X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

পিছু ছাড়েনি বিদ্যুতের ভোগান্তি

সঞ্চিতা সীতু
০৪ মে ২০১৮, ০১:২০আপডেট : ০৪ মে ২০১৮, ১৩:২৮

বিদ্যুৎ তীব্র ভোগান্তি না হলেও রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে বিদ্যুতের আসা-যাওয়ার খেলা চলছে। তবে শহরের তুলনায় গ্রামে লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেশি।

বিদ্যুৎ বিভাগ ও বিতরণ কোম্পানিগুলো বলছে, কালবৈশাখীর কারণে গ্রাহককে মাঝেমধ্যে বিদ্যুৎবিহীন থাকতে হচ্ছে। ঝড়ের কারণে বিতরণ ত্রুটি দেখা দিচ্ছে, যা সারিয়ে তুলতে সময় লাগছে। শহরে ত্রুটি সারানোর কাজ কিছুটা দ্রুত হলেও গ্রামে কোনও কোনও ক্ষেত্রে এক থেকে দুদিন সময় লেগে যাচ্ছে।

বিদ্যুৎ সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস এ সম্পর্কে বলেন, ‘আমাদের বিদ্যুতের কোনও সংকট নেই। কিন্তু মাঝে মাঝে বিতরণ ত্রুটির কারণে গ্রাহককে বিদ্যুতবিহীন থাকতে হচ্ছে। এসব ত্রুটি যাতে দ্রুত সারানো যায় সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

বিদ্যুৎ বিভাগ গ্রীষ্মে বিতরণপর্যায়ে ১৩ হাজার ৬৭৫ মেগাওয়াটের চাহিদা নির্ধারণ করেছে। এখন পর্যন্ত বিদ্যুতের সর্বোচ্চ উৎপাদন হয়েছে ১০ হাজার ১৩৭ মেগাওয়াট। অর্থাৎ, সরকার নিজেই যে চাহিদা নির্ধারণ করেছে, তা থেকে উৎপাদন এখনও তিন হাজার ৫৩৮ মেগাওয়াট কম হচ্ছে। চাহিদা এবং উৎপাদনের মধ্যে এই বড় ব্যবধানই লোডশেডিংয়ের প্রধান কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিদ্যুৎ বিভাগের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পর্যাপ্ত গ্যাস না পাওয়ায় উৎপাদন কম হচ্ছে। বছরের শুরুতে পেট্রোবাংলার কাছে দৈনিক এক হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ সরবরাহ পাওয়া গেছে এক হাজার ২৪ মিলিয়ন ঘনফুট। তবে সাধারণত প্রতিদিন এই সরবরাহ ৯৫০ থেকে এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের মধ্যে ওঠানামা করে। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বৃদ্ধি করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রতিদিন আরও ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া গেলে উৎপাদন আরও এক হাজার মেগাওয়াট বৃদ্ধি করা সম্ভব হতো।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান আবুল মানসুর মো. ফয়জুল্লাহ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এখন বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড়ে ৯৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস দেওয়া হচ্ছে। ২৫ মে এলএনজি সরবরাহ করা হলে গড়ে প্রতিদিন ১ হাজার ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস দেওয়া হবে। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন আরও বৃদ্ধি করা যাবে।’

গ্রীষ্মের বিদ্যুৎ পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার গতবছরের মাঝামাঝি থেকে তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। এজন্য সব মিলিয়ে ২ হাজার মেগাওয়াট তেলচালিত কেন্দ্র নির্মাণের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। কিন্তু গরমের আগে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসেনি। এগুলো উৎপাদনে এলে সংকট কমে আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘আগামী জুনের মধ্যে আরও অন্তত এক হাজার মেগাওয়াট নতুন কেন্দ্র বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করবে। এতে আমরা আশা করছি অনেকটা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হবে।’

অবশ্য বিতরণ ত্রুটিকেই বড় সমস্যা মনে করছে বিদ্যুৎ বিভাগ।  বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ বিভাগের এক বৈঠকে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ানের কাছে বিদ্যুৎ সচিব আহমেদ কায়কাউস সরাসরি বিষয়টি জানতে চান।

বিকাশ দেওয়ান সচিবের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ঝড়ের কারণে কিছু এলাকায় বিতরণ ত্রুটি হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ের কথা উল্লেখ করে বলেন, কোনও কোনও এলাকায় গাছ পড়ে দীর্ঘক্ষণ লাইন অকেজো থাকছে। তবে দ্রুত এসব সমস্যার সামাধান করছেন তারা। বিকাশ দেওয়ান বলেন, রাজধানীর পুরান ঢাকা এলাকায় বিতরণ ব্যবস্থায় নতুন করে কিছু প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এ কাজ শেষ হলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

