X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

আবারও লোকসানে বিপিসি

সঞ্চিতা সীতু
১৯ এপ্রিল ২০১৮, ১২:১৪আপডেট : ১৯ এপ্রিল ২০১৮, ১৮:৩৭

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) বেশ কয়েক বছর লাভের মুখ দেখার পর আবারও লোকসানে পড়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। সংস্থাটির দাবি,  গত বছরের নভেম্বর মাস থেকেই ডিজেল ও কেরোসিন এবং ২০১৬ সালের অক্টোবর মাস থেকে ফার্নেস অয়েলে লোকসান দিতে হচ্ছে তাদের। এর ফলে জ্বালানি নিরাপত্তার স্বার্থে জ্বালানি তেলের দাম পুনর্নির্ধারণের কথাও ভাবছে জ্বালানি বিভাগ। বিশেষ করে ফার্নেস অয়েলের দাম দ্রুত সমন্বয় করার কথা ভাবছে সরকার। তবে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বুয়েটের অধ্যাপক ম. তামিম মনে করেন, গত পাঁচ বছরে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কম থাকলেও বিপিসি যেহেতু জ্বালানি তেলের দাম কমায়নি, তাই এখন দাম না বাড়িয়ে তাদের কিছুটা ভর্তুকি দেওয়া উচিত।

বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ফার্নেস অয়েল ও ডিজেল আমদানির ক্ষেত্রে লিটারপ্রতি যথাক্রমে ৯ দশমিক ৮০ টাকা এবং ৫ দশমিক ২৪ টাকা করে  লোকসান দিয়েছে বিপিসি। এ ধারা এখনও অব্যাহত আছে। অন্যদিকে, কনডেনসেট ফ্রাকশনেশন প্ল্যান্ট থেকে সংগৃহীত কেরোসিনের ক্ষেত্রে ১১ দশমিক ৩৭ টাকা লোকসান হচ্ছে।

বিপিসি সূত্র আরও জানায়, আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম কমে যাওয়ায় জ্বালানি ও খনিজ সম্প্দ বিভাগ সর্বশেষ ২০১৬ সালের ২৪ এপ্রিল গেজেট প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ে জ্বালানি তেলের দাম কমায়। ওই সময় ডিজেল ও কেরোসিন লিটারপ্রতি ৬৮ টাকা থেকে কমিয়ে ৬৫ টাকা, ফার্নেস অয়েল ৬০ টাকা থেকে কমিয়ে ৪২ টাকা, অকটেন ৯৯ টাকা থেকে ৮৯ টাকা এবং পেট্রোল ৯৬ টাকা থেকে কমিয়ে ৮৬ টাকা করা হয়।

কিন্তু একই বছরের এপ্রিল থেকে আবার আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম বাড়তে শুরু করে। ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে যেখানে ব্যারেলপ্রতি অপরিশোধিত তেলের দাম ছিল ৪৩ দশমিক ১৭ মার্কিন ডলার, সেখানে এ বছরের জানুয়ারি মাসে এ দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৬৫ দশমিক ৪৯ মার্কিন ডলার। একইভাবে ডিজেলের দাম ৫০ দশমিক ৩১ থেকে বেড়ে ৮২ দশমিক ১০ ডলার, কেরোসিন ৫৩ দশমিক ২৯ থেকে বেড়ে ৮২ দশমিক ৯৯ ডলার এবং ফার্নেস অয়েলের দাম প্রতি মেট্রিক টনে ২১৬ দশমিক ১৬ ডলার থেকে বেড়ে ৪১২ দশমিক ৪১ ডলারে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। 

বিপিসির সাবেক পরিচালক (বিপণন) মীর আলী রেজা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে অন্য দেশে নিয়মিত মূল্য সমন্বয় করা হচ্ছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতের কলকাতায় (গত ২২ জানুয়ারির হিসাব অনুযায়ী) লিটারপ্রতি ডিজেল ৮৭ দশমিক ৩৪ টাকায় (বাংলাদেশ মুদ্রা হিসাব করে) বিক্রি হচ্ছে। যা বাংলাদেশের তুলনায় প্রায় ২২ দশমিক ৩৪ টাকা বেশি। ফলে বাংলাদেশ থেকে জ্বালানি তেল পাচার হওয়ার প্রবণতা বেড়েছে।

তিনি জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের এই দাম বাড়ানোর কারণে ২০১৬ সালের অক্টোবর থেকেই ফার্নেস অয়েলে বিপিসির লোকসান শুরু হয়। কিন্তু তখন অন্য জ্বালানি তেলের ক্ষেত্রে মুনাফা বজায় থাকায় বিপিসি ফার্নেস অয়েলের লোকসান পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। তবে গত বছরের নভেম্বর মাসে ডিজেল ও কেরোসিনেও লোকসান শুরু হয় এবং তা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে।

এ বিষয়ে বিপিসির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ১৯৯৯-২০০০ অর্থবছর থেকে ২০১৩-১৪ অর্থবছর পর্যন্ত বিপিসি ক্রমাগত লোকসান দিয়েছে। এরপর ২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে লাভের মুখ দেখতে শুরু করে। এই লাভের অর্থ থেকে বিপিসি সরকারি ব্যাংকগুলোর এবং পেট্রোবাংলার বকেয়া পাওনা এবং বকেয়া ভ্যাট বাবদ মোট ৫ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা পরিশোধ করে। এছাড়া লভ্যাংশ বাবদ ২০১৫-১৬ এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরের সরকারি তহবিলে মোট ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা জমা দেয়।

তিনি জানান, পাশাপাশি সরকারি তহবিলে বাস্তবায়নের জন্য নির্ধারিত প্রকল্পগুলো বিপিসির সক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় বিপিসি নিজস্ব তহবিল গঠনের কাজ শুরু করে। এরইমধ্যে ইস্টার্ন রিফাইনারির দ্বিতীয় ইউনিট, সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং, ঢাকা-চট্টগ্রাম পাইপলাইন, কাঞ্চন ব্রিজ থেকে কুর্মিটোলা পর্যন্ত জেট এ-১ পাইপলাইনসহ বিভিন্ন প্রকল্প এই তহবিলের টাকা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি এসব বিষয় নিয়ে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বলা হয়, বিপিসির লোকসান কমাতে তেলের পাচাররোধ করাসহ জ্বালানি নিরাপত্তার স্বার্থে জ্বালানি তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করা প্রয়োজন। বিশেষ করে ফার্নেস অয়েলের দাম দ্রুত সমন্বয় করার দরকার বলে বৈঠকে সংশ্লিষ্ট মত দেন।

এ বিষয়ে ম. তামিম বলেন, গত পাঁচ বছরে তারা যে লাভ করেছে তার পরিমাণও কম নয়। এই টাকা থেকেই বিপিসির লোকসান কমাতে ভর্তুকি দেওয়া যেতে পারে। এছাড়া ফার্নেস অয়েলের ক্ষেত্রে বেশিরভাগই ব্যবহার হয় বিদ্যুৎকেন্দ্রে। তাই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে এলএনজির ব্যবহার বাড়ানো হলে এই দাম বাড়ানোর প্রয়োজন নেই। একই বিষয় ডিজেলের ক্ষেত্রেও হতে পারে। তবে ডিজেলের মাত্র ১০ শতাংশ ব্যবহার হয়। বেশি ব্যবহার হয় পরিবহন খাতে। তাই ডিজেলের দাম কিছুটা বাড়ানো যেতে পারে।  

 

/এসএনএস/টিএন/আপ-এফএস/চেক-এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা