প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেছেন, ‘২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত দেশ হিসেবে দাঁড়াবে। সে লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে। তখন বিদ্যুতের চাহিদা হবে ৬০ হাজার মেগাওয়াট। এই বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য আমাদের প্রযুক্তিগত ও অর্থায়নের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বেসরকারি এবং বিদেশি বিনিয়োগের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। দেশের জ্বালানির বাজার এখন বিনিয়োগের জন্য উন্মুক্ত।’
মঙ্গলবার (২৬ জুন) হোটেল সোনারগাঁও এ দুই দিনব্যাপী আয়োজিত বাংলাদেশ এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার সামিট ২০১৮ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, ‘বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি সাশ্রয়েও মনোযোগ দিতে হবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি ভবিষ্যতে বড় সমাধান নিয়ে আসতে পারে। তবে এখন বিদ্যুতের তিনটি হাব, কয়লা এবং পারমানবিক বিদ্যুৎ থেকে জ্বালানি চাহিদার বড় অংশ মেটানো হবে। এলএনজি আমদানি প্রয়োজন মতো করা হবে। সংকট যেন না হয় তাই এলএনজি মজুদের জন্য ইতোমধ্যে পরিত্যক্ত বা পরিত্যক্ত হবে এমন গ্যাসকূপগুলোকে ব্যবহার করা হতে পারে। এ জন্য উপযোগিতা যাচাই করা হচ্ছে।
সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি তাজুল ইসলাম বলেন, ‘সরকার ২০০৯ সালে এসে বিদ্যুৎ নিয়ে বিপদ দূর করতে রেন্টাল অনুমোদন দিয়েছিল। এখন টেকসই জ্বালানি খাত নিশ্চিত করতে সমন্বিত জ্বালানি মিশ্রণ করা হবে। ইতোমধ্যে মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে।’
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় সেশনে মোট ৫টি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন হয়। সেখানে পিডব্লিউসি-এর সিনিয়র কনসালটেন্ট নাবিলা সাজ্জাদের সঞ্চালনায় পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহম্মদ হোসেইন, বেজার নির্বাহি সদস্য (অতিরিক্ত সচিব) এমদাদুল হক, এডিবির বাংলাদেশ রেসিডেন্ট মিশনের সিনিয়র প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্ট স্পেশালিস্ট সেরিন ইব্রাহিম, ওয়ার্ল্ড নিউক্লিয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র অ্যাডভাইজার শাহ নেওয়াজ আহমেদ, পিডব্লিউসি’র মামুন রশিদ বক্তব্য রাখেন। দুইটি প্যানেল ডিসকাশনের মাধ্যমে বাংলাদেশে এলএনজির বাজার এবং বিদ্যুৎ জ্বালানি খাতের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, বিনিয়োগ ও আঞ্চলিক অভিজ্ঞতা নিয়ে আলোচনা করা হয়।
আলোচনায় বলা হয়, বাংলাদেশে বর্তমানে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে। ৩০ হাজার একর জমির ওপর এই অঞ্চলগুলো স্থাপন করা হচ্ছে। এসব অঞ্চলে বিদ্যুতের চাহিদা থাকবে অনেক। দেশে শতভাগ শিল্পায়ন হলে প্রায় তিন হাজার মেগাওয়াট নতুন বিদ্যুতের চাহিদা তৈরি হতে পারে। এরমধ্যে সরকারি ৩১টি শিল্পপার্কের জন্য দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট এবং বেসরকারি ইপিজেডগুলোর জন্য প্রয়োজন হবে ৫২৭ মেগাওয়াট।
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহম্মদ হোসেইন জানান, অর্থনৈতিক অঞ্চলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দিতে হবে। এজন্য এসব বিশেষ অঞ্চলে শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠা করলে অগ্রাধিকারভিত্তিতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি চাহিদা অনুযায়ী নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতে বেশকিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
এর আগে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. তাজুল ইসলাম ও পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহম্মদ হোসেন। চীনের ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি ডব্লিউএসপিওও-এর গ্রুপ এবং পাক্ষিক ম্যাগাজিন এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার যৌথভাবে এই অনুষ্ঠোনের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেছেন প্রাইস ওয়াটারহাউজ কুপারস (পিডব্লিউসি) বাংলাদেশের ম্যানেজিং পার্টনার মামুন রশিদ।
