্থানান্তরের লক্ষ্যে কাজ করছি। কিভাবে আদালতের রায় বাস্তবায়ন করা যায় আমরা সে লক্ষ্যে কাজ করছি। উত্তরায় আমাদের নির্ধারিত স্থানে ভবন তৈরির প্রাসঙ্গিক কাজগুলো তো চলছে। যেকোনও বহুতল অবকাঠামো গড়তে কমপক্ষে তিন বছর সময় লাগে। সেদিক বিবেচনা করেই আমরা শুরুতে তিন বছর সময় চেয়েছিলাম। আমরা হুট করে কোথায় স্থনান্তর করবো বিজিএমইএ অফিস? বিজিএমইএ’র অফিস তো আর ভাড়া ভবনে স্থানান্তর করা সম্ভব নয়।’

জানতে চাইলে  বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘বাংলাদেশে বর্ষা মৌসুমে ৬ মাসই কাজ করা সম্ভব নয়। বাকি ছয় মাস কাজ করতে হয়। তাই হয়তো কিছুটা সময় লাগছে। আশা করছি, আমরা শুরুতে যে সময় চেয়েছিলাম, তা যদি পাই, তাহলে আর বাড়তি সময় লাগবে না।’

উল্লেখ্য, ১৯৯৮ সালের ২৮ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজিএমইএ ভবনের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। ভবন নির্মাণ শেষ হলে ২০০৬ সালের ৮ অক্টোবরসে সময়কার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বিজিএমইএ ভবন উদ্বোধন করেন। এরপর থেকে ভবনটি বিজিএমইএ-এর প্রধান কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু রাজউকের অনুমোদন ছাড়াই কাওরান বাজার সংলগ্ন হাতিরঝিলে বিজিএমইএ ভবন নির্মাণ করা হয়েছে উল্লেখ করে ২০১০ সালের ২ অক্টোবর দেশের একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওইদিনই প্রতিবেদনটি আদালতে উপস্থাপন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ডিএইচএম মনির উদ্দিন। পরদিন ৩ অক্টোবর বিজিএমইএ ভবন কেন ভাঙার নির্দেশ দেওয়া হবে না, তার কারণ জানতে চেয়ে হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে (সুয়োমোটো) রুল জারি করেন।

২০১১ সালের ৩ এপ্রিল হাইকোর্ট এক রায়ে বিজিএমইএ ভবন ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়ে ভবনটি নির্মাণের আগে ওই স্থানের ভূমি আগে যে অবস্থায় ছিল সে অবস্থায় ফিরিয়ে আনতেও নির্দেশ দেওয়া হয় বিজিএমইএকে। ওই বছরের ৫ এপ্রিল বিজিএমইএ-এর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন।

রায়ে আদালত বলেন, বেগুনবাড়ি খাল ও হাতিরঝিল লেকের ওপর ভবনটি সম্পূর্ণ অবৈধভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। জলাধার দু’টি রাজধানী ঢাকাকে জলাবদ্ধতা ও বন্যামুক্ত রাখা এবং নগরীর পয়ঃপ্রণালী অপসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। জলাধারকেন্দ্রিক সৌন্দর্য বৃদ্ধিমূলক দেড় হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। আইন অনুযায়ী বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ এই জমির বৈধ মালিকানাও দেখাতে পারেনি। ভবন নির্মাণের জন্য জলাধার আইন-২০০০ এবং পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫ অনুযায়ী ছাড়পত্র নেওয়া বাধ্যতামূলক। বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ তার কোনও কিছুই করেনি। আইনের তোয়াক্কা না করে তারা ভবনটি নির্মাণ করেন। দৃষ্টিনন্দন হাতিরঝিল প্রকল্পের জন্য এই ভবনকে ক্যান্সার হিসেবে চিহ্নিত করে আদালত রায় প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে তা ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন।

পরবর্তী সময়ে আপিল বিভাগ স্থগিত আদেশের মেয়াদ আবারও বাড়িয়েছেন। এর দুই বছর পর ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। ওই রায়ে ভবনটি ৯০ দিনের মধ্যে ভেঙে ফেলে ওই জমি জনকল্যাণে ব্যবহারের নির্দেশ দিয়ে বলা হয়, ‘হাতিরঝিল প্রকল্প একটি জনকল্যাণমূলক প্রকল্প।’

হাইকোর্টের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি হাতে পাওয়ার পর লিভ টু আপিল করে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ। ২০১৬ সালের ২ জুন তা খারিজ হয়ে যায়। পরে বিজিএমইএ আবারও এই রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করে। রিভিউতেও একই রায় বহাল থাকে।

 

/এমএনএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
পার্বত্য অঞ্চলে অদৃশ্য শক্তি বলে কোনও কথা নেই: পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী
পার্বত্য অঞ্চলে অদৃশ্য শক্তি বলে কোনও কথা নেই: পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নারী কর্মচারীর অকস্মাৎ মৃত্যু, অভিযোগ সচিবের দিকে!
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নারী কর্মচারীর অকস্মাৎ মৃত্যু, অভিযোগ সচিবের দিকে!
উত্তরাসহ দেশের চার পাসপোর্ট অফিসে দুদকের অভিযান
উত্তরাসহ দেশের চার পাসপোর্ট অফিসে দুদকের অভিযান
রনির ব্যাটে প্রাইম ব্যাংককে হারালো মোহামেডান
রনির ব্যাটে প্রাইম ব্যাংককে হারালো মোহামেডান
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা