২০১৫ সালে তিন বছরের মধ্যে ইলেক্ট্রনিক গ্যাস ভলিউম ক্যারেক্টর (ইভিসি) মিটার স্থাপনের আদেশ দেয় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। কিন্তু গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো এখনও এই আদেশ পুরোপুরি বাস্তবায়ন করেনি। এখন কমিশন নিজেই বলছে এই ধরনের মিটার স্থাপন করতে তিন বছর নয়, পাঁচ বছর সময় দরকার। তিন বছর পর এসে কমিশনের এ ধরনের বক্তব্য অনভিপ্রেত বলে মনে করেন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম। তিনি বলেন, ‘বিতরণ কোম্পানিগুলোর আয় কমে যাওয়ার আশঙ্কায় ইভিসি মিটার স্থাপনে বরাবর অনীহা দেখিয়ে আসছে।’ আজ বৃহস্পতিবার কমিশনে গ্যাসের দাম বাড়ানো এবং বিতরণ কোম্পানির মার্জিন বাড়ানোর ওপর গণশুনানিতে তিনি এসব কথা বলেন।
শুনানিতে ভোক্তাদের পক্ষে অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, ‘আদেশ দেওয়ার সাড়ে তিন বছর পরে এসে বলা হচ্ছে, ইভিসি মিটার স্থাপন করতে পাঁচ বছর দরকার হবে। কিন্তু এই সময়ে বিতরণ কোম্পানিগুলোও বিইআরসিকে এ বিষয়ে জানায়নি। এমনকি সময়ে সময়ে এসব বিষয় জানানোর কথা থাকলেও বিতরণ কোম্পানিগুলো তা করেনি। এখন এসে এ ধরনের বক্তব্য অনভিপ্রেত্’
শুনানিতে কমিশনের চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম, সদস্য রহমান মুর্শেদ, মাহমুদুউল হক ভুইয়া, মো. আব্দুল আজিজ খান, মিজানুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।একই সঙ্গে জালালাবাদ ও সুন্দবন গ্যাস বিতরণ কোম্পানির কর্মকর্তারা শুনানিতে তাদের প্রস্তাব উপস্থাপনের সঙ্গে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
বৃহস্পতিবার সুন্দরবন গ্যাস বিতরণ কোম্পানির বিতরণ মার্জিন ২০১৮-১৯ এ প্রতি ঘনমিটারে শূন্য শমিক ১৬২৫ টাকা নির্ধারণের সুপারিশ করে কারিগরি কমিটি। এখন এই বিতরণ মার্জিনের পরিমান শূন্য দশমিক ২৯৫৩ টাকা।একইভাবে জালালাবাদ গ্যাস বিতরণ কোম্পানির বিতরণ চার্জ একই সময়ের জন্য কারিগরি কমিটি ঘনমিটার প্রতি শূন্য দশমিক ১০৩৫ টাকা করার সুপারিশ করেছে। কোম্পানিটির বিদ্যমান বিতরণ চার্জ ঘনমিটারে শূন্য দশমিক ২৫০০ টাকা।
ইভিসি মিটারের বিষয়ে কমিশনের কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি জানায়, ইভিসি মিটার স্থাপনের মাধ্যমে গ্রাহকের গ্যাস সরবরাহ চাহিদা অনুযায়ী গ্রাহকের প্রকৃত ব্যবহার ভিত্তিক বিল প্রণয়ন করতে হবে।বাণিজ্যিক ছাড়া অন্য বড় ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে ইভিসি মিটার স্থাপন করা জরুরি বলে মনে করছে মূল্যায়ন কমিটি।কমিটি আরও জানায়, আবাসিকে গ্যাস ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটি জরিপ করা যেতে পারে। মিটারবিহীন ও মিটারযুক্ত গ্রাহক কী পরিমাণ গ্যাস ব্যবহার করে, সে বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা থাকা উচিত।
কমিশনের কারিগরি মূল্যায়ন কমিটির একজন সদস্য উদাহরণ হিসেবে বলেন, কোন ক্ষেত্রে একজন গ্রাহককে সংযোগ দেওয়ার সময় ধরা যাক ১৫ পিএসআই চাপে গ্যাস দেওয়ার অঙ্গীকার করে বিতরণ কোম্পানি। কিন্তু যেহেতু গ্যাসের সংকট রয়েছে, তাই ওই গ্রাহক ১৫ পিএসআই থেকে কম চাপে গ্যাস পায়। কোনও কোনও সময় চাপের পরিমাণ ২/৩ পিএসআইতে নেমে আসে। কিন্তু বিতরণ কোম্পানি যখন সাধারণ মিটারে বিল করে তখন সার্বক্ষণিক চাপ ১৫ পিএসআই বিল করে। এক্ষেত্রে গ্রাহক যে পরিমাণ গ্যাস ব্যবহার করে, তার অতিরিক্ত বিল দেয়।কিন্তু ইভিসি মিটার থাকলে গ্রাহক যে চাপে গ্যাস পাচ্ছে, ওই চাপেই বিল আসার কথা। এতে গ্রাহকের স্বার্থ রক্ষা হয়।
এই প্রসঙ্গে শামসুল আলম বলেন, বিতরণ কোম্পানিগুলো তাদের আয় কমে যাবে, এই আশঙ্কায় ইভিসি মিটার স্থাপনে বরাবর অনীহা দেখিয়ে আসছে। মূলত বিল ফাঁকি দেওয়ার উদ্দেশ্যেই এই অনীহ। এদিকে আবাসিকে গ্রাহক যে পরিমাণ গ্যাস ব্যবহার করে, তার অতিরিক্ত বিল নেওয়ার প্রচুর অভিযোগ আছে। একজন গ্রাহকের মাসে ৮৮ ঘনমিটার গ্যাস ব্যবহার ধরে গড়ে দুই চুলার বিল করা হয় ৮০০ টাকা। কিন্তু গড়ে একজন গ্রাহক ২০ ঘনফুটের বেশি গ্যাস ব্যবহার করেন না।’
