X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

গোঁজামিল দিয়ে গ্যাসের দাম বাড়াতে চায় পেট্রোবাংলা

সঞ্চিতা সীতু
১১ জুন ২০১৮, ২১:২৬আপডেট : ১২ জুন ২০১৮, ০১:৪০

 

গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি বিষয়ে বিইআরসি গণশুনানি তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির হিসাবে গোঁজামিল দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পেট্রোবাংলার বিরুদ্ধে। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির গণশুনানিতে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কারিগরি মূল্যায়ন কমিটির প্রতিবেদনেও বিষয়টি উঠে এসেছে। এ সময় গ্যাস সঞ্চালন কোম্পানি (পেট্রোবাংলা) তাদের প্রস্তাবে বলেছে, এলএনজি আমদানির ফলে তাদের ৪৯ ভাগ সঞ্চালন বাড়বে। কিন্তু কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি বলছে কোনোক্রমেই ২২ ভাগের বেশি সঞ্চালন বাড়বে না।  বিইআরসির কারিগরি মূল্যায়ন কমিটির প্রতিবেদন ও শুনানিতে পেট্রোবাংলার উপস্থাপিত কাগজ পর্যালোচনাসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপকালে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে ও পেট্রোবাংলার প্রস্তাব বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বিশ্বব্যাপী এলএনজি টার্মিনাল ব্যবহারের যে হার রয়েছে, তাতে প্রতিটি টার্মিনাল তার ক্ষমতার ৫০ ভাগ ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশেও এক্সিলারেট এনার্জির টার্মিনালটিও প্রতিদিন ৫০০মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি ক্ষমতার হলেও সরবরাহ করতে পারবে ৪৬০মিলিয়ন ঘনফুট। আবার বছরে ওভারহোলিং, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ বিভিন্ন কারণে ১১০দিন রিগ্যাসিফিকেশন থেকে বিরত থাকবে। এর ফলে বছরে ২৫৫ দিন সরবরাহ করবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাৎসরিক গড় হিসাবে তাদের এলএনজি সরবরাহর পরিমাণ হবে দৈনিক ৩৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। দু’টি টার্মিনাল একসঙ্গে গ্যাস সরবরাহ করলে যার পরিমাণ হবে ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট। কিন্তু দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অতিরিক্ত দরের ৩০০ মিলিয়ন এলএনজির দরকে অন্তর্ভুক্ত করেছে।

পেট্রোবাংলার পক্ষ থেকে কমিশনে একটি উপস্থাপনা এলএনজি আমদানি ও বিক্রয় মূল্য সম্পর্কে একটি ধারনা দেওয়া হয়েছে।উপস্থাপনায় বলা হয়েছে, প্রতি মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজির আমদানি ব্যয় ৭০৫ দশমিক ৫০ টাকা হলে দেশের বাজারে প্রতি ইউনিট (ঘনমিটার) গ্যাসের বিক্রয় মূল্য হবে ৩৩ দশমিক ৪৪ টাকা। এই খরচের মধ্যে এলএনজির ক্রয় মূল্য ২৫ দশমিক ১৭ টাকা ব্যাংক চার্জ শূন্য দশমিক শূন্য দুই টাকা, আমদানির ওপর ভ্যাট তিন শমিক ৭৭ টাকা, এলএনজি থেকে গ্যাসে রূপান্তর ব্যয় (রিগ্যাসিফিকেশন চার্জ) দুই দশমিক ১৭ টাকা, সঞ্চালন; বিতরণ ও পেট্রোবাংলার মুনাফা শূন্য দশমিক ৮৮ টাকা, রূপান্তরিক প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানির অপারেশনাল মার্জিন শূন্য দশমিক ৪০ টাকা ও বিক্রির সময়ের ভ্যাট এক দশমিক ০৮ টাকা মিলিয়ে মোট দাম হবে ৩৩ দশমিক ৪৪ টাকা। প্রতিদিন এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানির হিসাব ধরে দেশের গ্যাসের সঙ্গে দামের সমন্বয় করে বলা হচ্ছে আগামীতে গ্যাসের যে গড় বিক্রয় মূল্য নির্ধারণ করা হবে, তাতে প্রতি ঘনমিটারের বিক্রয় মূল্য ১২ দশমিক ৮৯টাকা হতে হবে। এখন দেশে ভোক্তা পর্যায়ে গড়ে ৪ দশমিক ৬৩ পয়সায় প্রতি ঘনমিটার গ্যাস বিক্রি করে।