এদিকে, ভোগান্তির বিষয়ে রাজধানীর উত্তরার বাসিন্দা রোখসানা মার্জিয়া জানান, প্রতিদিনই সকালে সাধারণত ১০ থেকে ১২টার মধ্যে একবার আবার বিকালে ৪টা থেকে ৬টার মধ্যে আরও একবার বিদ্যুৎ যায়। ছুটির দিনেও লোডশেডিং থেকে মুক্তি মিলছে না গত কয়েকদিন ধরে। তিনি বলেন, সরকার বারবার বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ডের কথা বললেও সাধারণ মানুষ ভোগান্তি থেকে এখনও মুক্তি পাচ্ছে না। সরকারের উচিত দ্রুত সমস্যার সমাধান করা। একই ধরনের অভিযোগ করেন মিরপুরের শেওড়াপাড়ার ইমন। তিনি বলেন, সকাল ও বিকালে প্রতিদিনই দুই ঘণ্টা করে লোডশেডিং হচ্ছে। এমন কোনোদিন নেই, যেদিন লোডশেডিং হচ্ছে না। আর ঝড়ের সময় বিদ্যুৎ চলে গেলে সেটি আসতেও অনেক দেরি হয়। অনেক এলাকায় সারারাতও আসে না। আরামবাগের বাসিন্দা মাহফুজুর রহমান বলেন, দিনে কমপক্ষে দুই থেকে তিনবার বিদ্যুৎ চলে যায়। কখনও ৩০ মিনিট, কখনও একঘণ্টা পরে বিদ্যুৎ আসে। বিদ্যুতের আসা-যাওয়ার এই সমস্যা দেখা দিয়েছে গরমের শুরু থেকেই।

এসব অভিযোগের বিপরীতে ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বলেন, আজ বৃহস্পতিবার ডিপিডিসির এলাকায় কোনও লোডশেডিং ছিল না। দুপুরে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১ হাজার ২০৫ মেগাওয়াট। সন্ধ্যায় তা কমে গিয়ে দাঁড়ায় ৯৫০ মেগাওয়াটে। বরাদ্দ অনুযায়ী পুরো বিদ্যুৎ পেয়েছে ডিপিডিসি। ফলে কোথাও কোনও লোডশেডিং করা হয়নি। তিনি বলেন, আজ যদি কোথাও বিদ্যুতের সমস্যা হয় তবে সেটা হবে অবশ্য কারিগরি সমস্যার কারণে। প্রায় একই কথা বলেছেন ডেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহীদ সারওয়ার। তিনি বলেন, গত কয়েকদিনের ঝড় বৃষ্টির কারণে কয়েকটি এলাকায় গাছ পড়ে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গেছে। সেসব তাৎক্ষণিকভাবে মেরামতও করা হয়েছে। তারপরও কোথাও কোথাও হয়তো সমস্যা হতে পারে। সেক্ষেত্রে সমস্যা জানার সঙ্গে সঙ্গেই সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বৃষ্টির কারণে চাহিদাও কমে গেছে। ফলে চাহিদা অনুযায়ীই আমরা বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছি।

ঢাকার ভেতরের অবস্থা এমন হলেও বাইরের অবস্থা আরও খারাপ। ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের বাসিন্দা আসাদ জোবায়ের জানান, দিনে কমপক্ষে ৫ থেকে ৬ বার বিদ্যুৎ যায়। একবার গেলে এক ঘণ্টারও ওপরে বিদ্যুৎ আসে না। আর ঝড়ের মধ্যে বিদ্যুৎ গেলে সেটি আসতে কমপক্ষে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা সময় লাগে। যশোরের দেবু জানান, শহরে কমপক্ষে দুই-তিন বার আর গ্রামের দিকে এই লোডশেডিংয়ের পরিমাণ আরও অনেক বেশি। কোথাও কোথাও ৫ থেকে ৬ বার বিদ্যুৎ যায়। দিনের একটা বড় সময় বিদ্যুৎ থাকে না বলে তিনি অভিযোগ করেন।

/এএম/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার মোহনায় শতাধিক পাইলট তিমি আটক
ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার মোহনায় শতাধিক পাইলট তিমি আটক
যুদ্ধ কোনও সমাধান আনতে পারে না: প্রধানমন্ত্রী
যুদ্ধ কোনও সমাধান আনতে পারে না: প্রধানমন্ত্রী
শপথ নিলেন আপিল বিভাগের নতুন তিন বিচারপতি
শপথ নিলেন আপিল বিভাগের নতুন তিন বিচারপতি
চীনে আমেরিকার কোম্পানিগুলোর প্রতি ন্যায্য আচরণের আহ্বান ব্লিঙ্কেনের
চীনে আমেরিকার কোম্পানিগুলোর প্রতি ন্যায্য আচরণের আহ্বান ব্লিঙ্কেনের
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেন তিন বিচারপতি
আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেন তিন বিচারপতি