উপস্থাপনায় বলা হয়, সরকারের আমদানি করা দৈনিক এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট (এমএমসিএফডি) এলএনজি-এর সঙ্গে প্রতিদিন উত্তোলিত দুই হাজার ৭০০ এমএমসিএফডি দেশীয় গ্যাসের দামের সংমিশ্রণ করে ১২ দশমিক ৮৯টাকা দাম নির্ধারণ করেছে তারা। যেহেতু এলএনজি আমদানি করা হবে তাই ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হলে দর বৃদ্ধি পাবে।একইভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দর বৃদ্ধি পেলেও দেশে গ্যাসের দাম বাড়বে। পেট্রোবাংলা অবশ্য তারে উপস্থাপনায় একইভাবে ১০ দশমিক ৭৬ ডলারে প্রতি মিলিয়ন ঘনফুট (এলএনজি) আমদানির দর ধরে একটি হিসাব দিয়েছে। সেখানে এলএনজির বিক্রয়মূল্য অন্তত ৪১ দশমিক ২৯ টাকা হবে বলে জানানো হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভোক্তা অধিকার অ্যাসোসিয়েশনের (ক্যাব) উপদেষ্টা শামসুল আলম বলেন, ‘মূল্যায়ন কমিটি ও পেট্রোবাংলার এলএনজি আমদানি বিষয়ে উপস্থাপিত কাগজের মধ্যে গোঁজামিল রয়েছে। যে পরিমাণ গ্যাসের কথা বলা হয়েছে সে পরিমাণ গ্যাস পাইপলাইনে সরবরাহ করা যাবে না।কিন্তু দেখানো হয়েছে সে পরিমাণ দাম। দাম বেশি দেখিয়ে উচ্চমূল্যের দোহাই দিয়ে গ্যাসের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা করছে সরকার।’

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ভূতাত্ত্বিক বদরুল ইমাম বলেন, ‘গত আট বছর ধরে এলএনজি আমদানির চেষ্টা করা হচ্ছে।একই সময়ের মধ্যে যদি দেশে তেল গ্যাস অনুসন্ধানে সরকার মন দিতো তাহলে দেশের গ্যাসেই এখন দেশ চলতো। বাইরে থেকে উচ্চ দামের এলএনজি ক্রয় করতে হতো না।’ তিনি মনে করেন, ‘এলএনজি আমানি অর্থনীতিতে বড় রকমের কুফল বয়ে আনবে।দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধানে মনোযোগী না হলে আগামীতে এই উচ্চ দামের গ্যাসের ওপর নির্ভরশীলতা আরও বাড়বে।’

এদিকে শুনানিতে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান আবুল মনসুর মো. ফায়জুল্লাহ এনডিসি বলেন, ‘আগামী ছয় সাত দিনের মধ্যে এলএনজি জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে।তবে এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো এই সময় পরিবর্তন হলো।’

এলএনজি পাইপলাইনে আসতে দেরি হওয়ার বিষয়ে জিটিসিএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী মো. আল মামুন জানান, ‘জিটিসিএল মহেশখালী ও আনোয়ারায় অবকাঠামোর সঙ্গে পাইপ লাইন নির্মাণ করেছে।একইসঙ্গে চট্টগ্রামে যেন গ্যাস সরবরাহ করা যায়, সেজন্যও পাইপ লাইন নির্মাণ করে টেস্টিং শেষ করে রেখেছে। বিষয়টি এখন এক্সিলারেট এনার্জির ওপর নির্ভর করছে।’

এ সময় জিটিসিএল এর পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘সাব সি পাইপ লাইনের ত্রুটির কারণে সরবরাহে সমস্যা হচ্ছিল। তবে এখন সেই ত্রুটিও সারানো হয়েছে। এখন পাইপ লাইনটি পরীক্ষার অপেক্ষায় রয়েছে। 

/এমএনএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!